রয়টার্স সাংবাদিকদের মুক্তি দিয়েছে মিয়ানমার

মিয়ানমারে সাত বছরের কারাদণ্ডের শাস্তি পাওয়া রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লো এবং চ সো উ’কে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।ঐ দুই সাংবাদিককে মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে ক্ষমা করার পর কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন ভঙ্গ করার দায়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় এবং তাদের সাত বছরের জেল দেওয়া হয়েছিল।

২০১৭ সালে একটি সেনা অভিযানে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী ১০ জন রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করেছিল – এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

তাদের কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে এবং এ ঘটনাকে মিয়ানমারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য ‘ক্ষতিকর’ বলে অভিহিত করা হয়।

মিয়ানমারের নববর্ষ উপলক্ষে প্রতিবছর হাজার হাজার কয়েদিকে ক্ষমা করা হয়। তার অংশ হিসেবে এবার এই দুই সাংবাদিকও মুক্তি পেয়েছেন।

কারাগার থেকে বের হয়ে ওয়া লো বিবিসি’কে বলেন, তিনি সবসময় সাংবাদিক হয়েই থাকতে চান।

মিয়ানমারের শহর ইয়াঙ্গুনের বাইরে এক কারাগারে ৫০০ দিনের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি ছিলেন ঐ দুই সাংবাদিক। তারা দু’জনেই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন এবং তাদের ফাঁসানো হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।

রয়টার্সের প্রধান সম্পাদক বলেন, গত মাসে সম্মানজনক পুলিৎজার পুরস্কার পাওয়া ঐ দুই সাংবাদিককে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ‘প্রতীক’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

“আমরা খুবই আনন্দিত যে মিয়ানমার আমাদের সাহসী সাংবাদিকদের মুক্তি দিয়েছে,” বলেন রয়টার্সের প্রধান সম্পাদক স্টিফেন অ্যাডলার।

“তারা এখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতার গুরুত্বের প্রতীক হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছেন।”

মিয়ানমারের নাগরিক ঐ দু্ই‌ সাংবাদিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের হয়ে কাজ করার সময় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে উত্তর রাখাইনের ইন ডিন গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে ১০ জন রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যার বিষয়ে খবর সংগ্রহ করছিলেন।

তবে ঐ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার আগেই তারা গ্রেপ্তার হন।

কিন্তু পরে আরো কয়েকজন সাংবাদিকদের সাথে তৈরি করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। ঐ প্রতিবেদনে বিভিন্ন পক্ষের জবানি অন্তর্ভূক্ত করা হয় – যার মধ্যে এমন বৌদ্ধ গ্রামবাসীদের বক্তব্যও ছিল যারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা করা ও তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে।

এর আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের অভ্যন্তরীণ এক তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে আনা রাখাইনে সহিংসতা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে।

তবে ইন ডিন গ্রামের হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ঐ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে এবং পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার দায়ে সাতজন সেনা সদস্যকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এসএইচ-৩০/০৭/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)