২৬ দিন পর বাসভবনের বাইরে শাবিপ্রবি উপাচার্য

অবশেষে ২৬ দিন পর নিজ বাসভবনের বাইরে বের হয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। গত ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনি তার বাসভবনেই অবস্থান করছিলেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ক্যাম্পাসে গেলে উপাচার্য বাসা থেকে বের হন।

সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে ভিসি এবং অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনায় বসেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন বলেন, মন্ত্রী আলোচনায় শিক্ষকদের প্রতি ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি উপাচার্যকে তার দায়িত্ব পালন করে যেতে বলেছেন।

এ সময় কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রী বলেছেন- উপাচার্যের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যেসব অভিযোগ তুলেছে, তার তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে রাষ্ট্রপতিই সব সিদ্ধান্ত দেবেন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। দিবসটি যেন যথাথতভাবে পালন করা হয় সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

এর আগে বিকেলে সিলেট সার্কিট হাউজে বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তবে ভিসির পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আচার্য। এ বিষয়টি আচার্যের কাছে তুলে ধরা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চলমান সংকট নিরসনে শুক্রবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে বিমানযোগে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান শিক্ষামন্ত্রী। এই সফরে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ জানুয়ারি শাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদে লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন হলের ছাত্রীরা।

এই দাবিতে আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জানুয়ারি বিকেল ৫টায় তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে।

শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় উপাচার্যকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবি করে আমরণ অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

টানা সাতদিন পর ২৬ জানুয়ারি অনশন ভাঙেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এরপর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, নাটক, খেলাধুলার মাধ্যমে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রক্টর, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালকের অব্যাহতি ছাড়া আর কোনো দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।

এসএইচ-১২/১১/২২ (শিক্ষা ডেস্ক)