উপজেলায় ১৭ ভোট পাওয়া বাবলু বিপুল ভোটে এমপি

বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসন এলাকাতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান।এই আসনটিতে বরাবরই বিএনপি প্রার্থী দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচিত হয়ে আসছেন। দূর্নীতি মামলা দণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি খালেদা জিয়া এবার নির্বাচনে অযোগ্য হন। বিএনপি থেকে গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যান মোরর্শেদ মিলটন ও শাজাহানপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সরকার বাদল মনোনয়রপত্র জমা দেন এই আসনে।

দুইজনেই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ায় নির্বাচন কমিশন তাদের প্রার্থীতা বাতিল করে। ফলে ওই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী শূন্য হয়ে যায়। এ অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলুকে বিএনপি সমর্থন দেয়।বিএনপির সমর্থন নিয়ে ট্রাক মার্কার এক লাখ ৯০ হাজার ২৯৯ ভোট পেয়ে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

রেজাউল করিম বাবলুর এমপি নির্বাচিত হওয়ার ঘটনাটি পুরো বগুড়ায় আলোড়ন তৈরি করেছে। বিএনপি অধ্যুষিত এই এলাকায় ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে কোন আসনে দলটির কে জয়ী হলেন, কে হলেন না, আলোচিত সেই হিরো আলমের ভরাডুবি- সেই খবর ছাপিয়ে বগুড়ায় আলোচনায় এখন বাবলুর এই বিরাট বিজয়।

‘বাবুল এমপি হলো, দেশত আর বাকি থাকল কে’ ভোটের রাতে ফল দেওয়ার পর বগুড়া শহরের সাতমাথা চত্বরের পাশে একজন চায়ের দোকানি বলছিলেন এ কথা। তার সঙ্গে জনাদশেক ক্রেতার কথায় বগুড়া-৭ আসনে নবনির্বাচিত সাংসদ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যিনি মাত্র ১৭ ভোট পেয়েছিলেন। ভোটের আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলুর তৎপরতাই ছিল না, তিনিই ভোটের দিন মহাজোটের প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির স্ত্রীসহ সাত প্রার্থীকে হারিয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। অন্য ছয় প্রার্থী মিলে যে ভোট পেয়েছেন, বাবলু একাই পেয়েছেন তার দ্বিগুণ। বিষয়টি নিজের কাছেই বিশ্বাস হচ্ছে না নবনির্বাচিত এই সাংসদের।

বাবলু রাজনীতিবিদ নন, একসময় জেলা আদালত এলাকায় টাইপিস্ট ছিলেন। ওইসময় তার বিরুদ্ধে প্রতারণা নানা অভিযোগ ওঠে। চাকরি দেওয়ার কথা বলে, আদালত থেকে জামিন করিয়ে দেওয়ার কথা বলে তিনি নাকি বিভিন্ন সময় টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদার ফজু জানান, একাধিকবার রেজাউল করিম বাবলুর বিরুদ্ধে তিনি এধরনের অভিযোগ পেয়েছেন। এসব ঘটনায় কয়েক দফা সালিশ-দরবার করেছেন। তবে তিনি এখন তাদের এমপি!

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেজাউল করিম বাবলু বলেন, এমন কথা তার কানেও আসে। তবে এগুলো একেবারেই ভুয়া। তিনি কখনও এ ধরনের বাজে কাজ করেননি। নতুন নির্বাচিত হওয়া এই সাংসদের দাবি, তিনি পেশায় সাংবাদিক। আর সমাজের কাজ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানুষ নানা ধরনের অপপ্রচার চালায়। তার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

বাবলুর এলাকা শাজাহানপুরের বাসিন্দারা জানালেন, কিশোরকালেই বাবলু নানা ‘দুই নম্বরী’ শুরু করেন। ছাত্রজীবনে স্থানীয় গোয়াইল এলাকায় এক বাড়িতে গৃহশিক্ষক থাকার সময় জাল টাকা তৈরির সময় মেশিনপত্রসহ হাতেনাতে ধরাও পড়েন। ওই সময়ে মুচলেকায় ছাড়া পান তিনি। ওসব ব্যাপারে তার বক্তব্য , সেই আগের কথা তার মনে নেই। তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি, ঘটনার কথা নয়। তিনি জানালেন, তিনি শাজাহানপুর প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। এখন স্থানীয় একটি অনলাইনের সম্পাদক।

আলোচনায় না থেকেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রায় দুই লাখ ভোট পেলেন কীভাবে- সে বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্ম। এজন্য এ এলাকাটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও এখানে বিপুল ভোটে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এবার মামলায় সাজা খাটার কারণে প্রার্থী হতে পারেননি। বিএনপির পক্ষ থেকে গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যান মোরশেদ মিলটন মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন। তবে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ না করার অভিযোগে প্রার্থিতা বাতিল হয়। শেষ পর্যন্ত বিএনপি বাধ্য হয়ে নির্বাচনের একদিন আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী বাবলুকে সমর্থন দিলে তার কপাল খুলে যায়।

অবশ্য মঙ্গলবার বিএনপির এই সমর্থনের কথা অস্বীকারই করতে চাইলেন ভোটে পাস করা রেজাউল করিম বাবলু। তিনি দাবি করেন, শুক্রবার তিনি টেলিভিশনের খবরে দেখতে পান বিএনপি তাকে সমর্থন দিয়েছে। তবে তার সঙ্গে কারও যোগাযোগ হয়নি। এখন স্বতন্ত্র সাংসদ থাকবেন, নাকি বিএনপিতে যুক্ত হবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা পরিস্থিতিই বলে দেবে। কী করতে হবে তা ভবিষ্যতের ওপর নির্ভর করবে।

অনেক অভিযোগের মধ্যে এলাকা ঘুরে বাবলুর কিছু ভালো কাজের তথ্যও মিলেছে। তিনি গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় মাঝিড়া বটতলা এলাকায় পুরো রমজান মাসজুড়েই মানুষের মাঝে বিনামূল্যে ইফতার বিতরণ করেন। প্রতি শুক্রবার এলাকার বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ শেষে নিজের উদ্যোগে ধর্মীয় বয়ানও দেন।

বিএ-০৭/০২-০১ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)