মাহাথিরকে টপকে যেভাবে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হলেন মুহিউদ্দিন

মাহাথির মোহাম্মদ, তিনি মালয়েশিয়ার রূপকার। দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও ৯৪ বছর বয়সে ফের নির্বাচন করে প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।

কিন্তু রাজনৈতিক কারণে আকস্মিক পদত্যাগের ঘোষণা দেন মাহাথির। এতে করে টালমাটাল অবস্থায় পড়ে যায় মালয়েশিয়ার রাজনীতি।

তবে এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন মুহিউদ্দিন ইয়াসিন।
এর আগে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ নামটি খুব একটা আলোচিত ছিল না। কিন্তু রাজার পছন্দে শেষ পর্যন্ত তিনিই দায়িত্ব নিলেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মালয়েশিয়া নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী পেলেও দেশটির রাজনীতিকে ঘিরে এখন বড় ধরনের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেননি।

মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে গত কয়েক দশক ধরে প্রাধান্য বিস্তারকারী রাজনীতিক মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, মুহিউদ্দিন ইয়াসিনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া অবৈধ ও বিশ্বাসঘাতকতা।

মুহিউদ্দিন ইয়াসিনকে মাহাথিরের উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচন করেছেন মালয়েশিয়ার রাজা। রবিবার তিনিই তাকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুহিউদ্দিনকে সমর্থন দিচ্ছে নাজিব রাজাকের সাবেক ক্ষমতাসীন দল। দুর্নীতির অভিযোগে ওই সরকারের পতন হয়েছিল।

এদিকে মাহাথির মোহাম্মদ বলছেন, তিনি নতুন প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগকে পার্লামেন্টে চ্যালেঞ্জ করবেন।

বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ নির্বাচিত নেতা মাহাথির মোহাম্মদ তার পুরনো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে জোট গঠন করে ২০১৮ সালে ক্ষমতায় ফিরে এসেছিলেন।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে তার এই বিজয় ছিল খুবই বিস্ময়কর।

সরকারি তহবিলে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগে রাজাকের বিচার চলছে।

আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে করা জোট থেকে বের হয়ে মাহাথির মোহাম্মদের পদত্যাগের পর মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। কিন্তু মাহাথিরের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত তার বিপক্ষে চলে যায়।

২০১৮ সালের নির্বাচনী ফলাফলের প্রসঙ্গ তুলে মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, “এটা অদ্ভুত ব্যাপার। পরাজিতরা সরকার গঠন করছে আর বিজয়ীরা হচ্ছে বিরোধী দল।”

মুহিউদ্দিন মাত্র এক সপ্তাহ আগে মাহাথির মোহাম্মদের জোট থেকে বের হয়ে যান এবং তার পুরনো দল উমনোর সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন।

অনেকেই বিশ্বাস করেন, ক্ষমতায় থাকার জন্যে নতুন সরকারকে মালায়া জাতিগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্ভর করতে হবে।

মুহিউদ্দিন একবার বলেছিলেন, প্রথমে তিনি একজন মালায়া এবং এর পরে তিনি মালয়েশিয়ান।

মুহিউদ্দিনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দেশটিতে এই আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে যে উমনোর যেসব নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে – সেগুলোর তদন্ত সামনের দিকে অগ্রসর নাও হতে পারে।

মাহাথির ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আনোয়ার ইব্রাহিম ছিলেন তার উপ-প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে বিরোধ সৃষ্টি হলে ১৯৯৮ সালে আনোয়ার ইব্রাহিমকে বরখাস্ত করা হয় এবং তার জের ধরে তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে।

পরে দুর্নীতি ও সমকামিতার অভিযোগে আনোয়ারের কারাদণ্ড হয়। অনেকেই মনে করেন, তার এই সাজা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

তবে ২০১৮ সালে মাহাথির যখন ঘোষণা করেন যে তিনি আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে জোট গঠন করতে যাচ্ছেন তখন অনেকেই বিস্মিত হয়েছিল।

তিনি তখন বলেছিলেন নাজিব রাজাকের সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে তারা আবারও একজোট হচ্ছেন।

তাদের জোট নির্বাচনে জয়লাভ করে। মাহাথির শেষ পর্যন্ত আনোয়ারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে সম্মত হয়েছিলেন। কিন্তু কখন সেটা করা হবে সে প্রশ্ন তিনি বারবারই এড়িয়ে গেছেন।

মাহাথির গত সপ্তাহে আকস্মিকভাবে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন। এর পর তিনি ও আনোয়ার ঘোষণা করেন যে তারা আবারও একত্রিত হয়েছেন এবং তাদের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপিদের সমর্থন রয়েছে।

কিন্তু মালয়েশিয়ার রাজা সুলতান আবদুল্লাহ সুলতান আহমেদ শাহ শেষ পর্যন্ত মুহিউদ্দিনকেই নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

মালয়েশিয়ায় কে প্রধানমন্ত্রী হবেন সেবিষয়ে দেশটির রাজাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন।

এসএইচ-১৫/০২/২০ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)