শিশু যখন পাহারা দেয় পিতার লাশ !

শিশু

জি. এম. মুরতুজা: শিশুটির বয়স মাত্র সাত বছর। নাম মরিয়ম। করোনার উপসর্গ থাকায় বাবাকে নিয়ে এসেছিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সাথে ছিল তার মা। হাসাপাতালের জরুরী বিভাগে ষ্ট্রেচারের উপরে বাবাকে শুয়ে রেখে ভর্তির প্রক্রিয়া সারছিল তার মা। মরিয়ম ষ্ট্রেচারের পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিল বাবার প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট। আর নিরবে কাঁদছিল।

হঠাৎ বাবার শ্বাসকষ্ট তীব্র থেকে তীব্র আকার ধারণ করে। তারপরেই নিথর হয়ে যায় বাবার শরীর। তা দেখে ঢুকড়ে কেঁদে উঠে শিশু মরিয়ম। মা ছুটে এসে দেখে স্বামী ওপারে পাড়ি জমিয়েছে। মা মেয়ে ঢুকড়ে ঢুকড়ে কাঁধতে থাকে কিছুক্ষন। পরে মা নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে স্বামীকে বাড়ী নিয়ে যাওয়ার জন্য এ্যাম্বুলেন্সের খোঁজে যায়। আর শিশু মরিয়ম ষ্ট্রেচারের উপর পড়ে থাকা বাবার মরদেহ পাহারা দিতে থাকে।

মরিয়মকে কাঁদতে দেখে ছুটে আসেন কয়েকজন সাংবাদিক, জানতে চান তার বাবার কথা। মরিয়ম কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের বলতে থাকে, তার বাবার করুণ মৃত্যুর বাস্তব গল্প। বাবা হারানোর কষ্টের কথা শুনে চোখে পানি চলে আসে সাংবাদিক ও আশপাশের লোকজনের।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতল এখন মৃত্যুপুরি। প্রতিদিন করোনায় মারা যাচ্ছে অনেক মানুষ। মরিয়মের মত অনেক শিশু হারাচ্ছে বাবা ও অথবা মাকে।

সাংবাদিকদের কল্যাণে মরিয়মের মত কিছু করুণ গল্প গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসছে। কিন্তু অজানা থেকে যাচ্ছে অনেক মরিয়মের মা-বাবা হারিয়ে এতিম হওয়ার হ্নদয়বিদাড়ক মৃত্যুর গল্প।

মহামারী করোনা যে কত শিশুকে এতিম করছে, তার কোন সংখ্যা কিংবা পরিসংখ্যান নাই হাসাপাতাল ও সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। শুধু প্রার্থনা করি করোনায় এতিম হওয়া এই শিশুরা সুস্থ থাকুক, ভালো থাকুন। করোনার ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পাক আমাদের সকল শিশু।