বাংলাদেশি শ্রমিকরা গভীর সংকটে

কম্বোডিয়ায় পাচার হওয়া শতাধিকের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিকরা গভীর সংকটে রয়েছেন। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দেশটিতে শ্রমিকদের নির্যাতনের মাধ্যমে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে। শ্রমিকরা দেশটিতে শোচনীয় অবস্থায় ছিলেন। সরকারের একটি তদন্ত দলের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা, সিঙ্গাপুর ও ব্যাংকক ভিত্তিক বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি ও তাদের দালালরা কম্বোডিয়ায় পাচার হওয়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্টিকার বা স্ট্যাম্প ভিসায় পর্যটক ও দর্শনার্থী হিসেবে পাঠায়।

বুধবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুত করা প্রতিবেদনটি একটি ইংরেজি গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করেছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকতারা বলছেন, পাচার হওয়া কম্বোডিয়াফেরত বাংলাদেশিরা দেশটিতে অনেক কষ্ট ভোগ করেছেন এবং তারা শোচনীয় অবস্থার মধ্যে ছিলেন।

মন্ত্রাণালয় জানায়, কম্বোডিয়ায় ভালো চাকরির লোভ দেখিয়ে দালালরা ভারত, সিঙ্গাপুর, লাওস, মালায়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার এবং অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাসগুলো থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য কম্বোডিয়ার স্টিকার ভ্রমণ ভিসা সংগ্রহ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক পর্যায়ে দালালরা নির্যাতনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থাকা ভিকটিমদের পরিবার থেকে মুক্তিপণের অর্থ আদায় করেছে।

এই বিষয়টি তদন্তে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি দল ১৬ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি কম্বোডিয়ায় অবস্থান করেন। এ দলটির নেতৃত্ব দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জাহাঙ্গীর আলম।

তদন্ত দলটি দেখতে পায়, বাংলাদেশি নাগরিক মইন উদ্দিন ও সিঙ্গাপুরের নাগরিক খাও কম্বোডিয়ায় ইসি বিল্ডার্স নামে একটি নিমার্ণ কোম্পানি গঠন করেন। ওই কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে শতাধিক শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। স্টিকার ভিসায় তাদেরকে পর্যটক, দর্শনার্থী ও ব্যবসায়ী দেখানো হয়েছে।

মন্ত্রণালয়টির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসি বিল্ডার্সের মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বৈধ কাগজপত্র দিতে ব্যর্থ হয়। পরে শ্রমিকরা কম্বোডিয়ান পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে দেশটির পুলিশ কোম্পানিটি বন্ধ করে দেয়।

ভুক্তভোগী পঙ্কজ বিশ্বাস, রবিন্দ্রনাথ কুন্ডু, জাকির এবং মোহন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের তদন্ত দলকে জানান, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক আব্দুর রহমান তাদের প্রত্যেকের কাছে তিন থেকে চার লাখ টাকা করে নিয়ে এক বছর ধরে অপেক্ষা করিয়ে কম্বোডিয়া পাঠিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ানদের সহযোগিতায় কয়েকশ বাংলাদেশি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার জন্য ভুয়া যৌথ কোম্পানি খুলেছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের ওই দলটি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছেন।

এসএইচ-০৫/১১/২০ (প্রবাস ডেস্ক)