শ্রীলঙ্কা হয়ে আমিরাত, পাঁচগুণ অতিরিক্ত অর্থ গুনছেন প্রবাসীরা

গত দেড় মাসে বিমানবন্দরে পিসিআর মেশিন বসাতে পারেনি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী প্রবাসীরা। আটকে পড়া অসংখ্য প্রবাসী কর্মস্থলে ফিরতে অপেক্ষার দিন গুনছেন। এদের মধ্যে কারো কারো ফিরতি টিকিটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ফ্লাইট চালু হলে নতুন করে টিকিটের সময় নবায়ন করতে হবে তাদের। এমনই বাস্তবতায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন রেমিট্যান্স যোদ্ধারা।

চট্টগ্রামের রুবাইদুল রহমান দীর্ঘদিন ধরে দেশে আটকে আছেন। ৮ জুনের জন্য টিকিট করা থাকলেও সেটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। কুমিল্লার প্রবাসী মোরশেদ আলমের টিকিটে আমিরাত ফেরার তারিখ ছিল ১৫ জুন। তার মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।

এদিকে বিমানবন্দরে পিসিআর মেশিন না থাকায় বিভিন্ন দেশ হয়ে আরব আমিরাতে প্রবেশের বিভিন্ন অফার দিচ্ছেন ট্রাভেল কোম্পানিগুলো। এদের মধ্যে একটি হলো- ভার্সাটাইল ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মো. আরবিদ হোসেন বলেন, আমরা বাহরাইন হয়ে আমিরাতে যাওয়ার ব্যবস্থা করি। এক্ষেত্রে যদি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেওয়া থাকে তাহলে বিষয়টি সহজ হয়। আপনি বাহরাইনে পৌঁছে পিসিআর টেস্টে যদি নেগেটিভ হন তাহলে একইদিনে আমিরাতে ঢুকতে পারবেন।

অন্যদেশ হয়ে আমিরাতে পৌঁছান নোয়াখালীর মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন। জানান, গত ১১ মে দেশে আসেন তিনি। এরপর দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এতে বাংলাদেশের সঙ্গে আরব আমিরাতে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়ের মধ্যে ফিরতি টিকিটের মেয়াদ শেষ যায়।

পরের সপ্তাহে ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে প্যাকেজ নিয়ে শ্রীলঙ্কায় হয়ে আমিরাতে যান তিনি। শ্রীলঙ্কার একটি হোটেলে তিনদিন কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। তার সম্পূর্ণ প্যাকেজে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি আমিরাতে গেলে সর্বোচ্চ খরচ হতো ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।

পিসিআর মেশিন না বসানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরকার যদি দ্রুত আরব আমিরাতের চাওয়া অনুযায়ী বিমানবন্দরে পিসিআর মেশিন বসাতো তাহলে আমাদেরকে এত ঝামেলায় পড়তে হতো না। সেইসঙ্গে এত টাকা খরচ করতে হতো না।

প্রবাসী শ্রমিকদের অন্যদেশ হয়ে আরব আমিরাতে যাওয়ার বিষয়ে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান সময় নিউজকে বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা এখন পর্যন্ত আরব আমিরাতের নির্দেশানুয়ায়ী বিমানবন্দরে পিসিআর মেশিন বসাতে পারিনি। কিন্তু পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এমনকি নাইজেরিয়ার মতো দেশও বিমানবন্দরে পিসিআর মেশিন বসিয়েছে। আমরা পারিনি। এটা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনয়তা ছাড়া আর কিছু না।

তিনি আরও বলেন, পিসিআর মেশিনের জন্য ৪০ থেকে ৫০ হাজার শ্রমিক ভোগান্তিতে রয়েছে। মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে পিসিআর মেশিন বসানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। নয় দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত মেশিন বসাতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।

প্রধানমন্ত্রী নির্দেশের পর বিমানবন্দরে কেন পিসিআর মেশিন বসছে না? এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, এ বিষয়টা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের। এখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। এটা নিয়ে মিটিং হয়েছিল। মিটিংয়ে আমাদের কাছে জানতে চাইছে কীভাবে ল্যাব স্থাপন করা যায়। আমরা সবকিছু তাদেরকে বলেছি এবং মূল্য নির্ধারণের বিষয়টাও জানিয়েছি।

প্রবাসীদের অন্যদেশ হয়ে আরব আমিরাতে যাওয়ার বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ফোন রিসিভ করেনি। পরবর্তীতে ওয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হয়। সেখানেও কোনো রেসপন্স করেননি তিনি।

দেশে আটকেপড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসীরা গত সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রবাসীকল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান আহমেদ রিয়াজ বলেন, সোমবার থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পতাকাবাহী বিমান পরিবহন সংস্থা এমিরেটস এয়ার ও আবুধাবির ইত্তেহাদ এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ থেকে ফের ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু পিসিআর ল্যাব না থাকায় আবারও বাংলাদেশে ফ্লাইট বন্ধ করে দিতে পারে এই দুই এয়ারলাইন্স। এর ফলে দেশে আটকেপড়া ৪০ থেকে ৫০ হাজার প্রবাসী উৎকণ্ঠায় আছেন।

তিন মাস ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার পর গেল ৪ আগস্ট বাংলাদেশসহ ছয় দেশের যাত্রীদের ট্রানজিট সুবিধা চালু করে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে শর্ত হলো- ফ্লাইট ছাড়ার ৬ ঘণ্টার মধ্যে র‌্যাপিড পিসিআর পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ রিপোর্টপ্রাপ্ত যাত্রীরা আরব আমিরাতে প্রবেশ করতে পারবেন। যদিও সেখানে গিয়ে আরও একবার তাদের করোনা পরীক্ষা করা হবে। আর এই শর্তে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ছুটিতে দেশে ফেরা কয়েক হাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী।

এসএইচ-২১/১৫/২১ (প্রবাস ডেস্ক)