করোনা ঘায়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে হলিউড

আমেরিকার সবচেয়ে গ্ল্যামারাস শহরে থাকি বটে, কিন্তু আমরা নেহাতই ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাঙালি। তবু ঘরের কাছে যখন হলিউড, তার ছায়া তো এড়াতে পারি না। যেদিন অস্কারজয়ী অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস আর তাঁর স্ত্রী রিটা করোনা পজিটিভ হলেন, সারা পৃথিবীর মতো আমরাও চমকে উঠেছিলাম।

আর যখন শুনলাম জেমস বন্ডের নতুন ছবি ‘নো টাইম টু ডাই’-এর রিলিজ এপ্রিল থেকে পিছিয়ে নভেম্বরে চলে গেছে, আমার কিশোর ছেলে সারা বিশ্বের আরো লক্ষ লক্ষ বন্ড ফ্যানদের মতোই মুষড়ে পড়েছিল। আসলে তখনও মানে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তত সিরিয়াসলি নেয়নি আমেরিকার মানুষ এই করোনাকে। মনে আছে, আমি যে স্কুলে পড়াই, সেখানকার বোর্ড মিটিংয়ে, জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহেই সতর্ক করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, কী কী করণীয়। বিশেষ করে যেসব

চিনা ছাত্রছাত্রী ছুটি কাটিয়ে আবার ফিরেছে স্কুলে, তাদের কাছে ডাক্তারের সার্টিফিকেট চাওয়া হয়েছিল।
আমরা শিক্ষকেরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলাম, এতটা বাড়াবাড়ি করার কি কোনও দরকার ছিল? আজ
বুঝতে পারছি, সেদিন স্কুল কর্তৃপক্ষ ঠিক কাজই করেছিলেন। ফেব্রুয়ারি থেকেই তা সাঙ্ঘাতিকভাবে ছড়িয়ে
পড়ল সংক্রমণ আমেরিকা জুড়ে।

ভয় বাড়তেই লাগল। আর এখন রোজই বাড়ছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করলেন, ২০ এপ্রিল
পর্যন্ত স্কুল–কলেজ বন্ধ। এখন অবশ্য সেটা অনির্দিষ্টকালের জন্য হয়ে গেছে। এরপরই আস্তে আস্তে সব
বন্ধ হতে লাগল। এখন তো আমরা পুরোপুরি ঘরবন্দি। বাইরে বেরনো বন্ধ। তাই টিভির পর্দায় দেখি, হলিউড,
ডিজনিল্যান্ড, স্টেপল সেন্টার, লস এঞ্জেলসের বিখ্যাত ডাউনটাউন সব নিঃঝুম। ভাবাই যায় না। সারা বছর
ট্যুরিস্টের ভিড়ে টাসা বিশ্বের সিনেমা রাজধানীতে যেন শ্মশানের স্তব্ধতা। আমার বাড়িতেই তো বছরে অন্তর
বার তিনেক দেশ থেকে কেউ না কেউ আসেন।

আত্মীয়–বন্ধু ক’‌দিনের জন্য এত পয়সা খরচ করে আমেরিকা বেড়াতে এসে আবার হোটেলে খরচ করবেন কেন যে দুটো দিন আমার আতিথেয়তা থেকে যান। ইউনিভার্সাল স্টুডিওর টিকিট কেটে দিনভর ঘুরবেন, হলিউডের ছবির সেট দেখবেন, টেকনোলজির কেরামতি দেখে মুগ্ধ হবেন, ডিজনিল্যান্ডে ঘুরে বাচ্চা–বুড়ো সবাই মজা পাবে, গ্লোব থিয়েটারের রেড কার্পেটে দাঁড়িয়ে নিজেকে মনে হবে ঐশ্বর্যা রাই, বেভারলি হিলসে মাইকেল জ্যাকসন থেকে এলেন ডিজেনারাস, তারকাদের বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে দেবেন, এটুকু আনন্দ সারা জীবনের সম্পদ। সব ট্যুরিস্ট স্পট বন্ধ। সানসেট ব্যুলেভার্ড যেন
হরর মুভির হন্টেড পথ।

অনেকেই বলছেন, নাইন ইলেভেনের থেকেও বড় ধাক্কা খেয়েছে এবার আমেরিকার অর্থনীতি। মনে আছে, অত
বিরাট জঙ্গি হানা সামলে উঠে মোটামুটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে এই দেশের সময় লেগেছিল মাত্র মাস দুয়েক।
নভেম্বরে সিনেমা–থিয়েটারে ভিড় দেখেছি। রেস্তঁরা–পাবে আড্ডা মারতে দেখেছি মানুষকে। যদিও লোকের সঙ্গে
দেখা হলে একটাই প্রসঙ্গ উঠত, নাইন ইলেভেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি আরও অনেক অন্য়রকম।

দীর্ঘমেয়াদী অন্ধকারে যেন ডুবে আছে বিশ্ব। এর থেকে কবে মুক্তি পাব জানি না। বিলিনেয়ার তারকাদের
দৌলতে লস এঞ্জেলসের জীবনযাত্রা এমনিতেই উঁচুতারে বাঁধা। এই বিপর্যয়ের জেরে তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে
কে জানে!

এসএইচ-০৯/৩০/২০ (বিনোদন ডেস্ক)