জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা প্রার্থীর চাকরির বাজারে কদর কম

বিশ্ববিদ্যালয়

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শিক্ষার্থীরা চাকরির বাজারে পিছিয়ে আছে বলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এক গবেষণায় দেখা দেখা গেছে৷ তারা বলছেন, তাদের ৬৬ ভাগ বেকার থাকেন৷

এই গবেষণার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘‘তবে আমাদের শিক্ষার মান উন্নত করতে হবে৷ আমাদের আরো বহুদূর যেতে হবে৷ আর শিক্ষাবিদরা বলেছেন, অন্যান্য পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান তত ভালো নয়৷ তবে এর আরো অনেক কারণ আছে৷ চাকরিদাতারাও তাদের সাধারণ ধারণা থেকে মনে করেন তাদের মান খারাপ৷ তাই তারা অবমূল্যায়িত হন৷”

বিআইডিএস জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৫৪টি সরকারি ও বেসরকারি কলেজের ২০১৭ সালে অনার্স ও মাস্টার্স পাশ করা এক হাজার ৬৩৯ জন শিক্ষার্থী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ২০২ জন এবং ২৩৩ জন চাকরিজীবীর মধ্যে এই জরিপ পরিচালনা করে মোবাইল ফোনে৷ জরিপে দেখা যায় স্নাতক পাশ করা শতকরা ৬৬ জন বেকার৷ যারা বেকার তাদের মধ্যে ৬২ ভাগই ব্যবসায় প্রশাসন থেকে পাস করা৷ যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের গড় বেতন ৩০ হজার টাকা৷

জরিপে এই পরিস্থিতির জন্য প্রধানত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানকে দায়ী করা হয়েছে৷ বলা হয়েছি তাদের আরো দক্ষ করে তুলতে হবে৷

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এখন ২৯ লাখের মত শিক্ষার্থী আছেন৷ আর অধিভুক্ত কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুই হাজার ২০০৷ এরমধ্যে ২৭৯টি সরকারি কলেজ৷ অনার্স পড়ানো হয় এমন সরকারি ও বেসরকারি কলেজের সংখ্যা ৫৫৭টি৷ বেসরকারি কলেজে অনার্সের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় কলেজের মান যাচাইয়ের জন্য সম্প্রতি ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর এব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷

শিক্ষাবিদ ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ মনে করেন, ‘‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থীরা যে অনেক কম চাকরি পাচ্ছেন তার জন্য মান অবশ্যই একটি প্রধান কারণ৷ তবে সেজন্য ভালো শিক্ষক, অবকাঠামো এবং পরিবেশ প্রয়োজন৷ যে শহরে আসতে পারেনা সে গ্রামের একটি কলেজে অনার্স পড়ে৷ তার নিজের আর্থিক সক্ষমতাও কম৷ তেমনি এইসব কলেজে সরকারের বিনিয়োগও কম৷ আবার অনেকে প্রয়োজন না থাকলেও যেকোনো একটি বিষয়ে ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষা নেয়৷ শিক্ষকদের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে৷”

তবে শুধু মান নয়, চাকরি দাতাদের প্রচালিত ধারণাও এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সিদ্দকুর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘চাকরি দাতারা সাধারণভাবে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ছাত্রদের মান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করাদের চেয়ে ভালো৷”

তিনি বলেন, ‘‘এটা অনেকটা সত্যও কারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান কলেজের শিক্ষকরা৷ আর এরমধ্যে বেসরকারি কলেজে শিক্ষক নিয়োগে ম্যানেজিং কমিটির নানা স্বজনপ্রীতি আছে৷”

তিনি আরেকটি কারণও বলেন৷ তা হলো, ‘‘এসএসসি ও এইচএসসিতে সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট যারা করেন তারা তো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন৷ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হন তাদের অনেকের তো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিরই যোগ্যতা নাই৷”

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বিআইডিএস-এর জরিপ পদ্ধতি এবং ফলাফল নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মুঠোফোনের এই জরিপ ইনফর্মাল সেক্টরকে অন্তর্ভুক্ত করেনি৷ আর মুঠোফোনের জরিপে বাস্তব চিত্র কতটুকু পাওয়া সম্ভব৷ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে অনেকেই ইনফরমাল সেক্টরে কাজ করেন৷ কেউ দেশের বাইরে যান কাজ নিয়ে৷”

তার মতে, ‘‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার পশাপাশি পরিবারে হাল ধরে৷ তার সংগ্রামী সেই দিকটি তুলে না ধরে যেভাবে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে তাতে তাদের মধ্যে হীনমন্যতা তৈরি হতে পারে৷”

তবে তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো অনেক দূর যেতে হবে৷ মান আরো উন্নয় করতে হবে৷ বিনিয়োগ বাড়াতে হবে৷ আমার অনেক শিক্ষক তো বেতনই পান না৷”

জরিপের সমন্বয়ক বিআইডিএস-এর সমন্বয়ক মিনহাজ মাহমুদ বলেন, ‘‘জরিপের ম্যাথোলডজিক্যাল একটা বিষয় থাকে৷ ইনফর্মাল সেক্টরে যারা কাজ করে তাদের ওপর জরিপ হয়নি৷ তবে আমরা দেখেছি অবস্থার উন্নয়ন করতে হলে তাদের কারিকুলাম চাকরির চাহিদা ভিত্তিক করতে হবে৷ আইসিটিসহ নানা প্রশিক্ষণ যুক্ত করতে হবে৷ যারা চাকরি দেন তারাও একথা বলেছেন৷ আমরা দেখেছি যারা চাকরি পান তাদের আইসিটিসহ নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে৷”

তথ্যসূত্র: ডয়চে ভেলে