পরীমনি দ্রুত কাজে ফিরতে চান

বাসায় অভিযান চালিয়ে আটক। মাদকের মামলায় তিন দফা রিমান্ড। পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা-সমালোচনা। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন। অবশেষে দীর্ঘ ২৮ দিন পর বুধবার মুক্ত আকাশে ডানা মেলেন ঢাকাইয়া চলচ্চিত্রের আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি। মুখে চিরচেনা সেই হাসি। হুড খোলা গাড়িতে করে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি বেরিয়ে আসেন নায়িকার মতোই। ঢাকায় ফেরার পথে ভক্ত অনেকের সঙ্গেই হাত মেলান, হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। তবে মুক্তির সেই খবরকেও ছাপিয়ে যায় পরীমনির ডান হাতের তালুতে মেহেদি দিয়ে লেখা- ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’।

অবশ্য গ্রেপ্তারের পর কাছের মানুষদের যে তিনি হাড়ে হাড়ে চিনেছেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারাগার থেকে সরাসরি ঢাকার বনানীর বাসায় ফেরেন এই নায়িকা। গাড়ি থেকে নেমে লোকের জটলা পেরোন বেশ হাসিমুখেই। বাসায় বসেই কথা বলেছেন আমাদের সময়ের সঙ্গে। জানিয়েছেন তার বর্তমান পরিস্থিতির কথা। দীর্ঘ আলোচনায় তুলে ধরেন কাজে ফেরার পরিকল্পনা।

‘খুব সমস্যায় আছি। হুট করে বাড়ির মালিক বলছেন বাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা। এখন আমি কোথায় যাব? চাইলেই কি বাসা পাওয়া যাবে? আমার তো ছোট্ট বাসা না যে, চাইলাম আর কোথায় গিয়ে উঠলাম। এমনিতেই বাসা পুরো অগোছালো। সবকিছু গোছাতেও সময় লাগবে।’ কথোপকথনের শুরুতেই এমন কথা বলেন পরীমনি।

পরীমনি বলেন, ‘আমার জন্য নাকি আশপাশের ফ্ল্যাটের মানুষদের সমস্যা হচ্ছে। অবশ্য এটা আমিও বুঝতে পারছি। কারণ বাসার নিচে অনেকে এসে ভিড় করছেন। শুভকাক্সক্ষীরা আসছেন, সাংবাদিক ভাইয়েরা আসছেন, উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন। এতে আশপাশের মানুষ বিব্রত হচ্ছেন। বাচ্চারা ভয়ে নিচে যেতে পারছে না।’

‘এটা স্বাভাবিক। সবাই চাইবে আপনার খোঁজ নিতে। দু-একদিন পর অবশ্য সব ঠিক হয়ে যাবে। তবে এতদিনের খারাপ সময়টা কীভাবে পার করেছেন, সেটা জানতে চাইব।’ পরী বললেন- ‘আপনাদের দোয়ায় সব ঠিক হয়ে যাবে সেটা আমিও জানি। তবে সত্যি কথা বলতে কী- আমি এখন এসব নিয়ে কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই। নিজের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গেই এখনো কথা বলতে পারিনি। আর মানুষজন এমনভাবে বাসার সামনে ভিড় করছে- যেন এখানে বোমা বানানোর সময় আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন এগুলো কাকে বলব, কাকে বললে বুঝবে, সেটাই জানি না।’

এখন কী করতে চাচ্ছেন- উত্তরে নায়িকা বললেন, ‘এখন এমন পরিস্থিতি, যদি বাসা ছাড়তে হয় তবে আমি পুরোপুরি সমস্যায় পড়ে যাব। বিষয়টা হবে এমন যে, আমার বাসস্থানটাও আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তাই সবার কাছে অনুরোধ- কারও জন্য আমি যেন এই বিপদে না পড়ি, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এটা আমার নিজের বাড়ি না, ভাড়া বাড়ি।’

একটা প্রশ্নের উত্তর সবাই জানতে চায়, কারাগারে কেমন ছিলেন? চেনা হাসি দিয়ে পরীমনি বললেন, ‘সবাই যেমন থাকে, আমিও তেমনই ছিলাম। ওটা যেন দুনিয়ার বাইরের কোনো জগৎ। সময় কাটে না। দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে আপনি কতটা সময় পার করতে পারবেন? আর এটা নিয়ে এখন বলার কিছু নেই।’

পরীর এমন পরিস্থিতির সময়ে অনেক বিশিষ্টজন দাঁড়িয়েছেন তার পাশে। তার মুক্তির জন্য অনেকেই বলেছেন, লিখেছেন। মুক্তির পর তার জীবন কেমন হওয়া উচিত সেটাও বলেছেন অনেকে। তাকে বুঝেশুনে কাজ করতে হবে। একজন দিকনির্দেশক দরকার তার, এমন কথাও বলেছেন কেউ কেউ। যার অনেক কিছুই হয়তো পরী জানেন না।

তাই তার কাছে জানতে চাওয়া হলো, কাজের বিষয়ে কী ভাবছেন- ‘কাজ করতে চাই। আমার পরিচয় আমি একজন অভিনেত্রী। মানে অভিনয় আমার পেশা। আর এই পেশা আমি চাইলেও ছাড়তে পারব না। আমাকে দিয়ে অভিনয় ছাড়া অন্য কিছু হবে না। যাদের সঙ্গে আমি অভিনয় করেছি তারা অনেকেই আমার পাশে আছেন।’

‘তা হলে কবে থেকে কাজ শুরু করবেন বলে ঠিক করেছেন?’ পরীর জবাব, ‘পারলে তো এখন থেকেই শুরু করি। অনেক ছবির কাজ বাকি। অনেকগুলো শুরুই করতে পারিনি। সবাই আমার জন্য বসে আছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো পরিচালকের সঙ্গে আমার কথা হয়নি। কথা বলে ডেট ঠিক করে কাজ শুরু করে দিব। আমার জন্য যেন কোনো প্রযোজকের ক্ষতি না হয়, সে দিকটা মাথায় রেখেই কাজ করব। সবার দোয়া চাচ্ছি। সবার সহযোগিতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজে ফিরতে চাই।’

“মুক্তির পর আপনার হাতে মেহেদী দিয়ে ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’ লেখাটি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। এটা দিয়ে কী বোঝাতে চেয়েছেন?” সঙ্গে সঙ্গেই পরীর জবাব- “যারা ভিতরে ভিতরে গালি দেয়, আর বাইরে ‘আই লাভ ইউ’ বলে তাদের উদ্দেশ্যে আমার এই বার্তা।”

এসএইচ-০৬/০২/২১ (বিনোদন ডেস্ক)