সন্তানদের ওপর পাশবিক অত্যাচার

১৩ সন্তানের ওপর চরম শারীরিক অত্যাচারের কথা অবশেষে আদালতে স্বীকার করে নিয়েছে টারপিন দম্পতি। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার বিকেলে আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসের আদালতে তারা এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

জানা গেছে, ৫৭ বছরের ডেভিড অ্যালেন টারপিন এবং তার স্ত্রী ৫০ বছরের লুইজি অ্যানা টারপিন তাদের ১৩ সন্তানকে চরম শারীরিক অত্যাচারের কথা স্বীকার করে শাস্তির আবেদন করেছে। সন্তানদের আদালতের আবহাওয়া থেকে দূরে রাখতেই তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে বিচারককে জানিয়েছে ডেভিড এবং লুইজি। বিচারক দু’জনকেই ১৪টি শাস্তিযোগ্য ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছেন।

রিভারসাইড কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির দপ্তর থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, আগামী এপ্রিলে সাজা ঘোষণা করা হবে। টারপিন দম্পতির ২৫ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। তবে ডেভিড এবং লুইজির বয়সের কথা বিচার করে ক্যালিফোর্নিয়ার আইন অনুযায়ী ২৫ বছরের কারাদণ্ডই তাদের দিতে পারেন বিচারক। ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মাইকেল হেস্টিন বলেছেন, এ ধরনের মামলা তিনি তার আইনি পেশার জীবনে কখনও দেখেননি।

২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারি প্রকাশ্যে আসে টারপিন পরিবারের কথা, যখন ডেভিড-লুইজির ১৭ বছরের মেয়ে জর্ডন তাদের ক্যালিফোর্নিয়ার পেরিস শহরের বাড়ির জানলা গলে পালিয়ে থানায় যায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই বাড়ি থেকে মোট ১৩ ভাইবোনকে উদ্ধার করে। সব থেকে বড় ভাইয়ের বয়স ছিল ২৯ বছর এবং সব থেকে ছোট বোনের বয়স ছিল দু’‌বছর। তবে সব ভাইবোনই এতটাই অসুস্থ এবং দুর্বল ছিল যে ২৯ বছরের যুবককে দেখে মাত্র ১৮ বছরের তরুণ ভেবেছিলেন পুলিশ অফিসাররা।

পুলিশ জানায়, দুটি ভাইবোনকে খাটের সঙ্গে চেন দিয়ে এত শক্ত করে বেঁধেছিল তাদের মা-বাবা যে তাদের হাতের চামড়া উঠে মাংসপেশিতে চেন গেঁথে গিয়েছিল। এমনকী বাইরে সেভাবে তারা বের হতে না পারার জন্য পুলিশকেও বাড়ির ঠিকানা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি জর্ডন।

১২ ভাইবোনই পরে পুলিশকে জানায়, তাদের স্কুলে যেতে দেওয়া হত না। কোনো অনুষ্ঠানে সবাইকে একরকম পোশাক পরতে বাধ্য করা হত এবং মা-বাবাই তাদের সঙ্গে করে নিয়ে যেত এবং নিয়ে আসত। দিনে ২০ ঘণ্টা ঘুমাতে বাধ্য করত ডেভিড-লুইজি। মাঝরাতে উঠিয়ে বাগানে হাঁটতে বলা হত। মধ্যাহ্নভোজ এবং নৈশাহারের খাবার হিসেবে বাদাম, চিপস্ দেওয়া হতো। স্যান্ডুইচের বেশি কিছু খাবারও দিত না সন্তানদের টারপিন দম্পতি। বছরে একবার মাত্র তাদের স্নান করার অনুমতি ছিল।

জানা যায়, মারাত্মক অসুস্থ হলেও কোনো দিন তাদের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়নি ডেভিড-লুইজি। একবার দুষ্টুমি করার জন্য দুই ছেলেকে খাঁচার মধ্যে দিনের পর দিন কিছু না খেতে দিয়ে আটকে রেখেছিল তারা।

টারপিনদের প্রতিবেশীরা পরে পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তারা দেখতেন রাতে বাগানে গান গাইতে গাইতে ঘুরছে পরিবারের সবাই। তবে সেটা নিজেদের মধ্যে আনন্দের মুহূর্ত বলেই ভাবতেন তারা। কিন্তু সবাই পুলিশকে একথাও জানিয়েছিলেন, স্কুল, কলেজে কোনো ভাইবোনকে না পাঠানোর প্রসঙ্গ বরাবর এড়িয়ে গিয়েছিল মা-বাবা। ১৩ জন ভাইবোনই এখন যুক্তরাষ্ট্রের শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের সুরক্ষা পরিষেবা বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। ‌

এসএইচ-২১/২৪/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)