মন্দির সংস্কার করছেন মুসলিম গ্রামবাসীরা

পুলওয়ামায় যে স্থানে সিআরপিএফএর ৪২জন জওয়ান জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিলেন, সেখান থেকে আকচান গ্রামের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। এই গ্রামেই ৮০ বছরের পুরনো মন্দির সংস্কার করছেন মুসলিম গ্রামবাসীরা।

ভারতের অনলাইন নিউজ এইট্টিন এ খবর দিয়ে প্রতিবেদনে বলেছে, এমন খবর পড়লে মনটাও ভাল হয়ে যায়। দেশজুড়ে যখন অস্থির পরিস্থিতি, যখন যুদ্ধ-যুদ্ধ একটা পরিবেশ চারিদিকে, তপ্ত হচ্ছে সীমান্তে, বাড়ছে ধর্মে ধর্মে, জাতিতে জাতিতে বিরোধ… তখন এমন খবরে আবার যেন হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাসটা ফিরে আসে।

আবার জীবনের উপর, প্রেমের উপর, দেশের উপর আলাদা ভালবাসা জন্মায়। গ্রামের মধ্যে ঢুকলে একটা আলাদা সম্প্রীতির সুর যেন ফিসফিস করে এক গাদা গল্প বলে চলে। এই গল্প ঐক্যের গল্প, এই গল্পে হিন্দু-মুসলিম হয় না, এই গল্পে গুজবের স্থান নেই, এই গল্প পাশে দাঁড়ানো শেখায়।

গল্পের মতোই এ গ্রামে একেবারে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি মসজিদ আর একটি মন্দির। গ্রামের বাসিন্দারা সকলেই মুসলিম ধর্মাবলম্বী। শুধু রয়েছেন এক ঘর হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবার এই গ্রামের বাকি হিন্দু পরিবার অস্থির কাশ্মীর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন ১৯৯০ সালে। গ্রামের ৮০ বছরের পুরনো সেই মন্দিরটি তখন থেকেই বন্ধ।

কিন্তু এত বছরে মন্দিরটির দেখভালও হয়নি তেমন একটা। এবার সেই উদ্যোগই নিয়েছেন গ্রামবাসীরা। ব্রাহ্মণ পরিবারের সঙ্গে দল বেঁধে কাজে হাত লাগিয়েছেন মুসলিম গ্রামবাসীরাও। স্থানীয় মুসলিম ওয়াকফ ট্রাস্টের কাজ তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন ভূষণ লাল। তিনি বলছেন, ‘‘এক সময় এই মন্দির থেকে ভেসে আসত পুরোহিতের মন্ত্রচ্চারণ। পুরনো দিনের সেই গর্বই ফিরিয়ে আনতে চাই আমরা। আশপাশের গ্রামের হিন্দুদেরও আমরা বলেছি এখানে এসে পুজো দিতে। বহুদিন পর আবার ঠাকুরের নামগান শুনে ঘুম ভাঙবে আকচান গ্রামের।

সাক্ষাৎকারে ভূষণ বলেন, প্রথমে মাটি ফেলে জমি উঁচু করা হয়েছে। মন্দির সংলগ্ন ঝর্ণা আর ড্রেনটা আবার নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। দরজা রং করা হচ্ছে। এরপরেই মন্দিরে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হবে। মন্দিরের চূড়া নতুন করে তৈরি হচ্ছে।

মুহম্মদ ইউনুস মন্দিরের কাজ করছেন। বললেন, ‘পুরনো দিনগুলো ফিরে পেতে চাই আমরা। আমাদের যে হিন্দু প্রতিবেশীরা তাদের ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তারা আবার ফিরে আসুন। এই মন্দিরে সবাই এসে প্রার্থনা করুন্ স্মৃতিচারণার মাঝে মধ্যেই মগ্ন হয়ে যাচ্ছিলেন ইউনুস। বললেন, ‘তখন একজন বৃদ্ধ পন্ডিত ছিলেন এই মন্দিরে। রোজ সকালে পুজোর পর তিনি আমাদের মিষ্টি, ড্রাই ফ্রুটস দিতেন। ওখানে খেলতাম আমরা। তারপর প্রসাদ নিয়ে ফিরে আসতাম।’

ওয়াকফ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান নাজির মীর জানালেন, এই কাজে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। এই গ্রাম খুব শীঘ্রই সকলের কাছে আদর্শ হয়ে উঠবে এমনই আশা করছেন মীর।

এসএইচ-২৩/০৫/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)