বিকাল ৫:২৮
শুক্রবার
১৭ ই মে ২০২৪ ইংরেজি
৩ রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৯ ই জ্বিলকদ ১৪৪৫ হিজরী
spot_img

গ্রামের সবাই ‘শবনম’ নামে চিনতেন তামিমাকে

বর্তমানে সারাদেশে আলোচিত এক নাম তামিমা সুলতানা তাম্মি। ক্রিকেটার নাসির হোসেনের সঙ্গে বিয়ের পর তাকে নিজের স্ত্রী দাবি করেছেন রাকিব নামে এক যুবক। এ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। তবে সারা দেশে তিনি তামিমা নামে পরিচিত হলেও নিজ গ্রামের লোকজন তাকে চেনেন শবনম নামে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তামিমার বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার লোকেরপাড়া গ্রামে। ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিম দক্ষিণে লোকেরপাড়া গ্রামের অবস্থান। সেখানে গিয়ে দেখা মিলে তামিমার চাচা জাহিদুর রহমান বিপ্লবের। কথা হয় তার সঙ্গে।

তিনি জানান, তারা চার ভাই। তামিমার বাবা সহিদুর রহমান স্বপন সবার বড়। তিনি ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। মা সুমী আক্তার। এলাকাবাসী তামিমাকে চেনেন শবনম নামে।

বিপ্লব বলেন, গ্রামে তামিমার খুব একটা আসা-যাওয়া নেই। বছর দুয়েক আগে একবার এসেছিল। তবে ওর বাবা আসেন। তামিমা বড় হয়েছেন টাঙ্গাইল শহরে। টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও কুমুদিনী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। একই কলেজে ভূগোল বিষয়ে অনার্সে অধ্যয়নরত তিনি। সম্রাট (২৫) ও অভি (১৭) নামে তার ছোট দুই ভাই রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, রাকিব তামিমার প্রেমের বিয়ে শুরুতে ওর মা বাবা মেনে না নিলেও পরে মেনে নেন।

ডির্ভোসের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা জানি পারিবারিকভাবেই তামিমা রাকিবকে তালাক দিয়েছে। পরে নাসিরকে বিয়ে করেছে।

অন্যদিকে, নাসির-তামিমার বিয়ে নিয়ে এতো কিছু হয়ে গেলেও এখনো তেমন কিছুই জানেন না তার নিজ গ্রামের মানুষ।

এদিকে তামিমা তার পাসপোর্টে ঠিকানা দিয়েছেন গ্রাম লোকেরপাড়া, পোস্ট অফিস সিঙ্গুরিয়া টাঙ্গাইল সদর। প্রকৃতপক্ষে এই ঠিকানার কোনো অস্তিত্ব নেই টাঙ্গাইল সদরে। ওই ঠিকানাটি ঘাটাইল উপজেলায়।

পাসপোর্ট ও ডিভোর্স কাগজে ভুল ঠিকানা ব্যবহারের বিষয়ে মোবাইল ফোনে তামিমার বাবা সহিদুর রহমান স্বপন বলেন, যখন তামিমার এয়ারলাইনসে চকরি হয় তখন জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট করতে হয়েছে। সে সময় হয়তো ভুল হয়ে থাকতে পারে।

তামিমার ভাই সম্রাট বলেন, ২০১৬ সালে রাকিবকে তামিমা তালাক দিয়েছেন এবং পাসপোর্টটা রি-ইস্যু করা হয়েছে ২০১৮ সালে। তালাকের প্রমাণপত্রও রয়েছে আমাদের কাছে। তারপরও তাকে হেনস্তা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, তামিমা সুলতানা ঢাকা থেকে পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন। পাসপোর্টটি ইস্যু হয়েছে ডেপুটি ডিরেক্টর নাদিরা আক্তারের স্বাক্ষরে।

এসএইচ-২৩/২৭/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)

‘রোনালদো ইতিহাসের সেরা ফুটবলার’

ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী তারকা ফুটবলার রোনালদোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ। সর্বকালের সেরা ফুটবলারের প্রশ্নে রোনালদোকেই বেছে নিয়েছেন এই সুইডিশ ফরোয়ার্ড।

ইতিহাসের সেরা ফুটবলার কে? এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে বিস্তর। সেরা ফুটবলারের প্রশ্নে সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে ফুটবলবোদ্ধাদের মাঝেও নানা চলে তর্ক-বিতর্ক।

তবে সেরা ফুটবলারের তালিকায় তিনবার বিশ্বকাপজয়ী একমাত্র ফুটবলার ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলেকে এগিয়ে রাখেন অনেকেই।

কেউ কেউ আবার আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের মহানায়ক দিয়েগো ম্যারাডোনাকে মনে করেন সেরা ফুটবলার। তবে বর্তমান সময়ের দুই সেরা লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই।

তবে ইব্রাহিমোভিচের চোখে এদের কেউ নয়। তার চোখে সেরা ফুটবলার ব্রাজিলের রোনালদো। সম্প্রতি ডিসকভারি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেরা ফুটবলার হিসেবে তিনি রোনালদোকেই বেছে নেন। তিনি বলেন, ‘রোনালদো, দ্য ফেনোমেনন। সেই সবসময়ের সেরা।’

ইব্রাহিমোভিচ আরও জানান, ‘আমার দৃষ্টিতে, রোনালদো মানেই ফুটবল, যেভাবে সে বল নিয়ে এগিয়ে যেত…। কোনো সন্দেহ ছাড়াই সেই ইতিহাসের সেরা ফুটবলার।’

এসএইচ-২২/২৭/২১ (স্পোর্টস ডেস্ক)

অনন্ত জলিলের নতুন মিশন

এবার চার দেশের শিল্পীদের নতুন মিশন শুরু করছেন অভিনেতা ও প্রযোজক অনন্ত জলিল। তার নতুন মিশন ‘নেত্রী-দ্য লিডার’ সিনেমা। এ সিনেমায় অভিনয় করবেন বাংলাদেশ, ভারত, ইরান ও তুরস্কের অভিনয়শিল্পীরা।

‘নেত্রী-দ্য লিডার’ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করবেন অভিনেত্রী বর্ষা। তার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার ভূমিকায় অভিনয় করবেন অনন্ত জলিল। এতে আরও অভিনয় করবেন কবির দুহান সিং, রবি কিষান ও প্রদীপ রাওয়াত।

এ ছাড়া দেখা যাবে ইলিয়াস কাঞ্চন, কাজী হায়াতের পাশাপাশি তুরস্কের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন শিল্পীকেও। তুরস্কের একটি প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় সিনেমাটি নির্মাণ করবেন অনন্ত জলিল।

‘নেত্রী-দ্য লিডার’ সিনেমার গল্প প্রসঙ্গে অনন্ত জলিল বলেন, ‘আমাদের গল্প একটি বিভাগকে নিয়ে। ভারতে যেমন প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী থাকেন, যিনি সেই রাজ্যের প্রধান; তেমনি আমাদের বিভাগের এক নেতাকে নিয়ে এর গল্প। আমরা বেছে নিয়েছি সিলেট বিভাগকে। সেখানে এক নেতা মারা যাওয়ার পর, পার্টির সম্মতিতে তার মেয়ে নেত্রী হন। তাকে নিয়েই সিনেমার গল্প এগোবে।’

২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সিলেটে শুরু হবে এ সিনেমার চিত্রায়ণ। এরপর ভারতের হায়দরাবাদ ও তুরস্কের বিভিন্ন লোকেশেন চিত্রায়ণ হওয়ার কথা রয়েছে।

এসএইচ-২১/২৭/২১ (বিনোদন ডেস্ক)

অ্যাক্টিভিস্ট নিপীড়নে জড়িতদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবে আমেরিকা

সরকারের সমালোচক বা ভিন্নমতাবলম্বীদের হুমকি-ধামকি, হয়রানি বা কোনও ধরনের ক্ষয়ক্ষতি যুক্তরাষ্ট্র সহ্য করবে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। শুক্রবার সৌদি আরবে ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন-পীড়নে অভিযুক্ত ৭৬ নাগরিকের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানান।

এর মাত্র একদিন আগেই, গত বৃহস্পতিবার ২০১৮ সালে তুরস্কে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চার পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে হত্যাকাণ্ডের ‘নির্দেশদাতা’ এবং এর সঙ্গে জড়িত মোট ২১ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

জামাল খাশোগি সৌদি রাজপরিবারের অন্যতম সমালোচক ছিলেন। ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা কলামে তিনি রাজপরিবারের বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করতেন। নিহত এ সাংবাদিকের নামানুসারেই ‘খাশোগি নিষেধাজ্ঞা’ চালু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এ বিষয়ে ব্লিনকেন তার বিবৃতিতে বলেছেন, যারা কোনও বিদেশি সরকারের পক্ষে ‘বাইরের ভিন্নমতাবলম্বী-বিরোধী’ গুরুতর কর্মকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকবেন, মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ ওইসব ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। সাংবাদিক, সমাজকর্মী বা অন্য ব্যক্তি- যারা তাদের কাজের জন্য ভিন্নমতাবলম্বী হিসেবে বিবেচিত হন, তাদের ওপর চাপ দেওয়া, হয়রানি, নজরদারি, হুমকি বা ক্ষয়ক্ষতিও এধরনের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রশাসন ইতোমধ্যে খাশোগি হত্যাকাণ্ড ছাড়াও ভিন্নমতাবলম্বী-বিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত ৭৬ সৌদি নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে শুরু করেছে।

বিবৃতিতে ব্লিনকেন বলেন, যদিও সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক রেখেছে, তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, এই অংশীদারিত্বে অবশ্যই মার্কিন মূল্যবোধের প্রতিফলন থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এটা পুরোপুরি পরিষ্কার করেছি যে, সমাজকর্মী, ভিন্নমতাবলম্বী এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের ‘সীমান্তবহির্ভূত’ হুমকি ও হামলা অবশ্যই শেষ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র এগুলো সহ্য করবে না।

এসএইচ-২০/২৭/২১ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)

মালামাল না নিয়েই বিল পরিশোধ

কার্যাদেশ দেয়া হয়, চুক্তি হয়৷ সে অনুযায়ী পণ্য বা মালামাল না পৌঁছালেও ঠিকই বিল পরিশোধ হয়৷ ঢাকার কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে গত অর্থবছরেও কয়েক কোটি টাকার এমন কেনাকাটার চিত্র বেরিয়ে এসেছে সরকারের অডিটে৷

২০১৪ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ মুগদা জেনারেল হাসপাতালের বিরুদ্ধে৷ গত অর্থবছরেও কেনাকাটা নিয়ে অডিটে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে বিস্তর আপত্তি ওঠে৷ ১৬৯ টাকার বিছানার চাদর ৬০৩ টাকায়, ৪৭২ টাকার কম্বল দুই হাজার ৪১৮ টাকায়, ২১০ টাকার পর্দা ১২০০ টাকায়, ২২২ টাকার সার্জন গাউন ৬০৩ টাকায় কিনেছে হাসপাতালটি৷ এমনকি লিলেন সামগ্রী কেনার দুইটি বিলে বাজার দরের চেয়ে প্রায় এক কোটি টাকা বেশি খরচ করেছে হাসপাতালটি৷ এমন চিত্র আছে কেমিক্যাল রি-এজেন্ট সামগ্রী, আসবাবপত্র বা ঔষধ কেনাকাটাতেও৷ এখানেই শেষ নয়, বিভিন্ন সময়ে জিনিসপত্র কেনাকাটার হিসাবেও রয়েছে বিস্তর গড়মিল৷

২০১৯ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবরে বিপুল পরিমাণ এক্স-রে ফিল্মের ক্রয় দেখিয়ে বিল পরিশোধ করে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল৷ অথচ ভাণ্ডারে সেগুলোর যথাযথ হিসাব পাওয়া যায়নি৷ হিসাব না পাওয়া এমন পণ্যের দাম ছিল পাঁচ লাখ ৫২ হাজার টাকা৷ এছাড়াও ২০২০ সালে কেনাকাটার হিসাবে কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারে ১৫৫০ পিস হেপেরিন ইনজেকশন, ১৫০৪ টি ব্লাড লাইন ও কিছু সার্জিক্যাল পণ্যের হিসাব মেলেনি৷ পরিশোধিত বিল অনুযায়ী ৬৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকার মালামালের হদিস মেলেনি৷

এছাড়াও হাসপাতালটির প্যাথোলজি বিভাগে এক কোটি ৭২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা মূল্যের ডেঙ্গু ডিভাইস, কেথ্রিইডিটিএ টিউব ও ২৯ টি কেমিক্যাল রিএজেন্টের যথাযথ হিসাব নেই৷ ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালটি এক কোটি ৮৬ লাখ টাকা খরচ করে বিভিন্ন কেমিক্যাল রি-এজেন্ট (রাসায়নিক উপকরণ) সামগ্রী কেনাকাটায়৷

এই বিলের মধ্যে ছয় লাখ ২৫ হাজার টাকা ছিল রক্তের নমুনা সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত কেথ্রিইডিটিএ টিউব-র জন্য৷ বিলের বিপরীতে পাঁচ মে সেসব পণ্য সরবরাহ করার কথা উল্লেখ রয়েছে৷ কার্যাদেশ অনুযায়ী, প্রতি বাক্সে এক হাজার করে মোট ২৫ বাক্স টিউব থাকার কথা৷ কিন্তু হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে সেগুলো প্রাপ্তির কোনো হিসাব নেই৷ এমনকি হাসপাতালের যে ইউনিটের জন্য কেনা হয়েছে সেই প্যাথোলজি বিভাগও সেগুলো বুঝে পায়নি৷ ফলে মালামাল গ্রহণ না করেই এই বাবদ ঠিকাদারকে সোয়া ছয় লাখ টাকা পরিশোধ করেছে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল৷ এইসব বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অডিটে যথাযথ জবাব দিতে পারেনি৷

২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত হাসপাতালটিতে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন সাতজন৷ গত ১৭ জানুয়ারি যোগ দিয়েছে ডা. অসীম কুমার নাথ৷ যোগাযোগ করা হলে তিনি পূর্বের অনিয়ম নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি৷

শুধু মুগদা নয়, মালামাল সরবরাহ না করা সত্ত্বেও বিল পরিশোধের অভিযোগ এসেছে ঢাকার আরো কয়েকটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে৷ যেমন, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল৷ ২০২০ সালের ৯ মে ও ২১ জুন, দুটি আলাদা বিলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ক্লিয়ার এজ টেকনোলজিকে এক কোটি ৬৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা পরিশোধ করে হাসপাতালটি৷ প্রথম বিলটিতে ৮৭৫টি ক্লেক্সেন ৬০ এমজি ইনজেকশনের কার্যাদেশ ছিল৷ যারমধ্যে হাসপাতাল ৫০৫টি বুঝে পেয়েছে৷ ৩৭০টি ঔষধ না পেলেও ৭৬৫ টাকা করে সেগুলোর জন্যেও দুই লাখ ৮৩ হাজার টাকা ঠিকাদারকে দেয়া হয়েছে৷

২১ মে আরেকটি বিলে পরিশোধ করা হয়েছে ৬৯ লাখ ৩৯ হাজার টাকা৷ এর মধ্যে আট লাখ ১০ হাজার টাকা ছিল ৫০০টি সোলুপ্রেড ইনজেকশনের জন্য৷ অথচ এর একটি ঔষধও হাসাপাতালকে দেয়নি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি৷ সব মিলিয়ে দুইটি বিলে মোট ১০ লাখ ৯৩ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল কোনো মালামাল ছাড়াই৷

হাসপাতালটি নিরীক্ষা প্রতিবেদনে আপত্তির জবাবে বলেছিল, সরবরাহকারীর কাছ থেকে মালামাল বুঝে নেয়া হয়েছিল৷ তার ভিত্তিতেই কর্তৃপক্ষ বিল পরিশোধ করেছে৷ কী কারণে মজুদে তা কম দেখানো হয়েছে সেটি পরবর্তীতে তারা যাচাই করবে৷ যদিও এই বিষয়ে হাসপাতালটির পরিচালক ডা. মোহাম্মদ সেহাব উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেছেন মালামাল বুঝে না পাওয়ায় তারা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ডেকেছেন৷ ‘‘যেসব মালামাল দেয়া হয়নি, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে সেগুলো দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে এবং তারা দেবে৷ তাদেরকে ডাকা হয়েছে৷ তারা বলেছে এটা পূরণ করে দেবে,’’ বলেন ডা. সেহাব উদ্দিন৷

মালামাল না নিয়েই ঠিকাদারকে টাকা পরিশোধের ঘটনা আছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালেও৷ ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৫৬ ধরনের কেমিক্যাল রি-এজেন্ট সামগ্রী সরবরাহে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেডিটেক ইমেজিং লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেয় তারা৷ এর বিপরীতে ২০২০ সাল পর্যন্ত কোনো মালামাল নেয়া হয়নি প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে৷ অথচ মূল্য বাবদ দুই কোটি ৯৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা ঠিকই পরিশোধ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷

২০২০ সালের ৩০ মে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল একই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ৫,২৭৭টি ডেঙ্গু ডিভাইস সরবরাহের কার্যাদেশ দেয়৷ প্রতিটির দাম ৩৭৯ টাকা হিসাবে মোট বিলের অঙ্ক ছিল ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯৮৩ টাকা৷ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সর্বসাকুল্যে ডিভাইস সরবরাহ করেছে ১০০ টি, কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাকি ৫১৭৭টিসহ পুরো টাকাই পরিশোধ করেছে৷ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল গত অর্থবছরে মোট তিন কোটি ১৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যয় করেছে, যার বিপরীতে কোনো মালামাল গ্রহণ করেনি৷ যদিও হাসপাতালটি বলছে, কার্যাদেশ অনুযায়ী প্রতিটি পণ্যই তারা বুঝে নেবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে৷

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ বলেন, ‘‘আমি যদি প্রথম দিনই সমস্ত কিছু একসাথে নিয়ে নিতাম, তাহলে দেখা যেতো জুনের মধ্যেই (জিনিসপত্রের) মেয়াদ শেষ হয়ে যেতো৷ জুলাই-আগস্টে আমার চলার মতো কিছু থাকতো না৷ এমন না যে একটা আইটেমও কাউকে ছাড় দেয়া হয়েছে৷ …মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যেই পুরোটা সংগ্রহ করে নেবো৷ এক পয়সাও তাদের হাতে থাকবে না৷’’ ২০১৯ সালের কার্যাদেশের রি-এজেন্ট সামগ্রীগুলো কেন এখনো নেয়া হয়নি সেই বিষয়ে তিনি বলেন. ‘‘রিএজেন্ট সামগ্রী আমরা একসাথে নেই না৷ ধাপে ধাপে নেই৷

এতে ওদের (ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান) কোনো লাভ নেই. আমাদের সুবিধার জন্যই এটা করি৷ বরং একবারে সরবরাহ করলে তার খরচ কম হতো৷ আমরা তিনমাস পরপর তাদের কাছ থেকে ধাপে ধাপে নেই৷ ওরা একবারেই দিতে ইন্টারেস্টেড থাকে৷ আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, একটা আইটেম, একটা টাকাও তারা পেন্ডিং রেখে যেতে পারবে না৷ আমার যেটা আছে অর্ডার, সেটা শতভাগই তাকে দিয়ে যেতে হবে৷’’ কিন্তু সরবরাহকারীর কাছ থেকে মালামাল বা ঔষধ গ্রহণ না করে বিল পরিশোধের সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে৷

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পণ্য সরবরাহ করেনি, কিন্তু বিল পরিশোধ করে ইন্সটলেশন দেখানো হয়েছে এমন ঘটনাও আছে৷ যেমন, গত বছরের ৩০ জুনের মধ্যে চারটি এক্স-রে মেশিন সরবরাহে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দুই কোটি ৮০ লাখ টাকার চুক্তি করে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান৷ ২৮ জুনই প্রতিষ্ঠানটিকে বিল পরিশোধ করা হয়৷ কাগজপত্রে ২৯ তারিখে সেগুলোর ইন্সটলেশন রিপোর্টও (চালু হয়েছে এমন প্রতিবেদন) দেয়া হয়৷ অথচ যশোরে বেনাপোলের কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ যন্ত্রগুলো পরীক্ষাই করেছে তিন আগস্ট৷

নিয়ম অনুযায়ী, বিলম্বের জন্য ২৮ লাখ টাকার জরিমানা আদায় না করে উলটো বুঝে পাওয়ার আগেই পুরো টাকা দিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷মালামাল সরবরাহের আগেই বিল পরিশোধের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের ডা. মোঃ আব্দুল গণি মোল্ল্যাহর কাছে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সেসময় আমি অসুস্থ ছিলাম৷ তাই বিস্তারিত বলতে পারবো না৷ তবে এখানে এমন কিছু ঘটেনি তা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি৷’’ অবশ্য নিরীক্ষা আপত্তির জবাবে হাসপাতালটি করোনা পরিস্থিতির অজুহাত দিয়েছিল৷

হাসপাতালে কেনাকাটায় এমনসব অনিয়মের উদাহরণ এবারই প্রথম নয়৷ মালামাল না নিয়েই হাসপাতালগুলোর বিল পরিশোধ নিয়ে বিভিন্ন সময়েই গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হচ্ছে৷ তদন্তেও অনেক হাসপাতালে কোটি কোটি টাকা অর্থ লোপাটের ঘটনা উঠে এসেছে৷ তারপরও এই প্রবণতা বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন?

এমন প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ক্রয়ের দায়িত্বে যারা আছেন এবং যারা সরবরাহ করেন দুই দিকেই যোগাসাজশ থাকে৷ ‘‘একজন ইন্সপেক্টর থাকেন যিনি মালামাল সংগ্রহ করেন৷ তিনি রিসিভ না করেই হয়তো বলে দিচ্ছেন রিসিভ করে দিচ্ছি৷ সেটা আর কেউ দেখার নেই৷ তিনি যদি বলেন রিসিভ করে দিয়েছি তাহলে বিলটা পে হয়ে যাবে৷ এক্ষেত্রে যারা দেয় আর যারা গ্রহণ করে দুই পক্ষেরই যোগসাজশ আছে,’’ বলেন ডা. ইসলাম৷

এসএইচ-১৯/২৭/২১ (ফয়সাল শোভন, সমীর কুমার দে, ডয়চে ভেলে)

রোববার ২৯টি পৌরসভার ভোটগ্রহণ

পঞ্চম ধাপে দেশের ২৯টি পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ রোববার সকাল ৮ থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে। এরই মধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে নির্বাচনী সরঞ্জাম।

শনিবার বগুড়া পৌর উচ্চ বিদ্যালয়ে যান বিভিন্ন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং ও রিটার্নিং কর্মকর্তারা। সেখান থেকে ইভিএম মেশিনসহ বিভিন্ন নির্বাচনীসামগ্রী বুঝে নেন তারা। এ ধাপে সব পৌরসভায় ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

পঞ্চম দফায় ৩১ পৌরসভার তফসিল ঘোষণা হলেও, যশোর পৌরসভা ও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার ভোট হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত হয়।

এ ধাপের নির্বাচনী লড়াইয়ে মেয়র পদে ১০০ জন প্রার্থী, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬৬ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে রয়েছেন এক হাজার ৩১৮ জন। এ ছাড়া এদিন চার উপজেলায় উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণও হবে।

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার নির্বাচন কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা নির্বাচন অফিস। এরই অংশ হিসেবে শনিবার দুপুর ১২টা থেকে মোট ৪৮টি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রের

শহরের পিটিআই ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. মেহেদী হাসান বলেন, ভোট কেন্দ্রে মোট ৯টি বুথ রয়েছে। তবে এখান থেকে ৫টি অতিরিক্তসহ মোট ১৪টি ইভিএম মেশিন দেয়া হয়েছে। আমি আমার কেন্দ্রের নির্বাচনী সরঞ্জাম বুঝে পেয়েছি।

নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণকালে জেলা নির্বাচন অফিসার মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় প্রথম বারের মতো ইভিএমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজকে নির্বাচনী প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম বিতরণ করা হচ্ছে। সব সরঞ্জাম প্রিসাইডিং অফিসারের মাধ্যমে পুলিশ নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। অবাধ শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের লক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

এসএইচ-১৮/২৭/২১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)

বাংলাদেশিরা বিক্রি হন

মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ সংযুক্ত আবর আমিরাত। প্রতি বছর দেশটির সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে থাকে। এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। এখানেও বাংলাদেশের মতো কাজের জন্য বিক্রি হোন বাংলাদেশি শ্রমিকেরা।

দেশটির বড় শহর দুবাইয়ের ডেরায় আল-নাকিলে প্রতিদিন মাগরিবের পর জড়ো হন অসংখ্য বাংলাদেশি। তাদের লক্ষ্য দিনমজুরের কাজ পাওয়া। দুবাইয়ের প্রবাসীরা জায়গাটি মানুষ ‘কেনাবেচার বাজার’ বলেন।

জানা গেছে, প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ লোক জড়ো হয়েছেন সেখানে। স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক, কন্ট্রাক্টর কিংবা ম্যানেজাররা আসেন। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন বাংলাদেশি প্রবাসীরা, দর-কষাকষি করেন। দুই পক্ষ দাম নিয়ে সন্তুষ্ট হলে কাজের চুক্তি করেন। মূলত প্রতারণার শিকার বাংলাদেশিরা দৈনিক কাজের সন্ধানে এখানে বেশি আসেন।

জানা যায়, এখানে সাধারণত দুই ধরনের বাংলাদেশি প্রবাসীরা আসেন। অনেকে আছেন যারা দীর্ঘদিন ধরে দুবাইয়ে এসেছেন কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে সব হারিয়েছেন। এখানে এসে কোনো চাকরি পাননি। তারা প্রতিনিয়ত এ বাজারে আসেন। অনেকে আছেন যারা নিয়মিত চাকরি করছেন। শুক্র ও শনিবার তাদের ছুটির দিন। সেসব বাংলাদেশি ছুটির দিনে বাড়তি আয়ের জন্য কাজের খোঁজে এখানে আসেন।

একটি সুপারশপে কাজ করি। করোনার কারণে বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার উপার্জিত টাকায় পরিবার চলে। গত কয়েক মাস ধার করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছি। বর্তমান চাকরিতে একদিন হাফ ও একদিন ছুটি পাই। এ সময় অন্যের হয়ে কাজ করি। গণমাধ্যমে জানান দুবাই প্রবাসী রিয়াজ খান (ছদ্মনাম)।

সাঈদুল আলম নামে এক প্রবাসী জানান, তার বাসা সিলেটের হবিগঞ্জে। গত আট বছর ধরে এখানে একটি সুপারশপে কর্মরত। বাংলাদেশি টাকায় আয় প্রায় ৪৩ হাজার। থাকা-খাওয়া ও ইনস্যুরেন্স বাদে মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা দেশে পাঠান। আরও পাঠালে ভালো, কারণ সেখানে বৃদ্ধ বাবা-মা, দুই বোন ও স্ত্রী-সন্তানের খরচ চালাতে আরও টাকার প্রয়োজন। সে কারণে একদিনের কাজের সন্ধানে এখানে আসা।

ডেরা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন মাগরিবের নামাজের পর বসে এ বাজার। দুবাইয়ে বৃহস্পতিবার হাফ বেলা অফিস, শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি। তাই বৃহস্পতি ও শুক্রবার সন্ধ্যায় এখানে সবচেয়ে বেশি মানুষ জড়ো হন। মূলত রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের ভিড় বেশি থাকে। ৮টার পর বাজারে বাংলাদেশির সংখ্যা কমতে থাকে। ১০টার দিকে মোটামুটি খালি হয়ে যায়। এ বাজারে আসা অধিকাংশ মানুষই সিলেট ও চট্টগ্রামের।

আল-নাকিরের বাংলাদেশি কেনাবেচার এ বাজারে সাধারণত ভবন নির্মাণের রাজমিস্ত্রি, রঙমিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ান, হামালি (যোগালি), মালি প্রভৃতি কাজ মেলে।

এসএইচ-১৭/২৭/২১ (প্রবাস ডেস্ক)

চিকিৎসকের স্ত্রীর নির্যাতনে নিখোঁজ গৃহকর্মী উদ্ধার

হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হওয়ার ২৩ ঘণ্টা পর আত্মীয়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. সিএইচ রবিনের স্ত্রী রাখির নির্যাতনের শিকার শিশু গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈকে (১১)। শনিবার বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার আশোয়ার গ্রামের বিমলের বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে উজিরপুর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান জানান, শিশুটি হাসপাতাল থেকে নিখোঁজের খবর পাওয়ার পর থেকেই পুলিশ তার সন্ধানে নামে। এরপর ওই শিশুটির চাচা পরিচয়দানকারী তপন বাড়ৈর মামা শ্বশুর বিমলের বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এদিকে শিশুটিকে চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতালে থেকে নিয়ে যাওয়ার কারণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিশুটির গ্রামের বাড়ির পাশেই তপন বাড়ৈ নামে ব্যক্তি রয়েছেন। যিনি শিশুটির সম্পর্কে চাচা হন, তিনিই শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়াসহ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য শুরু থেকেই জড়িত ছিলেন। স্থানীয়দের ধারণা, আর্থিক প্রলোভনে নির্যাতনকারীদের পক্ষ হয়ে শিশুটির সঙ্গে অমানবিক আচরণে লিপ্ত হয়েছেন তপন বাড়ৈ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. শামসুদ্দোহা তাওহিদ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার চাচা পরিচয়ে এক ব্যক্তি নির্যাতনের শিকার শিশু নিপাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা চালান। তবে শিশুটি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত এবং বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় পুলিশকে না জানিয়ে তাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিতে রাজি হননি।

পরে শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই শিশুটি এবং তার সঙ্গে থাকা বড় মা পরিচয়দানকারী নারীকে আর দেখা যায়নি।

শিশুটির পাশের বেডের রোগীরা জানিয়েছেন, সারা রাত ওই শিশুটির স্বজনদের মোবাইলে অনেক কল আসে এবং তারা সারা রাত সজাগই ছিলেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিশুটি নিখোঁজের ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হয়ে তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নির্যাতনের শিকার শিশু নিপা বাড়ৈকে উজিরপুরের উত্তর জামবাড়ি এলাকার একটি দোকানের সামনে রেখে চলে যান এক ব্যক্তি। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

শিশুটি জানায়, ঢাকার অর্থপেডিক ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সিএইচ রবিনের বাসায় ছয় মাস আগে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করে। শুরু থেকে রবীনের স্ত্রী রাখি দাস শিশুটিকে নির্যাতন করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে লোক মারফত নিপাকে গ্রামের বাড়ির এলাকায় রেখে পালিয়ে যায়।

এসএইচ-১৬/২৭/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)

ভুট্টো যেভাবে পাকিস্তানে ক্ষমতার ভাগ চেয়েছিলেন

উনিশ’শ একাত্তর সালের জানুয়ারিতে লারকানায় জুলফিকার আলী ভুট্টোর জমিদারিতে যে হাঁস শিকারের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানেই পূর্ব পাকিস্তানের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। অপারেশন সার্চ লাইটের ধারণা তৈরি হয় সেখানেই।কিন্তু তার আগে থেকেই পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ফাটল বাড়তে থাকে।

উনিশশো সত্তুরের নির্বাচনের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তান উত্তাল। সাতই ডিসেম্বর জাতীয় আইন পরিষদের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের সুবাদে আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে শুধু পূর্ব পাকিস্তানে অদ্বিতীয় শক্তিশালী রাজনৈতিক দল।

ঐ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের মোট ১৬২টি আসনের মধ্যে দুটি ছাড়া সব আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, পশ্চিম পাকিস্তানের ১৪৮টি আসনের মধ্যে ৮১টি আসন পায় জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি (পিপিপি)।

আওয়ামী লীগ এবং পিপিপি পাকিস্তানের দুই অংশের দুটি গরিষ্ঠ দল, কিন্তু অন্য অংশে একটি আসনেও জিততে পারেনি। পাকিস্তান সৃষ্টির ২৩ বছর পর একমাত্র ও সর্বশেষ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কার্যত তৎকালীন পাকিস্তান নামে রাষ্ট্রের মৃত্যু ঘোষিত হয়।

কিন্তু ঐ নির্বাচন ছিল পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন সামরিক-বেসামরিক এস্টাব্লিশমেন্টের জন্য একটা বজ্রপাতের মতো। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে তারা যেসব তথ্য পাচ্ছিল, তাতে তারা ধরে নিয়েছিল নির্বাচনে কোন একটি দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না।

আর এ নিয়ে সংসদে অচলাবস্থা তৈরি হলে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু রয়ে যাবে সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের হাতে। আর তেমনটা যাতে ঘটে সেজন্য তারা পর্দার অন্তরাল থেকে কাজও করে যাচ্ছিল।

সে সময় ঢাকায় বেসামরিক প্রশাসনের প্রধান পদে কাজ করছিলেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খান। তিনি তার আত্মজীবনীমূলক ‘হাও পাকিস্তান গট ডিভাইডেড’ বইতে লিখেছেন, “আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কমিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে আমি নুরুল আমীন এবং খাজা খয়েরুদ্দিনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিলাম। এই উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল দুটি: এক, ‘ইসলাম-পসন্দ’ দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ো তোলা এবং দুই, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক শক্তির কবল থেকে পাকিস্তানের আদর্শ ও সংহতিকে রক্ষা করা।”

এতে তারা কিছুটা সফলও হয়। প্রায় ৮০টি আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পর রাও ফরমান আলী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ঐ উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

এরপর তিনি লিখছেন, নির্বাচনের পর শেখ মুজিবের সাথে যখন তার সাক্ষাৎ হয়, তিনি তখন আওয়ামী লীগ বিরোধিতার জন্য রাও ফরমানকে অভিযুক্ত করেন। সে সময় এক চাতুর্যপূর্ণ জবাবে তিনি বলেছিলেন, “আপনাকে সাহায্য করার জন্যই এটা করা হয়েছিল। কারণ বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গেলে আপনি চরমপন্থিদের ক্রীড়নকে পরিণত হবেন!”

এই নির্বাচন বিশেষভাবে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল মি. ভুট্টোর জন্য। আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলনের জোয়ারে তার উত্থান। পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্র, শ্রমিক এবং ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে তিনি তার নবগঠিত দল পিপিপি’র পতাকা তলে আনতে সমর্থ হয়েছিলেন।

সে সময় বালোচ এবং পাখতুন জাতীয়তাবাদীরা পাকিস্তানের ‘একক ইউনিট’ ব্যবস্থার অবসান দাবি করছিলেন।

ভুট্টো নিজে সিন্ধী। কিন্তু দেশের সর্বময় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল মূলত পাঞ্জাবী সেনা-বেসামরিক শাসকগোষ্ঠীর হাতে। তাই জেনারেল পীরজাদা, ওমর এবং গুল হাসানের মতো সে সময়কার গুরুত্বপূর্ণ সেনা অধিনায়কদের সাথে তিনি সখ্যতা গড়ে তুলছিলেন।

আইয়ুব মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর তার ব্যাপারে জেনারেলদের যেসব সন্দেহ ছিল, তিনি তা দূর করতে পেরেছিলেন। প্রতিষ্ঠার পর পিপিপি‌’র রাজনৈতিক স্লোগানটি রচনা করেছিলেন বাঙালী কমিউনিস্ট নেতা জালালুদ্দিন আব্দুর রহিম: “ইসলাম আমাদের ধর্ম, গণতন্ত্র আমাদের রাজনীতি এবং সমাজতন্ত্র আমাদের অর্থনীতি: জনগণই ক্ষমতার মালিক।”

তার ব্যাপারে সামরিক-বেসামরিক শাসক শ্রেণির সন্দেহ মি. ভুট্টো দূর করতে পেরেছিলেন। তিনি হয়ে উঠেছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের কণ্ঠস্বর এবং ‘দেশপ্রেমের প্রতীক’।

কিন্তু ‘৭০-এর নির্বাচন তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার পথে কাঁটা হয়ে দেখা দেয়।

জি ডাব্লিউ চৌধুরী ছিলেন সে সময়কার কেন্দ্র সরকারের যোগাযোগ বিষয়ক মন্ত্রী। তার বই ‘দ্য লাস্ট ডেজ অফ ইউনাইটেড পাকিস্তান’-এ তিনি লিখেছেন, ১৯৭০-এর ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি -এই দুই মাসে ভুট্টো যেসব ভাষণ দিয়েছিলেন তার বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে তাকে যদি দুটো ‘পি’ অর্থাৎ ‘পাওয়ার অথবা পাকিস্তান’র মধ্যে কোন একটিকে বেছে নিতে বলা হলে তিনি পাওয়ার অর্থাৎ ক্ষমতাকেই বেছে নেবেন। সে ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হলেও তাতে কিছু আসে যায় না।

সে সময় ভুট্টো বলেছিলেন, “তার দলের সমর্থনকে বাদ দিয়ে কোন সংবিধান রচনা কিংবা কেন্দ্রে কোন সরকার গঠন করা যাবে না।”

তার গণতান্ত্রিক ছদ্মবেশকে পরিত্যাগ করে তিনি বলেছিলেন, “জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতাই বড় কথা নয়।”

তেসরা মার্চ ঢাকায় নবনির্বাচিত জাতীয় পরিষদের বৈঠকের সম্ভাবনা দেখা দিলে তিনি এতটাই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন যে তিনি এমনকি তার নিজের দলের এমএনএ সদস্যদের প্রতি হুমকি দিয়ে বলেন, কেউ ঢাকায় গেলে তার ঠ্যাং ভেঙ্গে দেয়া হবে।

সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাঈদা হামিদ মি. ভুট্টোর রাজনৈতিক জীবনীমূলক বই ‘বর্ন টু বি হ্যাংগড’-এ জানিয়েছেন, তার হুমকিতে পিপিপির অন্য সংসদ সদস্যরা ভীত হলেও একজন এমএনএ – আহমেদ রাজা খান কাসুরি – তাকে উপেক্ষা করেছিলেন।

কিন্তু তার ফল ভোগও তাকে করতে হয়েছিল। মি. ভুট্টো যখন প্রধানমন্ত্রী তখন ১৯৭৪ সালে মি. কাসুরিকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ঐ হামলায় মি. কাসুরির বাবা নবাব মোহাম্মদ আহমেদ খান কাসুরি নিহত হন।

পরে থানায় মামলা করার সময় রাজা খান কাসুরি বলেছিলেন ঐ হত্যা প্রচেষ্টায় যে গুলি ব্যবহার করা হয়েছিল তা ব্যবহার করতো ভুট্টোর নিয়ন্ত্রণাধীন আধাসামরিক বাহিনী ফেডারেল সিকিউরিটি ফোর্স।

এদিকে, চাপ শেখ মুজিবের ওপরও ছিল। নির্বাচনের অভূতপূর্ব ফলাফল আওয়ামী লীগের মধ্যে স্বাধীনতাকামীদের আস্থা অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছিল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছয় দফার ম্যানিফেস্টো থেকে একচুল সরে দাঁড়ানোর কোন উপায় ছিল না। দলের মধ্যে ছাত্র সমর্থক এবং দলের বাইরে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানির পাঁচ-দফা দাবি শেখ মুজিবের অবস্থানকে অনড় করে তুলেছিল।

ওদিকে, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী চাইছিল গরিষ্ঠ দলের নেতা এবং ‘ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে মি. মুজিব যেন পশ্চিম পাকিস্তানে যান এবং সংবিধান রচনা ও ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ্যে সামরিক সরকারের জারি করা ‘লিগাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার’ বা এলএফও’র আওতায় সমঝোতার জন্য মি. ভুট্টোর সাথে আলোচনা শুরু করেন।

কিন্তু তিনি তা করতে রাজি ছিলেন না। কারণ আওয়ামী লীগ মনে করছিল, গরিষ্ঠ দল হিসেবে সংবিধান রচনার অধিকার তার এবং সেই সংবিধানে ছয়-দফার প্রতিফলন থাকতে হবে।

“এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের পর অনেকেই সন্দেহ করতে থাকেন যে শেখ মুজিব হয়তো অখণ্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে আগ্রহী নন,” জি ডাব্লিউ চৌধুরী লিখছেন, “আর তার প্রতি আরও সদয় মতামত হচ্ছে তিনি দেখাতে চাইছিলেন যে এরপর ক্ষমতার ভরকেন্দ্র থাকবে ঢাকায়, রাওয়ালপিন্ডিতে নয়।”

ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানকেই ঢাকায় যেতে হয়েছিল।

কিন্তু তার আগেই শেখ মুজিব এমন একটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন যেটা মি. ভুট্টোসহ পশ্চিম পাকিস্তানের সবাইকেই একেবারে চমকে দিয়েছিলেন।

তেসরা জানুয়ারি তিনি রমনা রেসকোর্সে এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন। ছয়-দফার প্রতি গণরায়কে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার লক্ষ্যে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের সব এমএনএকে দিয়ে শপথ বাক্য পাঠ করান। এমএনএ’রা প্রতিজ্ঞা করেন যে দেশের সংবিধান রচনার সময় তারা কোনমতেই ছয়-দফাকে বিসর্জন দেবেন না।

নির্বাচনের পর ইয়াহিয়া খান ও শেখ মুজিবের মধ্যে প্রথম বৈঠকটি হয় ১২ই জানুয়ারি। তেরই জানুয়ারি দ্বিতীয় দফার বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া যখন ঢাকা ত্যাগ করছিলেন তখন তিনি সাংবাদিকদের জানান যে বৈঠকে জরুরি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ইয়াহিয়া খান বলেন, “এই প্রশ্ন তাকে (শেখ মুজিব) জিজ্ঞেস করুন। তিনি পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী। তিনি যখন দায়িত্ব নেবেন, তখন আমি থাকবো না। তিনি শিগগীরই সরকার গঠন করছেন।”

উনশি’শ একাত্তরের পুরো সময়টিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকায় কর্মরত ছিলেন মেজর সিদ্দিক সালিক। তার স্মৃতিকথা ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’-এ তিনি লিখেছেন, ইয়াহিয়া খানের ঐ মন্তব্য শুনে “সেখানে উপস্থিত এক বাঙালী সাংবাদিক আমাকে বললেন আসল কথাটা হলো: আমি থাকবো না। কারণ নতুন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাকে প্রেসিডেন্ট পদে বহাল রাখতে আওয়ামী লীগ রাজি হয়নি, যদি না তিনি আওয়ামী লীগের তৈরি শাসনতন্ত্রের খসড়াটি অনুমোদন না করেন।”

ওদিকে, ভুট্টো পূর্ব পাকিস্তানে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছিলেন। তিনি জানতেন যে তিনি অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারছেন না। এমনকি এক ভাষণে তিনি ভাগাভাগি করে দেশ চালানোর প্রস্তাবও দিয়েছিলেন বলে সে সময় লাহোরের এক পত্রিকার শিরোনাম ছিল: “উধার তুম, ইধার হাম।” (তুমি ও দিকটায়, আমি এ দিকটায় [শাসন করবো]।

পশ্চিম পাকিস্তানের জেনারেলরা যখন ছয়-দফা থেকে শেখ মুজিবকে সরিয়ে আনতে ব্যর্থ হলো তখন শুরু হলো প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের আরেক অধ্যায়।

ঢাকা থেকে ফিরে করাচীতে একদিন থেকেই ইয়াহিয়া খান ছুটে গেলেন লারকানায়, সিন্ধু প্রদেশে ভুট্টোর পৈত্রিক জমিদারিতে। উদ্দেশ্য: হাঁস শিকার করা।

জি ডাব্লিউ চৌধুরী লিখছেন, শেখ মুজিবকে নিয়ে ইয়াহিয়ার হতাশার পুরো সুযোগ নিলেন ভুট্টো। লারকানা সফরে প্রেসিডেন্টের সঙ্গী ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল আব্দুল হামিদ খান, শেখ মুজিবকে যার অপছন্দের কথা কারও জানতে বাকি ছিল না। সাথে ছিলেন প্রেসিডেন্টের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল এস.জি.এম পীরজাদা, সামরিক সরকারে ভুট্টোর সবচেয়ে কাছের লোক। সেখানে আরও হাজির ছিলেন পাঞ্জাব আর সিন্ধের দুই পিপিপি নেতা – গোলাম মুস্তাফা খার এবং মমতাজ ভুট্টো।

‘লারকানা ষড়যন্ত্র’ সম্পর্কে রাও ফরমান আলী লিখছেন, ভুট্টোর তত্ত্বকেই সেখানে গ্রহণ করা হয়। তত্ত্বটি ছিল: জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া শেখ মুজিবের ‘আনুগত্য পরীক্ষা’ করবেন। শেখ মুজিব যদি ঐ স্থগিতাদেশ মেনে নেন, তাহলে তিনি ‘অনুগত পাকিস্তানী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন। আর মেনে না নিলে প্রমাণ হবে তিনি পাকিস্তানের প্রতি ‘অনুগত নন।’ তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বও বুঝতে পেরেছিলেন যে লারকানায় হাঁস শিকারের আড়ালে অন্য কিছু ঘটছে।

মূলত এই পর্যায় থেকে আওয়ামী লীগের ছয়-দফা এবং শেখ মুজিব সম্পর্কে পশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাবী-মোহাজির সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র এবং ক্ষমতা-লোভী মহল মনস্থির করে ফেলে।

পিটার সিসন এবং লিও রোজ তাদের লেখা ‘ওয়ার অ্যান্ড সিসেশন: পাকিস্তান, ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্যা ক্রিয়েশন অফ বাংলাদেশ’ বইতে সে সময়কার পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর মনোভাবকে ব্যাখ্যা করছেন এভাবে: “সামরিক বাহিনীর ছিল দু’ধরনের উদ্বেগ। প্রথমত, কার্যকর ক্ষমতাবান একটি কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করা। দ্বিতীয়ত, সামরিক বাজেটকে অক্ষত রাখা এবং নিয়োগ, পোস্টিং, প্রমোশন ইত্যাদিকে রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে রেখে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখা।”

সে কারণে এক যুগ ব্যাপী আইয়ুব শাসনের সুবিধাভোগী জেনারেলরা এমনিতেই কোন গ্যারান্টি ছাড়া বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে আগ্রহী ছিলেন না। আর শেখ মুজিব এবং আওয়ামী লীগকে নিয়ে তাদের সন্দেহের আগুনে ক্রমাগত ঘি ঢালছিলেন ভুট্টো।

এরপর থেকেই যা চলেছিল তা হলো অবাধ্য শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগকে শায়েস্তা করার প্রস্তুতি। সামরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি রাজনৈতিক সমঝোতার প্রহসনও চলতে থাকে।

পরিকল্পনা মত ইয়াহিয়া খান পরে ৩রা মার্চ ঢাকায় নির্ধারিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশনটি স্থগিত ঘোষণা করেন। এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তান।

হাসান আসকারি রিজভী তার ‘দ্য মিলিটারি অ্যান্ড পলিটিক্স ইন পাকিস্তান’ বইতে মন্তব্য করেছেন, “মূলত, ২রা মার্চ, ১৯৭১ থেকে প্রমাণিত হয় যে অখণ্ড পাকিস্তানের ধারণা একটি বিভ্রম মাত্র। শেখ মুজিব পরিণত হন পূর্ব পাকিস্তানের কার্যত শাসকে।” তার প্রকাশ ঘটে ৭ই মার্চের অবিষ্মরণীয় ভাষণে।

লারকানার ড্রিঘ লেকে হাঁস শিকারের পাশাপাশি কী নিয়ে আলোচনা হয়েছিল সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায় না। তবে বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক অভিযানের ধারণাটা সেখানেই রাজনৈতিক ও সামরিক অনুমোদন পেয়েছিল। গোড়ার দিকে যে অভিযানের নাম ছিল ‘ব্লিৎজ’, পরে সেটাকে আরও পরিবর্ধন করে নাম দেয়া হয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’। এর স্বাদ পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীরা পেয়েছিলেন ২৫শে মার্চের রাতে।

সেই রাতে ঢাকাতেই ছিলেন মি. ভুট্টো। তার নিজের লেখাতেই তিনি জানিয়েছেন, হোটেলের জানালা দিয়ে সারারাত ধরে তিনি ঢাকার সেই আগুন দেখেছেন।

সকালে তিনি তড়িঘড়ি করে ঢাকা ছাড়েন এবং করাচীতে গিয়ে মন্তব্য করেন: “থ্যাংক গড, পাকিস্তান হ্যাজ বিন সেভড”, অর্থাৎ “ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, পাকিস্তানকে রক্ষা করা গেছে।‍‍”

কিন্তু ইতিহাস বলে অন্য কথা।

এসএইচ-১৫/২৭/২১ (মাসুদ হাসান খান, বিবিসি)

শাকিবের শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার গ্রহণ করলেন বুবলী

‘সেফকিপার চ্যানেল আই ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ এর মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল প্লাটফর্মে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান ও শ্রেষ্ঠত্বের জন্য এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এতে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খান।

শুক্রবার চ্যানেল আই চেতনা চত্বরে আলো ঝলমলে মঞ্চে তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক (এমপি) শ্রেষ্ঠ নায়কের ক্যাটাগরিতে শাকিব খানের নাম ঘোষণা করেন।

ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে শাকিব খান অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। তবে চ্যানেল আইয়ের আয়োজনে ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডে তাকে সেরা নায়ক নির্বাচিত করায় কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে শাকিবের অনুপস্থিতিতে তাৎক্ষণিক পুরস্কার বুঝে নেন সহ-অভিনেত্রী চিত্রনায়িকা বুবলী।

শাকিবের আগে বুবলী নিজেও মঞ্চ থেকে ‘শ্রেষ্ঠ নায়িকা’র পুরস্কার গ্রহণ করেন। প্রতিমন্ত্রী পলক জানান, “বস আসেননি সেজন্য পুরস্কারটি বুবলীর হাতে দেয়া হলো।”

শাকিব খানকে তার ‘বসগিরি’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ নায়ক হিসেবে পুরস্কার দেয়া হয়। ওই সিনেমার জন্য নায়িকা বুবলীকেও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কার দেয়া হয়। মূলত, একই সিনেমা সংশ্লিষ্ট হওয়ায় শাকিবের পুরস্কারটি বুবলীর হাতে তুলে দেয়া হয়।

২০২০ সালে ডিজিটালি মুক্তি পাওয়া (ওটিটি, ইউটিউব) চলচ্চিত্র, নাটক, ওয়েব সিরিজ, মিউজিক ভিডিওর উপর ভিত্তি করে সম্মাননা ও অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ।

এসএইচ-১৪/২৭/২১ (বিনোদন ডেস্ক)