বগুড়ার টুপি যায় সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে

করোনাকালীন সময়ে বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ। তাই এই অবসরে টুপি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটছে বগুড়ার ধুনট উপজেলার চালাপাড়া গ্রামের ডিগ্রী পড়ুয়া শিক্ষার্থী শাম্মি আকতার ও ছাবিনা খাতুনের। শুধু তারাই নয়, তাদের মতো শিক্ষার্থী জনি খাতুন, গোলাপী খাতুন, আয়েশা আকতারও এখন ঘরে বসে টুপি তৈরি করে আয় করছে।

তাদের পাশাপাশি গৃহবধূরাও সংসারের কাজ-কর্ম সেরে টুপি তৈরি করে সাংসারে বাড়তি আয় করছে। তবে টুপি তৈরি করতে কোন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন না হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের নারীদের কাছে এটা একটা পেশায় পরণিত হয়েছে। আর টুপির কাজ করে সহস্রাধিক পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছলও হয়েছে।

টুপি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় সুতা ও ক্রুসকাটা। সুতা ও ক্রুসকাটা পাইকাররা সরবরাহ করে থাকেন। আবার পাইকাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রামীণ নারীদের হাতের তৈরি এসব টুপি ক্রয় করে রাজধানীর চকবাজার, বাইতুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করেন।

সেখান থেকে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রেও রফতানি করা হয়। সারা বছরের তুলনায় ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় টুপির চাহিদা বেশি থাকে। তাই সারা বছরই টুপি তৈরির কাজ করেন ধুনট উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক নারী ও শিক্ষার্থী।

ধুনট উপজেলার চালাপাড়া গ্রামের ডিগ্রী পড়ুয়া শিক্ষার্থী শাম্মি আকতার ও সুবর্ণা খাতুন জানায়, বর্তমানে কলেজ বন্ধ থাকায় টুপি তৈরিতে বেশি ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের। আর টুপি তৈরি করে ঘরে বসেই আয় করছে। টুপির টাকা দিয়ে অনেক দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েরা খেলাপাড়া খরচ চালাচ্ছে।

তারা আরো জানায়, ৬০ টাকা দামের এক ডলার সুতা দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইন অনুযায়ি ২০ থেকে ২২টি টুপি তৈরি করা যায়। প্রতিটি টুপি প্রকারভেদে বিভিন্ন নামের বিভিন্ন দামের হয়ে থাকে। যেমন, ছত্রিশ ফুল টুপি ৯০ টাকা, তারা টুপি ১০০ টাকা, ফ্যান টুপি ৮৫ টাকা, পানির পোকা টুপি ৭০ টাকা, গুটি ফুল টুপি ৩৫ টাকা, দশ ফুল টুপি ৮০ টাকা, স্টার ফুল টুপি ৮০ টাকা ও লাউ ফুল টুপি ৭০ টাকায় পাইকাররা ক্রয় করে থাকেন।

গোপালনগর গ্রামের গৃহবধূ রোজিনা আকতার ও চম্পা বেগম জানায়, এই উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামেই টুপি তৈরির কাজ হয়। গ্রামের নারীরা সংসারের কাজ কর্ম সেরে অবসর সময়ে আশপাশের বাড়ির সবাই একত্রিত বসে খোশ-গল্প করেন আর টুপি তৈরি করতে থাকেন। আবার অনেক সুযোগ পেলেই ঘরে বসেই টুপি তৈরি করেন। টুপি তৈরি করে প্রতিমাসে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা তারা আয় করেন। এতে তাদের সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে বলেও জানান তারা।

চৌকিবাড়ী গ্রামের পাইকারি টুপি ব্যবসায়ী কামাল হোসেন জানান, প্রতি সপ্তাহে গ্রামে গ্রামে সুতা ও ক্রুসকাটা সরবরাহ করতে হয়। পরের সপ্তাহে টুপি কিনে আনেন। প্রতিটি টুপির দাম ডিজাইন ও প্রকারভেদে ৩৫ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত হয়। তবে আগে শুধু এক ডিজাইনের টুপি তৈরি হতো।

এখন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টুপিরও বাহারি নাম ও ডিজাইন দেওয়া হয়েছে। নতুন নতুন এসব ডিজাইন দেখলেই গ্রামের নারীরা টুপি তৈরি করে দিতে পারেন। তবে এজন্য তাদের কোন প্রশিক্ষণ নিতে হয় না। তাই ঘরে বসেই গ্রামীণ নারীরা বাড়তি আয় করছে। তাদের হাতের তৈরি টুপি সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়।

এসএইচ-১১/১০/২১ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)