ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্যের চিঠির প্রতিবাদ জানায় ৩২১ বাংলাদেশি

বাংলাদেশ নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্যের (এমইপি) সাম্প্রতিক চিঠির প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ৩২১ জন বাংলাদেশি।

বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ওই এমইপিরা ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোরেলকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। ওই চিঠির প্রতিবাদ জানিয়ে ছয় এমইপি ও ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

চিঠিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা লিখেছেন, ‘ওই ছয় সদস্যের চিঠি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে লেখা ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা মাত্র।’

‘বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ইন ইউরোপ’এর ব্যানারে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ নানা পেশার প্রতিনিধিরা আছেন।

চিঠিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলেন, ওই ছয় পার্লামেন্ট সদস্যের বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ইইউ পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের জন্য যে প্রতিনিধিদল রয়েছে, সেসব কমিটির সদস্য না হয়েও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি খর্ব করতেই তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে চিঠিটি লিখেছেন।

চিঠিতে তারা জানিয়েছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে হত্যার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও বলপূর্বক গুম শুরু হয়। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে সামরিক বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্যের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। জিয়াউর রহমানের বিএনপি সরকার বাংলাদেশের সংবিধান (পঞ্চম সংশোধনী) পরিবর্তন করে, যা ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এবং ৯ এপ্রিল ১৯৭৯-এর মধ্যে সরকারের গৃহীত সব পদক্ষেপকে বৈধতা দিয়েছে। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অধীনে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে তারা বিরোধী দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিক, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের নির্যাতন, অপহরণ ও হত্যার ধারা অব্যাহত রেখেছিল।

চিঠিদাতারা বলেন, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন প্রতিহত করতে বাংলাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। সেই সময় তারা শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তাদের পেট্রল বোমা, হাতে তৈরি বোমা ও অন্যান্য ধরনের সহিংসতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২০ সদস্যসহ প্রায় ২০০ ব্যক্তি নিহত হয়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে অংশ নেয় এবং কয়েকটি আসনে জয়লাভ করে। অন্য সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ‘মধ্যরাতের নির্বাচনের’ অভিযোগটি ছিল গুজব ও মিথ্যা তথ্যের কাজ, যা কখনো প্রমাণিত হয়নি।

বাংলাদেশিদের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে আইনের শাসন ও মানবাধিকারের অবস্থা কেমন ছিল, তা সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করা বাঞ্ছনীয় হবে। বিশেষ করে, যদি ২০০১ থকে ২০০৬ সময়কালের কিছু ঘটনা বিবেচনা করা হয়, তাহলে একটি পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায়। বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতি উপলব্ধি সূচক (সিপিআই) অনুসারে, বিএনপির লাগামহীন দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের কারণে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১২ জুন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য জোসেপ বোরেলকে বাংলাদেশের বিষয়ে চিঠি দেন। চিঠিতে তারা জোসেপ বোরেলকে বলেন— বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে অবদান রাখতে অনুরোধ করছি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান ঘটাতে হবে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ (বিএনপি) অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ত করে চলমান সঙ্কটের টেকসই ও গণতান্ত্রিক সমাধান খুঁজে বের করতে আহ্বান জানাচ্ছি।

পত্র প্রেরণকারী ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ছয় সদস্য হলেন— স্লোভাক প্রজাতন্ত্রেও ইভান স্টেফানেক, চেক প্রজাতন্ত্রের মাইকেলা সোজড্রোভা, বুলগেরিয়ার আন্দ্রে কোভাতচেভ, ডেনমার্কের কারেন মেলচিওর, স্পেনের জাভিয়ের নার্ট এবং ফিনল্যান্ডের হেইডি হাউটালা

এসএইচ-০৮/০১/২৩ (প্রবাস ডেস্ক)