মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার পরীমনি

পরীমনি

জি. এম. মুরতুজা: কয়েক দিন আগেও বাংলাদেশের যে মিডিয়াগুলো পরীমনি’র পজেটিভ সংবাদ কাভার করার জন্য ব্যস্ত ছিল। নিজ থেকে আগ বাড়িয়ে পরীমনি’র বিভিন্ন সচিত্র সংবাদ প্রচার ও প্রকাশে ব্যস্ত থাকতো। পরীমনিকে গ্রেফতারের পর কোন কোন মিডিয়ার ভুমিকা এখন পুরো উল্টে গেছে।

এসব মিডিয়ায় মিনিটে মিনিটে যেসব সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ হচ্ছে, সেইসব সংবাদমূল্য নিয়ে যেমন প্রশ্ন করা যেতে পারে, তেমনি পরীমনিকে অপরাধী প্রমাণে উঠে পড়ে লেগেছে, তারও আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। পরীমনি মিডিয়ার কাছে কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ? কেন সংবাদ মাধ্যমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে?

কিংবা আদালতে নিয়ে যাওয়ার আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই বা কেন একজন আটককৃত অভিনেত্রীকে অপরাধী প্রমাণে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছে? এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর হয়তো কোন দিনই মিলবে না!

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন পর্যন্ত পরীমনি’র বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে, তার অন্যতম হলো তার বাসায় মদ পাওয়া গেছে, খালি মদের বোতল পাওয়া গেছে, বাসায় মিনিবার পাওয়া গেছে। পরীমনি যে মাদক ব্যবসায়ী কিংবা কিংবা যৌন ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত এমন কোন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়নি।

তবে কেন কিছু মিডিয়া পরীমনিকে অপরাধী প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছ। এর কারন হলো তিনি যে কোন ড্রাইভিং ফোর্সের কোন একটি অংশকে নড়িয়ে দিয়েছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তার প্রতি কোন কোন মিডিয়ার ক্ষোভটা যেভাবে পড়ছে, তা দেখে এটা অনেকটাই স্পষ্ট।

একজন উঠতি নায়িকা ঢাকায় এসে গুটি কয়েক সিনেমা করেই বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি করে ফেলছেন, আলিশান জীবন যাপন করছেন, সেই অর্থের উৎস খোঁজার দায়িত্ব আরো ৫/৬ বছর আগে নেয়া উচিত ছিল মিডিয়াগুলোর। কারা তার পিছনে টাকা ঢালছেন, সেইসবের হিসেব-নিকেশ মিডিয়া যদি আগে থেকেই করতো, তাহলে আজকে মদ আটক নিয়ে তুঘলকী কাণ্ড বেঁধে যেত না। কিন্তু মিডিয়া সেই কাজটি না করে এতোদিন পরীমনি’র গুনকীর্তন করে গেছে। পরীমনিকে মিডিয়াই মহাতারকা বিনিয়েছে! জনপ্রিয় করে তুলেছে।

কিন্তু যেসব রথি মহারথিরা এইসব নায়িকাদের পিছনে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালছেন, বারে-নাইট ক্লাবে নিয়ে যাচ্ছেন, বিদেশে ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছেন, ফুর্তি করার জন্য আলিশান ফ্লাটে রাখছেন। আবার নিজেদের মিডিয়া দিয়ে তাদের মহাতারকাও বানাচ্ছেন।

এত সব ক্ষমতা যাদের থাকে, তাদের কাছে পরীমনিরা একেবারেই নস্যি, কেবল খেলনার পাত্র। পরীমনিদের ইনারা ব্যবহার শেষে ছুঁড়ে ফেলবেন এটাই স্বাভাবিক। আবার তাদের মিডিয়া ব্যবহার করে পরীমনিদের চরিত্রহীহনন করবেন, খারাপ ও নিকৃষ্ট নারী প্রমান করে ছাড়বেন। কাজেই এক হাতে যেমন তালি বাজে না, তেমনভাবে পরীমনিরা একার চেষ্টায় এত বিলাসবহুল জীবনও গড়তে পারেন না।

নিজেদের বিনোদনের জন্য ইনারা পরীমনিদের ব্যবহার করে ছোবড়া করে ছুঁড়ে ফেলেন। আবার নতুন কাউকে বেছে নেন। দিন শেষে পরীমনিরাই সমাজে চরিত্রহীনা বলে পরিচিতি পায়, আর তাদের ব্যবহারকারীরা নেপথ্যে ও অন্তরালেই থেকে যায়।

কেননা তাদের হাত অনেক লম্বা, তাদের মুখোশ উম্মোচন করার সাহস দেখালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বড় কর্তারা বেকায়দায় পড়েন, দায়িত্বচ্যূত করা হয়, অথবা তাদের গুরুত্বহীন জায়গায় বদলি করে দেয়া হয়।