আদা চা-গরম পানি দিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়ছে

প্রচলিত ওষুধ-পথ্য দিয়েই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছে উত্তর কোরিয়া। ভাইরাস সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থদের আদা চা বা মধুমিশ্রিত গরম পানি, লবণ পানি ও উইলো নামে স্থানীয় একটি ভেষজ উদ্ভিদের পাতার রস দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। পাশাপাশি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ও অ্যান্টিবায়োটিকও ব্যবহার করা হচ্ছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

উত্তর কোরিয়ায় গত ১২ মে দেশটিতে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। এরপর দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ। সর্দি-জ্বরে ভুগছে এমন মানুষের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। ৬৩-তে ঠেকেছে মৃতের সংখ্যা।

দেশটির কোনো মানুষ এখন পর্যন্ত করোনার টিকা পাননি। নেই ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো কার্যকর ওষুধও। ভাইরাস মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রস্তাবও নাকচ করে আসছে দেশটির নেতারা। এমন অবস্থায় করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। শুক্রবার (২০ মে) বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের মানুষকে গতানুগতিক কিছু স্বাস্থ্য পরামর্শ দিচ্ছে। করোনা থেকে মুক্তি পেতে যেসব পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে-

গরম পানীয়

গুরুতর অসুস্থ নয় এমন রোগীর জন্য আদা কিংবা হানিসাকল নামে এক ধরনের গাছের পাতার চা ও উইলো পাতার পানি পানের পরামর্শ দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের পত্রিকা রোডং সিমনান। গরম পানীয় করোনাভাইরাসের কিছু লক্ষণে আরাম দিতে পারে। গলাব্যথা কিংবা কাশির মতো লক্ষণ দূর করতে ও পানিশূন্যতা পূরণেও সহায়তা করতে পারে। আদা ও উইলো পাতা ফোলা এবং ব্যথাও কমাতে পারে।

লবণ পানি

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সম্প্রতি এক দম্পতির সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। ওই সাক্ষাৎকারে তারা তাদের শ্রোতাদের সকাল ও রাতে লবণ পানি দিয়ে গড়গড়া করার পরামর্শ দেন। এদিকে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ‘অ্যান্টিসেপটিক মিশ্রণ’ বানাতে রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে হাজার হাজার টন লবণ পাঠানো হয়েছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ ঠান্ডাজনিত ভাইরাস ঠেকাতে লবণ পানি দিয়ে গড়গড়া কাজে লাগতে পারে। তবে করোনার বিস্তার ঠেকাতে এর কার্যকারিতার প্রমাণ খুবই সামান্য।

গবেষণায় দেখা গেছে, মাউথওয়াশ বা গড়গড়া করা করোনা ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে। করোনাভাইরাস মূলত নাক ও মুখ দিয়ে শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ফলে গড়গড়া করলে তা ভাইরাসটিকে প্রবেশের সময় মারতে পারে। তবে ভাইরাসটি শরীরের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়লে কোনো গড়গড়া সেখানে পৌঁছাতে পারে না।

ব্যথানাশক ওষুধ ও অ্যান্টিসেপটিক

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইবুপ্রুফেন, অ্যামোক্সিসিলিন ও অন্যান্য ধরনের অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করতে রোগীদের পরামর্শ দিচ্ছে। আইবুপ্রুফেন তাপমাত্রা কমাতে পারে এবং মাথাব্যথা ও গলা ফোলার মতো লক্ষণ কমাতে পারে। তবে করোনা চিকিৎসায় এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

স্বাস্থ্যব্যবস্থা

উত্তর কোরিয়ায় গ্রামপর্যায়ে মৌলিক সেবা থেকে শুরু করে শহরের সরকারি হাসপাতালে বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা বিনামূল্যে দেওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও খরার মতো বিরূপ আবহাওয়ার কারণে দেশটির অর্থনীতি সংকটে পড়েছে।

এদিকে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া ও কঠোর লকডাউনের কারণেও দেশটির অর্থনীতির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে পিয়ংইয়ংয়ের বাইরের এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মী, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক সহায়তা

২০২০ সালের শুরুর দিকে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে দেশের সীমান্ত বন্ধ করে দেয় উত্তর কোরিয়া। গত বছর চীনের তৈরি ৩০ লাখ ডোজ করোনার টিকা ফিরিয়ে দেয় দেশটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনার টিকা সরবরাহের প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করে তারা। পিয়ংইয়ং বলেছে, তারা টিকা, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও চিকিৎসাকর্মী পাঠানোর প্রস্তাব দিলেও উত্তর কোরিয়া কোনো সাড়া দেয়নি।

তবে সম্প্রতি চীন থেকে চিকিৎসা সরঞ্জাম নিতে উত্তর কোরিয়া তিনটি বিমান পাঠিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অবশ্য চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মহামারি প্রতিরোধে কোনো সরঞ্জাম নিচ্ছে না উত্তর কোরিয়া। তবে করোনার নিয়ন্ত্রণে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত তারা।

এসএইচ-২১/২০/২২ (অনলাইন ডেস্ক)