রাবিতে প্রগতিশীল ছাত্র নেতাদের উপর ছাত্রলীগের হামলা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রগতিশীল ছাত্র নেতাদের উপর হামলা হয়েছে। প্রক্টরের উপস্থিতিতেই শনিবার বেলা ৩টার দিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এই হামলা চালান। এতে সাংবাদিকসহ দুইজন আহত হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এই মিলনায়তনে বাণিজ্যিক সিনেমা প্রদর্শণী বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন প্রগতিশীল ছাত্র নেতারা। আর সেখানে সংবাদ সংগ্রহে ছিলেন এক সাংবাদিক। এ ঘটনার পরও সিনেমা প্রদর্শণীর বিষয়ে অনড় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আহতরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ও খোলা কাগজের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আলী ইউনূস হৃদয় ও শাখা ছাত্র ইউনিয়নের প্রচার ও প্রকাশণা সম্পাদক মিঠুন চন্দ্র মোহন্ত। এদের মধ্যে মোহন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

এছাড়া মারধরের শিকার হন, রাবি প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক মহব্বত হোসেন মিলন, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিল হোসেন, ছাত্র ফেডারেশনের প্রচার সম্পাদক ইসরাফিল, কর্মী রাশেদ রিমন, আশরাফুল আলম।

হামলায় অংশ নেন- রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবরুন জামিল সুষ্ময়, ইমরান খান নাহিদ ও ছাত্রলীগের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফেরদৌস মোহাম্মদ শ্রাবণ।

রাবিতে প্রগতিশীল ছাত্র নেতাদের উপর ছাত্রলীগের হামলাপ্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দিন থেকেই ব্যাপক সমালোচনা শুরু করে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আপত্তি, বিক্ষোভ, গানে গানে প্রতিবাদ থাকার পরও বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন বাণিজ্যিক সিনেমা প্রদর্শন নিয়ে অনড় অবস্থান থাকে।

সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার বিকেল সাড়ে ১২ টায় বাণিজ্যিক ছবি না চালানোর প্রতিবাদ জানিয়ে মিলনায়তনের সামনে অবস্থান প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সেই শিক্ষার্থীদের তোয়াক্কা না করে সেখানে ছবি চলতে থাকে।

এরপর বিকেল সাড়ে ৩ টায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে সেখানে অবস্থান করতে দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমানের উপস্থিতেতে হঠাৎ করে মারধর করে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

ভুক্তভোগী আলী ইউনুস হৃদয় বলেন, আন্দোলন কারীদের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আন্দোলনকারীদের একজন আমার পিছনে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করেন। ওই সময় সাবরুন জামিল সুষ্ময়ের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতাকর্মী আমার কোমরে সজোরে লাঠি মারে।

ছাত্রলীগ নেতা সাবরুন জামিল সুষ্ময় মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করলেও ভিডিওতে সাংবাদিক হৃদয়কে মারধর করতে দেখা গেছে। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু সেই সময় উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা ইমরান খান নাহিদ দাবি করেন, সিনেমা প্রদর্শণী নিয়ে পরিস্থিতি উত্ত্যপ্ত হয়, আন্দোলনকারীরা প্রক্টরের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। শাখা ছাত্রলীগ প্রতিবাদ করেছে।

সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, টানা হেছড়া হয়েছে। তবে সাংবাদিক মারধরের বিষয়ে জানিনা। যেহেতু শুনলাম সেহেতু দেখছি বিষয়টি।

যদিও প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান দাবি করেছেন, ‘আমাকে কেউ লাঞ্চিত করেনি। তবে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এর বাইরে আর কিছু জানিনা।’

এছাড়া প্রদর্শনী বন্ধ হবে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রদর্শনী চলবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিশ^বিদ্যালয় প্রেসক্লাব, সাংবাদিক সমিতিতে কর্মরত সাংবাদিকেরা।

বিএ-১১/০১-১২ (শিক্ষা ডেস্ক)