ডয়চে ভেলের সাংবাদিককে না পেয়ে তার আত্মীয়কে হত্যা

সাংবাদিককে

আফগানিস্তানে ডয়েচে ভেলের এক সাংবাদিককে খুঁজতে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার এক আত্মীয়কে গুলি করে হত্যা করেছে তালেবান যোদ্ধারা। বৃহস্পতিবার জার্মান সরকারের সম্প্রচার মাধ্যমটি এমন খবর দিয়ছে।

ওই সাংবাদিককে বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করেছিল তালেবান যোদ্ধারা। বর্তমানে তিনি জার্মানিতে কাজ করছেন। এছাড়া তার আরও এক আত্মীয় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। তবে তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।

এ ঘটনায় বিস্তারিত তথ্য এখনো জানা সম্ভব হয়নি। এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ডয়চে ভেলের মহাপরিচারক পিটার লিমবার্গ। তিনি বলেন, এতে বোঝা যাচ্ছে আফগানিস্তানে গণমাধ্যম কর্মী ও তাদের পরিবার সদস্যরা কতটা বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন।

রোববার কাবুল দখলের পর থেকে তালেবান নিজেদেরকে আগের তুলনায় অনেক বেশি উদার দেখাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পুরনো শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া হবে না বলেও আশ্বস্ত করেছে।

মার্কিন মেরিন স্পেশাল অপারেশনসের কমান্ডের সাবেক যোদ্ধা পিটার কিয়ারনান বলছিলেন, আমরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে লোকজনের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করতাম। ১২ ইঞ্চি লম্বা ও ছয় ইঞ্চি চওড়া একটি ডিভাইস হাতে থাকতো। এতে গ্রামবাসীর হাতের ছাপ ও চোখের রেটিনার স্ক্যান করা হতো। এছাড়া তাদের ছবিও তোলা হতো এই ডিভাইসে।

পিটার কিয়ারনানকে এভাবে ব্যস্ততম সপ্তাহ কাটাতে হয়েছে। আফগানিস্তানে তিনি স্থানীয় ১২ দোভাষীর দায়িত্বে ছিলেন। তাদের অনেকে এখনো আফগানিস্তানে অবস্থান করছেন। যদিও দেশ থেকে বেরিয়ে আসতে তাদের সহায়তার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে কাজ করা লোকজনকে জরুরিভিত্তিতে আফগানিস্তান থেকে নিয়ে আসার কাজ করা হয়েছে। জাতিসংঘের নথি বলছে, ন্যাটো ও মার্কিন বাহিনীর হয়ে কাজ করা লোকজনকে খুঁজে বের করার অভিযান জোরদার করছে তালেবান।

মার্কিন সামরিক বাহিনী ও আফগান সরকার বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে বিপুল মানুষের উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। এসব উপাত্ত প্রতিহিংসার মুখোমুখি হওয়ার শঙ্কায় থাকা আফগানদের ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।

মানবাধিকর গোষ্ঠী হিউম্যান রাইটস ফার্স্টের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ব্রিয়ান ডুলি বলেন, এখন পর্যন্ত সামান্য যে তথ্য জানা গেছে, তাতেই ধারণা করা যাচ্ছে, তালেবানের হাতে বায়োমেট্রিকের বিপুল উপাত্ত চলে গেছে কিংবা ভবিষ্যতে সেগুলো তাদের হস্তগত হবে।

হাতে বহনযোগ্য ডিভাইস ব্যবহার করে পিটার কিয়ারনানের মতো সেনারা মার্কিন বায়োমেট্রিক স্টোরে আফগানদের বিপুল তথ্য মজুদ করতেন। এসব যন্ত্রকে বলা হয়, হ্যান্ডহেল্ড ইন্টারএজেন্সি আইডেন্টিটি ডিটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (এইচআইআইডিই)। তিনি বলেন, বোমা-নির্মাতাদের শনাক্ত করতে এসব উপাত্ত কাজে লাগত। এছাড়া মার্কিন সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতা করা স্থানীয় বাসিন্দা ও ঠিকাদারদেরও শনাক্ত করা যাবে এই উপাত্ত দিয়ে।

আশি শতাংশ আফগান নাগরিককে বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসার উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন সামরিক বাহিনীর। অর্থাৎ আড়াই কোটি আফগান নাগরিককে মার্কিন বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে চাওয়া হয়েছিল। যদিও সত্যিকার অর্থে এত সংখ্যক মানুষের উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

মঙ্গলবার নিউজ সাইট ইন্টারসেপ্ট বলছে, সামরিক সূত্র জানিয়েছে যে এইচআইআইডিই নামের ডিভাইসগুলো তালেবানের হাতে চলে গেছে। এসব ডিভাইস দিয়েই বায়োমেট্রিক উপাত্ত সংগ্রহ করা হতো।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, বায়োমেট্রিক উপাত্ত ব্যবহার করে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালাচ্ছে তালেবান। নিউজ সায়েন্টিস্টকে এক আফগান কর্মকর্তা বলেন, এসব বায়োমেট্রিক যন্ত্র এখন তালেবানের হাতে। তবে পিটার কিয়ারনান মনে করেন, ন্যাটো-জোটের বেশ কিছু বায়োমেট্রিক যন্ত্রে তালেবান হয়তো প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু এটিকে নিজেদের কাজে লাগানোর কারিগরি জ্ঞান তালেবানের আছে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

সাংবাদিক ও লেখক অ্যান্নি জ্যাকোবসেন বলেন, এইচআইআইডিই ডিভাইস তালেবানের হাতে চলে গেলেও এই বিপুল তথ্যভাণ্ডারে তাদের প্রবেশ অসম্ভব। আফগান অংশীদারদের এসব তথ্য সরবরাহ করেনি ন্যাটো জোট। এই ডিভাইসের উপাত্ত আফগানিস্তানে মজুদ করে রাখা হয়নি। পেন্টাগনের স্বয়ংক্রিয় বায়োমেট্রিকস শনাক্ত ব্যবস্থায় তা মজুদ আছে।

জটিলতার কারণে জ্যাকোবসনের ভাষায় যা হরেক পদ্ধতির একটি পদ্ধতি। তিনি মনে করেন, তালেবানের তথ্যের সবচেয়ে বড় উৎস সামাজিকমাধ্যম।

এসএইচ-০৫/২০/২১ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)