ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বসলেন ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত শেখ। ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেছিলেন তিনি। শনিবার ওই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জানা গেছে, এফ এম মুজিবুর রহমান গণিত ভবনের ৮ম তলার ৮০২ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। আর বেলায়েতের সঙ্গে ঢাকায় এসেছেন তার ছোট ছেলে সাদেক শেখ জীবন। তিনি কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করছিলেন।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় বেলায়েত শেখের বাড়ি। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। বড় ছেলে বিয়ে করে ব্যবসা করছেন। ছোট ছেলে শ্রীপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। একমাত্র মেয়েকে গাজীপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ার সময় বিয়ে দেন বেলায়েত।

বেলায়েত শেখের শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে তিনি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। সে সময় বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তাকে। পরে আর শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেননি।

বেলায়েত সময় নিউজকে এর আগে বলেছিলেন, ‘অভাবের কারণে আমি এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারিনি। পরে সংসারের হাল ধরেছি। সেই সঙ্গে ভাইদের পড়াশোনার চেষ্টা করেছি, সেটাও পারিনি। এরপর নিজের ছেলে ও মেয়েদের পড়াতে চেয়েছিলাম, সেখানেও ব্যর্থ হই। পরে ৫০ বছর বয়সে ২০১৭ সালে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া শুরু করি।’

তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে ঢাকার বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদরাসা থেকে এসএসসি পাস করি। আর ২০২১ সালে রাজধানীর রামপুরা মহানগর কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই।’

এসএসসিতে জিপিএ-৪.৪৩ ও এইচএসসিতে জিপিএ-৪.৫৮ পান বলে জানান বেলায়েত।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য শ্রীপুরের মাওনার সাইফুর’স শাখায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করেছেন বলে জানান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতেই আজ বসেছিলেন পরীক্ষার হলে। তার ইচ্ছা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেতে সবার কাছে দোয়াও চেয়েছেন ৫৫ বছরের বেলায়েত শেখ।

২০১৭ সালে পড়াশোনা শুরু করেন বেলায়েত শেখ। তিনি সময় নিউজকে বলেন, ‘প্রথমদিকে একটু কঠিনই ছিল। কারণ সে সময় আমার কাছের মানুষজনও আমাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করত। তবে একটা সময় গিয়ে সেটা ঠিক হয়ে যায়।’

বেলায়েত বলেন, ‘নিজেকে বয়স্ক ভাবি না, যুবক ভাবি। কিছু চুল পেকে গেছে। এগুলো কালি দিয়ে রাখি। কারণ, কালি দিয়ে না রাখলে এগুলোর জন্য নিজেকে বয়স্ক মনে হয়। আর তখন মনটা দুর্বল হয়ে যায়।’

এসএইচ-০৪/১১/২২ (অনলাইন ডেস্ক)