২শ’ কি.মি. গিয়ে মানিব্যাগ ফিরিয়ে দিলেন গার্ড

ঘটনাটি মঙ্গলবারের। বেলা দু’টায় কাজ শেষ হওয়ার পরে এমনিই রাস্তায় ঘুরছিলেন ভারতের ভুবনেশ্বর শহরের বেসরকারি নিরাপত্তা গার্ড মুদবির খান। হঠাৎই রাস্তায় একটি মানিব্যাগ পড়ে থাকতে দেখেন।

তিনি বলেন, ভেতরে প্রায় শ’ চারেক টাকা ছিল। কিন্তু তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল ওর ভেতরে থাকা নথিগুলো। ড্রাইভিং লাইসেন্স, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, প্যান কার্ড আর আধার কার্ড ছিল। আমার নিজেরও একবার মানিব্যাগ হারিয়ে গিয়েছিল। সব নথি নতুন করে করাতে গিয়ে অনেক ভোগান্তি হয়েছিল। তাই ভাবছিলাম যার মানিব্যাগ হারালো তাকে তো অনেক ভোগান্তি সহ্য করতে হবে।

নথিগুলো থেকে মানিব্যাগের মালিকের নাম জানতে পেরেছিলেন তিনি। ব্যাগটি জ্যোতি প্রকাশ রাম নামের একজনের। কিন্তু কোনও ফোন নম্বর পাওয়া যায়নি।

ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর শহরের একটি দোকানের রসিদ ছিল ব্যাগের ভেতর। সেখানে ফোন করেন মুদবির খান। কিন্তু তারা কোনও হদিস দিতে পারেনি।

‘আধার কার্ডে তার বাড়ির ঠিকানা ছিল কেওনঝড় জেলার একটি গ্রামের। নতুন আধার কার্ডে ফোন নম্বর থাকে। কিন্তু এটা বোধ হয় আগেকার, তাই কোনও মোবাইল নম্বর পাইনি। আমি তখনই সিদ্ধান্ত নিই যে ওই গ্রামে যাব।’

বাসে, মোটরবাইকে, পায়ে হেঁটে ২শ’ কি.মি.

রাতেই বাস ধরে মাঝরাতের পর কেওনঝড় জেলার আনন্দপুর শহরে পৌঁছান মুদবির খান। ছোট শহর। তাই মাঝরাতে একেবারে শুনশান। বাসস্ট্যান্ডেই বাকি রাতটুকু কাটিয়ে দেন তিনি।

ভোর সাড়ে ৪টার দিকে একটা চায়ের দোকান খোলে। সেখানে খোঁজ করে জানতে পারেন ফকিরপুর গ্রামটি কোন দিকে। একজন মোটরসাইকেল আরোহী অনুগ্রহ দেখিয়ে গ্রামের তিন কিলোমিটার দূরে ছেড়ে দেন তাকে। তারপর পায়ে হেঁটে তিনি গ্রামে ঢোকেন।

গ্রামের একজন চায়ের দোকানি মানিব্যাগটির মালিকের বাড়ি দেখিয়ে দেন। জ্যোতিপ্রকাশ রাম একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি চাকরি করেন ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জামশেদপুরে। গ্রামের চায়ের দোকানি তাকে ফোন করে মানিব্যাগ ফেরত পাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেয়।

ডা. জ্যোতি প্রকাশ রাম বলেন, আমি তো ফোন পেয়ে অবাক। ভাবতেই পারিনি যে আগের দিন সন্ধ্যায় হারিয়ে যাওয়া মানিব্যাগ পরদিন ভোরের মধ্যে আমার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছিয়ে দিতে যাবে কেউ। ওই ব্যাগটা ফিরে পাওয়ার আশাই করিনি।

মুদবির খান ঐ চিকিৎসকের বাবা এবং ভাইয়ের আধার কার্ডের সাথে ডা. রামের আধার কার্ডের তথ্য মিলিয়ে ফেরত দেন মানিব্যাগটি।

ডা. রামের বাবা জোর করে যাতায়াতের খরচ হিসাবে এক হাজার রুপি হাতে গুজে দেন মুদবির খানের হাতে।

‘নিজে ভুগেছি, তাই ফেরত দিয়ে এসেছি’

মুদবির খান একাই থাকেন ভুবনেশ্বর শহরে। উড়িষ্যারই কটক জেলার টিগ্রিয়া ব্লকে তার গ্রাম পাঙ্কাল। সেখানেই বাবা, মা, স্ত্রী, পুত্র, ভাই থাকে। পরিবারের রোজগেরে সদস্য একা তিনিই।

এভাবে একজন দরিদ্র নিরাপত্তাকর্মী এতটা কষ্ট করে মানিব্যাগ ফিরিয়ে দেবে – এতে বিস্মিত হয়েছেন ডা. রাম।

‘মুদবির সাহেব যা করেছেন, তা যে শুনছে, সেই অবাক হয়ে যাচ্ছে। আমি ওকে বলেছি ওর গ্রামের জন্য আমি কিছু করতে চাই। উনি সত্যিই একটা রোল মডেল।’

তবে মুদবিল খান মনে করছেন না যে তিনি মহান কোনও কাজ করেছেন।

তিনি বলেন, নিজে ভুগেছি মানিব্যাগ হারিয়ে। তাই আরেকজনের মানিব্যাগ কুড়িয়ে পেয়ে ফেরত দিয়ে এসেছি।

এসএইচ-১৪/২৩/২০ (অনলাইন ডেস্ক)