বিক্ষোভের খবর প্রচারে গণমাধ্যমকে ‘সতর্কতা’ মোদি সরকারের

ভারতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার ও প্রশাসন। বেগতিক অবস্থায় পড়ে মাঠ পর্যায়ে পেশাগত দায়িত্বরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করছে পুলিশ।

এবার প্রতিবাদ-বিক্ষোভের খবর প্রচারের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে ‘বিশেষ নির্দেশিকা’ দিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। এটাকে নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভের খবর প্রচারের ক্ষেত্রে বিজেপি সরকারের ‘সতর্কতা’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গত ২০ ডিসেম্বর জারি করা ওই নির্দেশিকায় বলা হয়, গত ১১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশিকায় ‘দেশবিরোধী ও সহিংসতা ছড়াতে পারে’ এমন অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ রাখতে বলা হয়।

কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এখনো কিছু টিভি চ্যানেল ওই নির্দেশিকা অমান্য করছে। তারা এমন খবর ও অনুষ্ঠান প্রচার করছে, যা অশান্তি ছড়াতে পারে। তাই ফের এই বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে।

সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হতেই দেশের সব সংবাদমাধ্যমের কাছে ১১ ডিসেম্বর প্রথম নির্দেশিকা দেয় বিজেপির সরকার। কিন্তু ওই নির্দেশনার পরও সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম সরকারের মনমতো আচরণ না করায় নতুন নির্দেশিকা জারি করা হলো।

এতে নির্দিষ্ট করে বলা হয়, দেশের অখণ্ডতায় আঘাত আনতে পারে এমন কোনো বিষয়বস্তু প্রচার করা যাবে না। সহিংসতা ছড়াতে বা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে এমন খবরও প্রচার করা যাবে না। প্রকাশ-প্রচার করা যাবে না জাতীয়তাবাদবিরোধী কোনো খবরও।

গত বৃহস্পতিবার উত্তর প্রদেশের লখনৌতে জনতার বিক্ষোভের সময় প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দুর উত্তর প্রদেশ প্রতিবেদক ওমর রশিদ পুলিশের সাম্প্রদায়িক আচরণের শিকার হন। মুসলিম ওই সাংবাদিককে আটক করে তাকে সাম্প্রদায়িক গালাগাল করেন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। এমনকি তার দাঁড়ি ছিঁড়ে ফেলার হুমকিও দেন এক কর্মকর্তা।

সেদিন কর্ণাটকের মেঙ্গালুরুতেও পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। সেখানে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ৩০ সাংবাদিককে আটক করা হয়। জনতার বিক্ষোভের সময় পুলিশের হাতে সাংবাদিকদের হেনস্থা হওয়ার কিছু ভিডিও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিওগুলো দেখে সাংবাদিকদের প্রতি পুলিশের এমন মারমুখী আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

নরেন্দ্র মোদির সরকার বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস করলে প্রথমেই এর বিরুদ্ধে আসাম-ত্রিপুরা-মেঘালয়সহ দেশটির উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্রমেই দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, কর্ণাটকসহ গোটা দেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ ঠেকাতে বিভিন্ন জায়গায় নির্বিচারে গুলি ছুড়ছে পুলিশ। এতে এখন পর্যন্ত ২৩ জন নিহত হয়েছে। শনিবার কেবল উত্তর প্রদেশেই নয় জনের মৃত্যু হয়েছে।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ‘নির্যাতিত’ হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া অমুসলিম নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, এর মাধ্যমে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার পথ প্রশস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেয়ার এ আইন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের পরিপন্থী।

এসএইচ-১১/২২/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)