নোবেলজয়ী ইথিওপিয়া প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ

ইথিওপিয়ার সরকার তিগ্রে অঞ্চলে গণহত্যা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টান্যাশনাল।

অ্যামনেস্টি ইন্টান্যাশনাল বলছে, ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ তার দেশের তিগ্রে প্রদেশে আঞ্চলিক বিদ্রোহী শক্তি নির্মূলে সেনা অভিযান পরিচালনা করছেন। তিগ্রে অঞ্চলের তিগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (টিপিএলএফ) এর বিদ্রোহীদের দমন করতে তিনি এ পদক্ষেপ নেন। কিন্তু তার এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে দেশটিতে বড় ধরনের অস্থিরতার সূচনা হলো মনে করা হচ্ছে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, তিগ্রের আঞ্চলিক সরকারের সঙ্গে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের সংঘাতে সাধারণ মানুষ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। অ্যামনেস্টি বলছে, তিগ্রে অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর মাই-কারদায় ৯ নভেম্বর রাতে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
ওই সংঘাতে নিহতদের সম্পর্কে তথ্য নিশ্চিত করে সংস্থাটির আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ অঞ্চলের পরিচালক ডেপ্রস মুচেনা আরও জানিয়েছেন, সংঘাতে নিহতরা সাধারণ দিনমজুর এবং এদের কোনো সামরিক সংশ্লিষ্টতা নেই।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের কারণে লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে, জাতিবিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে ও নৃশংশ হত্যাকাণ্ড চালানো হচ্ছে ইথিওপিয়ায় যা গভীর উদ্বেগের। এছাড়া বহির্বিশ্ব থেকে আবি আহমেদের উদ্দেশে বার্তা দেওয়া হয়েছিল যাতে আলোচনার মাধ্যমে ওই অঞ্চলের সরকারের সঙ্গে সমাধানে পৌঁছা যায়। কিন্তু ২০১৯ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী এ প্রধানমন্ত্রী সেসবের তোয়াক্কা না করে আঞ্চলিক সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বিদ্রোহীদের নির্মূলে রীতিমতো বিমান হামলা পরিচালনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ইথিওপিয়া সরকারের পক্ষ থেকে।

তবে আফ্রিকান ইউনিয়নের ভূমিকা এক্ষেত্রে অন্যরকম। আফিকান ইউনিয়নের (এইউ) নিরাপত্তা প্রধান জ্রেবিগজিয়াভে মেব্রাতুকে বরখাস্ত করা হয়েছে। জ্রেবিগজিয়াভের মেব্রাতু ইথিওপিয়ার নাগরিক কিন্তু ইথিওপিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক তিগ্রে প্রদেশের সেনা অভিযান প্রশ্নে তার দ্বিমত রয়েছে বলে জানা গেছে। এইউয়ের নিরাপত্তা প্রধান হিসেবে কর্মরত এই ইথিওপিয়ানকে দেশটির প্রতি অনুগত না থাকায় সংস্থাটি তাকে বরখাস্ত করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত এইউয়ের বক্তব্য জানা যায়নি।

আবি আহমেদ ইথিওপিয়ার ক্ষমতায় এসেছিলেন দেশটির আঞ্চলিক সরকারগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সরকারকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। এছাড়া দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। এর বাইরে প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্ব নিরসনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে নোবেল পুরস্কারও প্রদান করা হয়।

আফ্রিকার দেশগুলোর প্রধানতম সমস্যাগুলো হল, এর বিভিন্ন অঞ্চলের জাতিগত বিভক্তি। অধিকাংশ দেশগুলোকেই এ সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। এ অঞ্চলের মানষের মধ্যে বিরাজমান বিভক্তিকে সামাল দিয়েই শাসনকার্য পরিচালনা করতে হবে, এমনটাই সবাই মনে করেন। ইথিওপিয়ার সমস্যাটিও নতুন নয়।

দেশটির অভ্যন্তরে বিভিন্ন সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপস্থিতি আগে থেকেই ছিল। এর বাইরে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয়ও একই রকম সমস্যা বিরাজমান ছিল। কিন্তু আবি আহমেদ সমস্যা সমাধানে যুদ্ধকেই বেছে নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গত ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এই বিশৃঙ্খলা আরও ছড়িয়ে পড়বে।

এরই মধ্যে ইথিওপিয়ার সংঘাতপূর্ণ ওই অঞ্চলে নতুন শরণার্থী সমস্যা তৈরি হয়েছে। এর পরিমাণ সময়ের সঙ্গে বাড়তেই থাকবে বলে মনে হচ্ছে।

দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ফানা টিভিতে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সেনা অভিযানে প্রায় ৫৫০ জন সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়নি। সাধারণ মানুষ হত্যার শিকার হচ্ছে, এমন অভিযোগেরও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

জাতিসংঘের শরণার্থী পরিষদ জানিয়েছে, বিগত কয়েক দিনের যুদ্ধে ১১ হাজার মানুষ প্রতিবেশী সুদানে আশ্রয় নিয়েছে। এর পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানা গেছে। কিন্তু সংঘাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শরণার্থীদের স্রোত কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা স্পষ্ট করে বলা এখনই সম্ভব হচ্ছে না। বেশিরভাগ শরণার্থী পালিয়ে গিয়ে সুদানের আল-কাদারিফ অঞ্চলে আশ্রয় নিচ্ছেন।

এসএইচ-২৯/১৩/২০ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)