শাবিপ্রবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশ

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরী সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে এ তথ নিশ্চিত করেন।

এছাড়া বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী ছাত্রী হলের বর্তমান প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজা স্বাস্থ্যগত কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। তার পরিবর্তে নতুন প্রভোস্ট হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরীকে দায়িত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিন দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, সকল বিভাগের প্রধান, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনার পরিচালক এবং প্রক্টর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তারা ছাত্রীদের দাবি মেনে নেন এবং সাত দিনের সময় চান কিন্তু আন্দোলনকারীরা তা না মানায় শিক্ষকরা ওই স্থান ত্যাগ করেন।

এরপর আন্দোলনকারীরা শিক্ষকদের পেছন পেছন স্লোগান দিয়ে চেতনা ৭১ এর সামনে থেকে উপাচার্য ভবনের দিকে এগিয়ে আসেন।

এ সময় উপাচার্য কার্যালয় থেকে নামলে তারা উপাচার্যের পথ অবরোধ করে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে শিক্ষকদের সহায়তায় উপাচার্যকে আইআইসিটি ভবনের দিকে নিয়ে যাবার সময় আন্দোলনকারীদের হামলার শিকার হয় উপাচার্যসহ কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষক ও সংবাদকর্মীরা।

পরে উপাচার্য আইআইসিটি ভবনে গেলে আন্দোলনকারীরা ওই ভবনের সদর দরজায় তালা মেরে দেন এবং কাউকেই ভেতরে প্রবেশ দেয় না। সবশেষ দুপুর ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি শিক্ষা ভবনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন।

পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, প্রক্টরিয়াল বডি ও কর্মকর্তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে আসেন। তারা তালা খুলে দিতে শিক্ষার্থীদের বারবার অনুরোধ করেন। শিক্ষার্থীরা অপারগতা প্রকাশ করে তাদের সাথে দীর্ঘক্ষণ বাকবিতন্ডায় জড়ান।

এ সময় কোষাধ্যক্ষ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করে বলেন, ভেতরে অবরুদ্ধ থাকায় উপাচার্য সঅসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে বাসায় নিয়ে যেতে হবে। তখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।

শিক্ষার্থীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করলে পুলিশের সঙ্গেও বাকবিতন্ডায় জড়ান শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর লাটিচার্জ শুরু করলে শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা শুরু করে। প্রায় ২৫ মিনিট উভয় পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট শর্টগানের গুলি নিক্ষেপ করে। পরে শিক্ষার্থীরা সরে গেলে তালা ভেঙে প্রায় আড়াই ঘন্টা পর উপাচার্যকে উদ্ধার করে পুলিশ তার বাসভবনে নিয়ে যায়। এরপর প্রায় আধ ঘন্টা পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।

সংঘর্ষ চলাকালে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও পুলিশেরও বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানান, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে কার্যালয়ের সামনে দেখা মাত্র দৌঁড়ে এসে তাকে ঘিরে ফেলে। শিক্ষার্থীরা তাকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা চালান। উপাচার্যের সঙ্গে থাকা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের টানাহেঁচড়া করে লাঞ্ছিতও করেন। পরে ৫ মিনিট উভয়পক্ষে ধাক্কা-ধাক্কি চলে। এ সময় শিক্ষক-কর্মকর্তারা প্রাচীর তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে নিয়ে যায় উপাচার্যকে।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের দাবি, উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাকে দেখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য স্লোগান দিয়ে পথ অবরোধ করেছিলেন।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেনি। শিক্ষকরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হন। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলাও চালান। এতে তিনিসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন।

তিনি বলেন, পুলিশ আত্বরক্ষার্থে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বর্তমানে পুলিশ ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমরা খুবই মর্মাহত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। শিক্ষকরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সব দাবি মানার আশ্বাস দিলেও তারা শিক্ষকদের সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করেন। এরপর উপাচার্য ভবনের সামনে গিয়ে উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন। উপাচার্যকে রক্ষা করতে গিয় শিক্ষার্থীদের হামলায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, রোববার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগের দাবিসহ তিন দফা দাবি আদায় এবং ছাত্রীদের চলমান আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগে রাস্তা অবরোধ করে রাখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক সমিতির সভাপতি শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে হলের গুণগত মান উন্নত এবং অব্যবস্থাপনার সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান। এ জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে সাত দিনের সময় চান। কিন্তু শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি না মানার পরিপ্রেক্ষিতে তারা বর্ধিত সময় দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন এবং তখন শিক্ষার্থীরা তাদের সামনে ধিক্কার ধিক্কার, প্রশাসন ধিক্কার বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

এসএইচ-২৫/১৬/২২ (শিক্ষা ডেস্ক)