যে কারণে একে একে পদত্যাগ করলেন ৩ সহকারী প্রক্টর

মো. তরিকুল ইসলাম

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একে একে তিন সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করলেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেছেন প্রক্টরিয়াল বডির ছাত্র উপদেষ্টা ও ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. তরিকুল ইসলাম।

বিশ্বদ্যিালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. নূরউদ্দীন আহমেদের কাছে পদত্যাগপত্রটি জমা দেন তিনি। রেজিষ্ট্রার পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেছেন।

পদত্যাগপত্রে তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রক্টরাল বডিতে ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির দায়িত্ব পালন করছিলাম। সম্প্রতি প্রশাসনবিরোধী অহিংস আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলায় ২০ জনেরও বেশি ছাত্র আহত হয়। এর মধ্যে আমার বিভাগের দু’জন শিক্ষার্থী রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে জানাচ্ছি যে, অহিংস আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ কোনও প্রকার কার্যকারী পদক্ষেপ নেয়নি। বরং ছাত্রদের ওপর বহিরাগত সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।’

পদত্যাগপত্রে এই শিক্ষক বলেন, ‘একই অভিযোগে আমার সহকর্মী ও সহকারী প্রক্টর সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবির পদত্যাগ করেছেন। তারপর আমি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অপেক্ষায় থাকি। এরপর জানতে পারে ন্যাক্কারজনক হামলার পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনও মামলা করেনি। এমনকি ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।যা, অত্যন্ত দুঃখজনক।’

তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলার প্রতিবাদে আমি প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করছি।’

পদত্যাগের বিষয়ে তরিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, যে প্রশাসন আমার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে পারে না, সেই প্রশাসনে আমি থাকতে চাই না। এ কারণেই পদত্যাগ করেছি।

এর আগে বুধবার রাতে সহকারী প্রক্টর ও কৃষি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হক শাহিন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।

নাজমুল হক শাহিনের আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর সহকারী প্রক্টর ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. হুমায়ূন কবির শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. নূরউদ্দিন আহমেদ বলেন, পদত্যাগপত্রটি আমি গ্রহণ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা ও সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেয়ার প্রশ্ন করা হলে, তিনি তার কোন উত্তর দেননি।

প্রসঙ্গত, গত ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও দ্য ডেইলি সানের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে অন্যায়ভাবে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে ফেসবুকে তীব্র সমালোচনার মুখে ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়।

অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, কেলেঙ্কারিসহ ১৬টি কারণ দেখিয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সকাল ১০টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। পরে বহিরাগতরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।

বিএ-১৩/২৩-০৯ (শিক্ষা ডেস্ক)