আয়লানকে মনে করাচ্ছে বাবার গলা জড়িয়ে থাকা ভ্যালেরিয়া

চার বছর আগের একটা ছবি মনে করাচ্ছে এখনকার ছবিটা। কাদা মাখা পানিতে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছেন বাবা-মেয়ে। চারদিকে ঘাস। মাথা দু’টি জড়ানো কালো টি-শার্টে। সম্ভবত সেটা দিয়ে বাবা আঁকড়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন ২৩ মাসের শিশুকন্যাকে। লাল প্যান্ট আর কালো জুতা পরা মেয়েটির ছোট ডান হাত বাবার কাঁধে জড়ানো। মৃত্যু তাদের আলাদা করতে পারেনি। মেক্সিকো সীমান্তে রিও গ্রান্ডে নদীতে সোমবার উদ্ধার হয় দেহ দু’টি।

পিছিয়ে যেতে হবে চার বছর। ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল আয়লান কুর্দি (৩) ও তার পাঁচ বছর বয়সী ভাই। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আশ্রয়ের আশায় যেতে চেয়েছিল গ্রিসে। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি তারা।

আয়লানসহ ১২ সিরিয়ান শরণার্থী সেদিন চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তুরস্কের বোদরাম সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসে আয়লান কুর্দির নিথর মরদেহ। নির্মম এ ঘটনায় তার আরেক ভাইয়ের (পাঁচ বছর) মৃতদেহও ভেসে উঠে সাগরের অন্য পাড়ে। সেই ছবি ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছিল পুরো বিশ্বকে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা অভিবাসন নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছিলেন।

ভাবনা চলছে। বদলায়নি বাস্তব। তার প্রমাণ দিল বাবা অস্কার আলবার্তো মার্টিনেজকে জড়িয়ে থাকা ২৩ মাসের অ্যাঞ্জি ভ্যালেরিয়া। আয়লানের মুখটুকু দেখা গিয়েছিল। অ্যাঞ্জিদের মুখ দেখা যাচ্ছে না ছবিতে। এল সালভাদর থেকে আমেরিকায় আশ্রয় খুঁজতে এসেছিলেন। সীমান্ত পেরোতে গিয়ে প্রাণ গেছে তাদের। বেঁচে আছেন অ্যাঞ্জির মা তানিয়া।

গত রোববার থেকে মাটামোরোসের শরণার্থী শিবিরেই ছিল পরিবারটি। মেক্সিকো সীমান্তে রিও গ্রান্ডে নদী পেরোতে গিয়ে অস্কার স্ত্রীকেও আনার চেষ্টা করছিলেন। অ্যাঞ্জি বাবাকে সাঁতরে যেতে দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে নদীতে। বাবা তাকে জড়িয়ে ধরেন, কিন্তু হঠাৎ ধেয়ে আসা স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায় তাদের।

জুলিয়া লু দুক নামে যে চিত্রগ্রাহক ছবিটি তুলেছেন। চোখের সামনে স্বামী-মেয়েকে তলিয়ে যেতে দেখেছেন তানিয়া। মেক্সিকোয় দু’মাস ছিলেন। ৪৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের জ্বালাধরা গরম। শেষে আর সহ্য করতে না পেরে নদী পেরোনোর সিদ্ধান্ত নেন অস্কার। তারা মেক্সিকোয় ‘মানবিক ভিসা’ পেয়েছিলেন বলে জানান তানিয়া।

শুল্ক এবং সীমান্ত সুরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর বন্দরের প্রবেশপথগুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই শরণার্থীদের প্রচণ্ড সমাগম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন অভিবাসন নীতি যত কড়া হচ্ছে, মরিয়া শরণার্থীরা তত ঝুঁকি নিয়ে বিপজ্জনক জায়গা দিয়ে সীমান্ত পেরোনোর চেষ্টা করছেন। গত ১৪ জুন ৬ বছরের ভারতীয় শিশুকন্যা সীমান্ত পেরোতে গিয়ে হিট স্ট্রোকে প্রাণ হারিয়েছে।

অস্কার আর তার মেয়ের দেহ উদ্ধার হওয়ার পরে এল সালভাদর প্রশাসন এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্দ্রা হিল নাগরিকদের বলেছেন, ‘দেশে থাকুন। সরকারের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করুন। দেশের আর্থিক অবস্থা খারাপ ঠিকই, কিন্তু ছেড়ে যাবেন না। এভাবে জীবনের ঝুঁকি নেবেন না।’

এল সালভাদরের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্টের সহকারী বুকেলে জানিয়েছেন, অস্কারের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে প্রশাসন।

শরণার্থী বাবা-মেয়ের মৃত্যুতে মার্কিন রাজনীতিতে শোরগোল শুরু হয়েছে। ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস টুইটে বলেছেন, ‘ভয়ঙ্কর হিংসা থেকে বাঁচতে এসব পরিবার পালিয়ে আসছে। তারা যখন আসছে, কী হচ্ছে?’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলছেন, ‘যেখান থেকে এসেছো, ফিরে যাও। এটা অমানবিক। শিশুরা মারা যাচ্ছে। এই সব ঘটনায় আমাদের মানসিক তিক্ততা বাড়ছে।’

এসএইচ-২৯/২৭/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক, তথ্য সূত্র : আনন্দবাজার)