যেখানে বন্দি থাকে জিন!

ছোটবেলায় জিনের গল্প অনেকেই শুনে থাকবেন। তবে বাস্তবেও এই জিনের ভয়ে আছে পুরো এক দেশ। যেখানে মরুভূমির মাঝেই প্রায় ১০০ ফুট চওড়া এক কূপ রয়েছে, আর সেই কূপেতেই নাকি জিন বন্দি করে রাখা হয়েছে।

আসলেই এরকম কিছু আছে সেখানে, নাকি সবই মানুষের ধারণা। জায়গাটি ইয়েমেনের আল-মাহার প্রদেশের একটি মরুভূমিতে থাকা কূপটির গভীরতা ১১২ মিটার বা ৩৬৭ ফুট। বিশাল সাইজের কোনো বাড়িও নিমিষেই ভেতরে চলে যাবে এই কূপের।

ইয়েমেনে এই কূপ নিয়ে প্রচলিত উপকথা রয়েছে। তারা এই জায়গাকে ‘জিনদের কারাগার’ বলে থাকে। দুষ্টু জিনদের এখানে বন্দি করতে এই অন্ধকূপ তৈরি হয়েছিল। এখানে একবার ঢুকলে সাধারণ মানুষের বেঁচে ফেরা অসম্ভব। এমনই নানা কুসংস্কারে এখানের রহস্য উদঘাটন এতদিন হয়ে ওঠেনি।

কূপটিকে বলা হয় বারহুটের কূপ। তবে ইয়েমেনের মানুষ ওই নাম মুখেও আনেন না। বারহুটকে তারা ডাকেন ‘ওয়েল অব হেল’ বা ‘নরকের কূপ’ বলে ডাকেন। বাকি বিশ্বেও বারহুটের এই নামটিই জনপ্রিয় বেশি। সম্প্রতি ওমানের ১০ জন গুহাবিদ যাবতীয় সংস্কারকে তুলে বারহুট অভিযানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের মধ্যে আট জন কূপের ভেতর প্রবেশ করেছিলেন। বাকিরা অপেক্ষা করছিলেন বাইরে।

ইয়েমেনি গুহা বিশেষজ্ঞদের বারহুটের তলদেশ স্পর্শ করতে প্রায় অর্ধেক দিন লেগে যায়। তবে যে তথ্য তারা সংগ্রহ করেন, তার কাছে ওই পরিশ্রম লাঘব হয়ে যায়। বারহুটে কোনো ‘জিন’ বা দৈত্যের দেখা পাননি তারা। কোনো লোহার শলাকা গাঁথা কারাগারেরও নয়। তবে অদ্ভুত একটা গন্ধ পেয়েছেন। গুহার ভিতরে বহু পশু পাখির মৃতদেহ পড়েছিল। গন্ধটি তার থেকেই তৈরি হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান গুহা বিশেষজ্ঞদের।

তারা জানিয়েছেন, গন্ধটি পচনের নয়। অসহনীয়ও নয়। গন্ধের কারণ জানতে মৃত পশুপাখির দেহগুলি সংগ্রহ করে এনেছেন তারা। আর এনেছেন গুহার মাটি, পাথর, বৃষ্টির জমা জলের নমুনা। গুহার নীচে এক ধরনের উজ্জ্বল সবুজ নিটোল গোল পাথরেরও সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এক ঝলকে দেখে মনে হতে পারে, পাতিলেবুর রঙের এবং আকারের মুক্তা।

তবে আসলে সেগুলি মুক্তা নয়। গুহার ভিতর চুঁইয়ে পড়া বৃষ্টির জলের ক্যালসিয়াম থেকে এই ধরনের পাথর তৈরি হয়। নাম ‘কেভ পার্ল’ বা ‘গুহা-মুক্তা’। গুহার ভিতর চুনাপাথরও পেয়েছেন ইয়েমেনিরা। তবে এত দিন ধরে যে ভয় ইয়েমেনিদের কাবু করে রেখেছিল, তা যে আদতে ভিত্তিহীন তা প্রমাণ করে দিয়েছেন ওমানের এই গুহা বিশেষজ্ঞরা। বারহুটের কূপের সঙ্গে যে আর পাঁচটা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি গহ্বরের গঠনগত তেমন তফাৎ নেই, তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। গুহাবিদদের কথায়, এই ধরনের গহ্বরকে বলা হয় ‘সিঙ্কহোল’।

এসএইচ-০৩/০৪/২১ (অনলাইন ডেস্ক)