পায়ে হেঁটে ১৫০ কি.মি. পথ পাড়ি পিতা পুত্রের

গাইবান্ধা জেলা থেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন (অনারারি) সাদেক আলী সরদার (৬৫) ও ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (৩২) নামের পিতা ও পুত্র ১৫০ কিঃমিঃ পথ পায়ে হেঁটে অবশেষে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় পৌঁছালেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল গাইবান্ধা থেকে পায়ে হেঁটে হাতীবান্ধা উপজেলা আসা।

বুধবার সন্ধা ৬টায় হাতীবান্ধা উপজেলা চত্ত্বরে প্রবেশ করেন তারা। এসময় কর্মরত সংবাদকর্মীরা বাবা ও ছেলেকে অভিনন্দন জানান।

এর আগে মঙ্গলবার ভোর ৫ টায় গাইবান্ধা থেকে হাতীবান্ধার উদ্দেশ্যে রওনা দেন পিতা পুত্র। ৯০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে লালমনিরহাট শহরে এসে পৌঁছান তারা রাত ১০ টায়। এর পর হাতীবান্ধার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। গাইবান্ধা হতে লালমনিরহাটে হাতীবান্ধার দুরত্ব ১৫০ কিলোমিটার।

ইতোমধ্যে এক হাজার ২৪ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন বাবা-ছেলে। শখ এবং শরীর চর্চা তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। এর আগে ৩৫ বার পায়ে হেঁটে বিভিন্ন স্থানে গিয়েছেন তারা। এটি তাদের ৩৬তম মিশন। পরবর্তীতে তাদের সফর পঞ্চগড়, সিলেট ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে।

জানা গেছে,২০০৬ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন ক্যাপ্টেন সাদেক আলী সরদার। বাড়িতে এসে বসে সময় কাটাতে ভাল লাগে না তার এবং শরীরও যেন অকেজো হয়ে পড়ছে। শরীরকে ঠিক রাখতে প্রথমে গাইবান্ধা জেলার সকল উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়নে একা একা হাঁটতে শুরু করেন তিনি। ক্যাপ্টেন সাদেক আলীর দুই ছেলে এক মেয়ে, মেয়ে বড়, তার বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগে। তিনি গাইবান্ধার ছালুয়া ফজলে রাব্বী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। মেজো ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান এজজন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা। আর ছোট ছেলে একজন সেনাবাহিনীর মেজর হিসেবে সিলেট সেনানিবাসে কর্মরত আছেন।

দুই ছেলের সাথে তার বন্ধু সুলভ সম্পর্ক, ছেলেরাও বাবার সাথে সময় দিতে ভালবাসেন। এ কারণে বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বাবার পায়ে হেঁটে এ পথ চলার সাথী হয়েছেন এবং বাবাকে সঙ্গ দিতে ও তার শখ পুরণে সফর সঙ্গী হয়েছেন মেজো ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান। বগুড়া, রংপুর, পীরগঞ্জ এবং গাইবান্ধার সব উপজেলা সহ বিভিন্ন স্থানে বাবাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি।

ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাবার প্রতি ভালবাসাটাই এখানে কাজ করেছে আমার, উনাকে আমি আমার বন্ধুর মতো দেখি। ছোট বেলা থেকে আমরা দুই ভাই বাবার সাথে বন্ধুর মতো চলি। বাবার বয়স হয়ে গেছে, তাই তাকে একলা ছাড়তে পারি না। বাবার সাথে পায়ে হেঁটে পথ চলছি, এতে করে আমার শরীরেরও চর্চা হচ্ছে। শরীর ঠিক রাখতে শরীর চর্চার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। আগামীতে আমাদের আরো অনেক জায়গায় যাওয়ার পরিকল্পনা আছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের একটা লক্ষ ও উদ্দেশ্য নিয়ে পায়ে হেঁটে এই ভ্রমণ। তবে এখানে ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য না বললেও আগামীতে অনেক আরো দেশ ছেড়ে বিদেশেও পথ পাড়ি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সাদেক আলী সরদার বলেন, আমি আর্মির রিটায়ার্ড অফিসার, পথ চলতে ভয় করি না।

তিনি বলেন, ‘আমি ৩৩ বছর চাকরি করে বাড়িতে এসে বসে বসে সময় কাটাতে ভালো লাগে না। বসে বসে থাকার কারণে শরীরও যেন অকেজো হয়ে পড়ছে। শরীরকে ঠিক রাখতে প্রথমে গাইবান্ধা জেলার সকল উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়নে একা একা হাঁটতে শুরু করি। আজ ১৫০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে হাতীবান্ধায় আসলাম। এটি আমাদের ৩৬ তম মিশন। টানা ৩৬ তম মিশনে আমাদের বাবা-ছেলেও এ পথ চলা। পরবর্তীতে আমাদের পঞ্চগড়, সিলেট ও কক্সবাজারসহ আরও বিভিন্ন স্থানে পথ পাড়ি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

এসএইচ-২৪/২৩/২২ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)