নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে আপনার যা জানা উচিত

জেসিন্ডা আর্দার্ন৷ নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থেকে তিনি এখন পরিণত হয়েছেন বিশ্বকে শান্তির পথে নেতৃত্ব দেয়ার দূত হিসেবে৷ ডয়চে ভেলের সৌজন্যে তাঁর উত্থানের গল্প থাকছে আজ জুমবাংলার পাঠকদের জন্য।

যোগাযোগের ছাত্রী

১৯৮০ সালে জন্ম নেয়া আর্দার্নের বেড়ে ওঠা মুরুপাড়া নামে নিউজিল্যান্ডের মাউরি আদিবাসী অধ্যুষিত একটি ছোট্ট শহরে৷ যেখানে শিশুদের পায়ে দেয়ার মতো জুতা ছিল না, এমনকি দুপুরে তারা খাবারও পেত না৷ এই ঘটনাই তাকে রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ করে৷ উচ্চ মাধ্যমিক শেষে আর্দার্ন পড়াশোনা করেন যোগাযোগ বিদ্যায়৷ তার আগে ১৭ বছর বয়সেই যুক্ত হন নিউজিল্যান্ডের লেবার পার্টির রাজনীতিতে৷

বিশ্ব রাজনীতির পাঠ

স্নাতক শেষ করে আর্দার্ন নিউজিল্যান্ডের লেবার পার্টির একজন সংসদ সদস্যের অধীনে গবেষক হিসেবে কাজ করেন৷ ২০০৫ সালে পাড়ি জমান ব্রিটেনে৷ আড়াই বছর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের মন্ত্রীসভার দপ্তরে চাকরি করেন৷ ২০০৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব সোশ্যালিস্ট ওয়েলথের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘুরে বেড়িয়েছেন আলজেরিয়া, চীন, ভারত, ইসরায়েল, জর্ডার্ন ও লেবাননে৷

জাতীয় রাজনীতির পথ চলা

২০০৮ সালে আর্দার্ন লেবার পার্টির সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েও ১৩,০০০ ভোটে হেরে যান৷ কিন্তু দেশটির সংবিধানিক নিয়মে তিনি সংসদে যাওয়ার সুযোগ পান৷ ২৮ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ হিসেবে জায়গা করে নেন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে৷

‘জেসিডামেনিয়া’

২০১৭ সালে লেবার পার্টির উপ প্রধান নির্বাচিত হন আর্দার্ন৷ নির্বাচনের দু’মাস আগে দলটির প্রধান পদত্যাগ করলে সেই ভারও চাপে তাঁর কাঁধে৷ নির্বাচনি প্রচারে তরুণদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হন আর্দার্ন৷ তাঁকে নিয়ে এসময় দেশটিতে জনপ্রিয়তার যে ঢেউ উঠে, তা পরিচিত ‘জেসিডামেনিয়া’ নামে৷

বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী প্রধানমন্ত্রী

মাত্র দু’মাসের নেতৃত্বে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাই দলকে নির্বাচনে বিজয়ী করেন আর্দার্ন৷ ২০১৭ সালে ৩৮ বছর বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন৷ নিউজিল্যান্ডের ১৫০ বছরের ইতিহাসেও তিনি সবচেয়ে কম বয়সি সরকার প্রধান৷

প্রভাবশালী নারী

আর্দার্ন সমকামী বিবাহের সমর্থক৷ জলবায়ু পরিবর্তন, শিশু দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চকিত৷ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের সরকার হবে সহানুভূতিশীল৷ ২০১৮ সালে ‘ফোর্বসের পাওয়ার উইমেনের’ তালিকায় জায়গা করে নেন তিনি৷ আছেন টাইম ম্যাগাজিনে সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকাতেও৷

সন্তান জন্ম

টিভি উপস্থাপক ক্লার্ক গেফোর্ডকে বেছে নিয়েছেন তিনি সঙ্গী হিসেবে৷ ২০১৮ সালের ২২ জুন বেনজির ভুট্টোর পর বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বকালে সন্তানের জন্ম দেন আর্দার্ন৷ এজন্য মাত্র ছয় সপ্তাহের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছিলেন তিনি৷

সন্তান কোলে জাতিসংঘে

বিশ্বে প্রথমবার কোনো প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের কক্ষে সন্তান নিয়ে বক্তৃতা দিতে যান৷ তিনি জেসিন্ডা আর্দার্ন৷ গত বছর নেলসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটে অংশ নিয়ে আর্দার্ন বিশ্ব গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছেন৷ বক্তৃতা দেয়ার সময় সন্তান ছিল সঙ্গী ক্লার্ক গেফোর্ডের কোলে৷

ক্রাইস্টচার্চের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া

ক্রাইস্টচার্চে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যার পর জেসিন্ডা আর্দার্নকে নতুন করে চেনে বিশ্ব৷ এই ঘটনার অভিযুক্তকে কোনো কার্পণ্য না করেই সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করেন তিনি৷ দ্রুত অস্ত্র আইন পরিবর্তনের ঘোষণা দেন৷ মুসলমানদের উদ্দেশ্যে জানান, নিউজিল্যান্ড মোটেও এমনটা নয়৷ এই দেশে তাঁরা স্বাধীনভাবেই থাকতে পারবে৷

হিজাবে আর্দার্ন

জেসিন্ডা আর্দার্ন ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার পর প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছেন নিহতদের স্বজনদের কাছে৷ তাঁদের জড়িয়ে ধরছেন, সমব্যাথী হচ্ছেন৷ শুধু তাই নয়, মুসলমানদের সাথে একত্মতার প্রকাশ হিসেবে তিনি একাধিক দিন হিজাব পরে বেরিয়েছেন৷

সংসদে আরবি ভাষা

১৯ মার্চ সংসদে বক্তব্য দেন আর্দার্ন৷ শুরুতেই সবাইকে ‘আস সালামু আলাইকুম’ বলে সম্বোন্ধন করেন তিনি৷ জানান ক্রাইস্টচার্চের ঘটনায় অভিযুক্তের নামও তিনি কখনও মুখে আনবেন না৷

আরএম-১০/২১/০৩ (অনলাইন ডেস্ক)