চীনে এবার আরেক ভাইরাসের হানা

পুরো বিশ্ব এখন করোনাভাইরাস আতঙ্কে। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ১৬ হাজার ৭৫৮ জনের। এর মধ্যে চীনে মৃত্যু হয়েছে ৩২৭৭ জনের, আর আক্রান্ত হয়েছে ৮০ হাজারের বেশি।

এ পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসকে মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এই মহামারির মধ্যে চীনে নতুন করে খবর এসেছে, দেশটিতে হান্তাভাইরাস আক্রান্তে হয়ে একজন মারা গেছেন।

করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে হান্তাভাইরাসের নাম শুনে নতুন আতঙ্কে মানুষ। যদিও এই ভাইরাস করোনার মতো ভয়ঙ্কর নয়, তারপরও অনেকের প্রশ্ন, এই হান্তাভাইরাস আবার কী? এর লক্ষণগুলোও বা কী? আর এ ভাইরাস কি করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর?

হান্তাভাইরাস নিয়ে নেটিজেনরা আলোচনার ঝড় তুলেছে। অনেকের বিশ্বাস, করোনার মতো এই ভাইরাসও চীন থেকে উদ্ভব। বর্তমানে টুইটারের অন্যতম শীর্ষ ট্রেন্ড হিসেবে চলছে হান্তাভাইরাস। করোনাভাইরাসের সঙ্গে এখনও মানুষের যুদ্ধ থামেনি, এর মধ্যে হান্তাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে কি-না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছে অনেকে।

এক টুইট বার্তায় চীনের গ্লোবাল টাইমস জানায়, সোমবার (২৩ মার্চ) দেশটির শানডং প্রদেশ থেকে কাজ শেষে বাসযোগে ইউনান প্রদেশে ফেরার সময় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তার শরীরে হান্তাভাইরাস ধরা পড়ে।

টুইট বার্তায় আরও বলা হয়, ওই বাসে থাকা ৩২ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে তাদের পরীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।

গ্লোবাল টাইমসের ওই টুইটে এখন পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি লাইক পড়েছে। এটা মানুষের মথ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। অনেকে মনে করছে, এটা চীনের আরেক ভাইরাস, যা নতুন করে মহামারি তৈরি করবে।

হান্তাভাইরাস কী?

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণবিষয়ক সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, হান্তাভাইরাস পালমোনারি সিন্ড্রোম (এইচপিএস) মানুষের শ্বাসযন্ত্রে তীব্র, কখনও কখনও মারাত্মক সমস্যা তৈরি করতে পারে।

তবে এটা করোনাভাইরাসের মতো বায়ুবাহিত রোগ নয়। এই ভাইরাস ইঁদুরের মাধ্যমে ছড়াতে পারে, যদিও এটা তাদের মধ্যে ছড়ায় না। ইঁদুরের মূত্র, লালা বা মলের সাহায্যে মানুষ হান্তাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।

সিডিসি বলছে, এর কোনো প্রমাণ নেই যে, করোনাভাইরাসের মতো মানুষ থেকে মানুষে হান্তাভাইরাস ছড়াবে। তবে কেউ যদি ইঁদুরের মূত্র বা বাসা বাঁধার উপকরণ ছুঁয়ে আসার পর চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করে তাহলে এ ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে।

হান্তাভাইরাসের লক্ষণ

হান্তাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- ক্লান্তি, জ্বর ও পেশীতে ব্যথা অনুভব করা। বিশেষ করে উরু, পিঠ ও কাঁধের মতো বড় পেশীতে ব্যথা অনুভূত হয়। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির মাথাব্যথা, মাথাঘোরা, ঠান্ডা এবং পেটের সমস্যা যেমন- বমি ও ডায়রিয়া হতে পারে। হান্তানাভাইরাসে রোগীর সবশেষ লক্ষণ হচ্ছে, এতে আক্রান্ত হলে তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়।

হান্তাভাইরাসের উৎপত্তি

অনেকের ধারণা হান্তাভাইরাসের উৎপত্তি চীনে। কিন্তু না, এর উৎপত্তি যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি অঞ্চলে হান্তাভাইরাসের উৎপত্তি। অঞ্চলটি আরিজোনা, নিউ মেক্সিকো, কলারোডা ও উতাহকে ভাগ করেছে, যা ফোর কর্নারস নামে পরিচিত।

ওই অঞ্চলের এক যুবক একদিন শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এ সময় নিউ মেক্সিকোর হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। ওই যুবকের স্বাস্থ্য প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে চিকিৎসকরা জানতে পারেন, কয়েক দিন আগে একই লক্ষণ দেখা দেয়ার পর তার বাগদত্তার মৃত্যু হয়েছে।

সিডিসি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, যুক্তরাষ্ট্রসহ কানাডা, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, চিলি, পানামা, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ে হান্তাভাইরাস আক্রান্ত রোগীও চিহ্নিত করা হয়েছে।

হান্তাভাইরাস সম্পর্কিত কোনো খবরে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। এটা নতুুন কোনো ভাইরাস নয়। এ ভাইরাস আগে থেকেই আছে। করোনাভাইরাসের মতো বিস্তার রোধে হান্তাভাইরাসের ক্ষেত্রেও সবাইকে বাসায় থাকতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

এসএইচ-০৯/২৪/২০ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)