নিউইয়র্কে চালু হলো ‘মুসলিম প্যাট্রল সার্ভিস’

নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলীনে সানসেট পার্কসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘মুসলিম কমিউনিটি প্যাট্রল এ্যান্ড সার্ভিস’ (এমসিপিএস) চালু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথম মুসলমানদের উদ্যোগে দ্রুততম সময়ে সার্ভিস প্রদানের এ কার্যক্রম চালু হলো সামিউদ্দিন রাজি এবং নূর রাবাহ নামক দুই ব্যক্তির নেতৃত্বে। রাজি হলেন এ সংগঠনের প্রেসিডেন্ট এবং নূর হয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট।

ইতিমধ্যেই এনওয়াইপিডির (নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট) মতোই প্যাট্রল গাড়ি নেমেছে রাস্তায়। গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধিকল্পে বেশ ক’জনকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

কাউন্সেলিং, প্রাথমিক চিকিৎসা, প্রবীণদের সহায়তা, গৃহহারাদের খাদ্য প্রদান, যুব সমাজকে তাৎক্ষণিক পরামর্শ প্রদান ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, অনেক আগেই ইহুদি সম্প্রদায় নিজস্ব এ্যাম্বুলেন্সসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করেছে। তারা নিউইয়র্ক পুলিশের সাথে যোগাযোগ রেখে নিজেদের কমিউনিটিতে কাজ করছে।

এমসিপিএস-ও একই স্টাইলে কাজ করবে। তবে তারা কোনভাবেই পুলিশের পরিপূরক নয়। যারা প্যাট্রল দেবেন তাদের প্রায় সকলেই আগে পুলিশ অথবা আর্মি অথবা নিরাপত্তা রক্ষাকারি কোন সংস্থায় কাজ করেছেন। এর ফলে এনওয়াইপিডির টহল পুলিশের সাথে তাদের সমন্বয় ঘটানো সহজ হবে।

প্রসঙ্গত ৪০ সহস্রাধিক পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত এনওয়াইপিডি-তে বর্তমান এক হাজারের বেশি বাংলাদেশি অফিসার রয়েছেন। এছাড়া, মুসলিম অফিসারের সংখ্যাও ৪ হাজারের মতো।

নূর রাবাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ইহুদি সম্প্রদায়ের প্যাট্রল কার বা এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস যেভাবে কাজ করছে, আমরাও তা করবো। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোন অবকাশ থাকতে পারে না। এনওয়াইপডিতে কর্মরত মুসলিম অফিসাররা আমাদের কাজে সহযোগিতা দেবেন। তবে তারা আমাদের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত নন।

নূর উল্লেখ করেন, ইহুদি অধ্যুষিত এলাকার প্রেসিঙ্কটের মিটিংয়ে তারা থাকেন এবং এলাকার চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণের মতো অপরাধ দমনে পুলিশের পাশে থাকেন। এমসিপিএস-একই ভূমিকা পালন করবে। মুসলিম কমিউনিটিতে কোন অঘটন ঘটলে বা ছিনতাইয়ের শিকার হলে অথবা কেউ অপহৃত হলে এই সংগঠন সোচ্চার হবে এবং অপরাধীদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে।

ব্রুকলীনে, বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, এরাবিয়ান, ভারতীয় মুসলমানের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এরাই পাবেন সকল সেবা। আর এভাবেই মুসলিম কমিউনিটির মধ্যেকার সম্প্রীতির বন্ধন আর সুসংহত হবে বলে আশা করছেন রাজি। তিনি বলেন, তবে অমুসলিমরাও সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন না। মানবিকতার দৃষ্টিতে সবকিছু করা হবে সকল অধিবাসীর জন্যে। তবে মুসলমানেরা অবশ্যই প্রাধান্য পাবেন।

রাবাহ বলেন, মানুষের সহায়তার জন্যে আমরা কাজ করে যাবো। তাই, এ জন্যে কারো বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হবে না। ভালো কাজে কেউই বাধা হয়ে দাড়ায় না।

বিশাল এই কর্মযজ্ঞ কীভাবে চলবে-সে প্রসঙ্গে সামিউদ্দিন রাজি আরও বলেন, তহবিল পাচ্ছি কয়েকজন দাতার কাছে থেকে। ইতিমধ্যেই দুটি টহল গাড়ি পেয়েছি। শীঘ্রই এ সংখ্যা ১০-এ উন্নীত হবে।

২৭ জানুয়ারি থেকে ভলান্টিয়ারদের ট্রেনিং শুরু হয়েছে। এনওয়াইপিডির কয়েকজন অফিসার ট্রেনিং ক্যাম্প পরিচালনায় সহায়তা করছেন।

নানাবিধ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ৯১১ এ ফোন করেও এনওয়াইপিডির তাৎক্ষণিক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া ভাষাগত দুর্বলতার কারণেও ঠিকমত অপারেটরেরা মেসেজ নিতে পারেন না। এমন অবস্থায় নিজেদের ভাষায় কথা বলার মাধ্যমে দ্রুততত সময়ে প্যাট্রল কার হাজির হবে। আর এভাবেই মুসলিম কমিউনিটিতে সৃষ্ট হতাশা-ক্ষোভের পরিসমাপ্তির পথ সুগম হবে বলে মনে করছেন এমসিপিএস’র নেতৃবৃন্দ।

বর্তমানে ৩৫ জন তালিকাভুক্ত হয়েছেন ভলান্টিয়ার হিসেবে। এরমধ্যে এনওয়াপিডির অবসরপ্রাপ্ত দুই অফিসার, হোমল্যান্ড সিকিউরিটিতে কর্মরত এক অফিসার, কয়েকজন কারেকশনাল অফিসার, পুলিশ ও আর্মির ইমাম, এবং বেশ কয়েকজন রয়েছেন যারা সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছেন। আরও অনেকে যোগাযোগ করছেন, সে তালিকা অনেক দীর্ঘ হবে।

জানা গেছে, এমসিপিএস’র উদ্যোগে গত সপ্তাহে গৃহহারাদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণের পাশাপাশি ক্ষুধার্তদের মধ্যে খাবার পরিবেশনও করা হয়েছে। অর্থাৎ বহুমুখী কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে এমসিপিএস-কে সর্বমহলে পরিচিত করার একটি চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

এসএইচ-১৩/০৫/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)