সাংবাদিক খাসোগি হত্যাকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত প্যারিসে আটক

মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক এবং সৌদি যুবরাজ প্রিন্স সালমানের সমালোচনাকারী জামাল খাসোগিকে হত্যাকাণ্ডের সংগে জড়িত এক অভিযুক্তকে ফ্রান্সের প্যারিস থেকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি।

মঙ্গলবার ফ্রান্সের সংবাদ মাধ্যমগুলোর বরাতে বিবিসি জানায়, খালেদ আবেহ আল ওতাইবি নামের ওই অভিযুক্তকে প্যারিসের চার্লস দ্য গল বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়েছে।

খাসোগি হত্যার ঘটনায় তুরস্ক ঘোষিত ২৬ জন অভিযুক্তের মধ্যে খালেদ আবেহ আল ওতাইবি অন্যতম। ৩৩ বছর বয়স্ক এই সাবেক সৌদি রয়াল সেনাবাহিনীর সদস্য স্ব নামেই ভ্রমণ করছিলেন। তাকে বর্তমানে ফ্রান্সের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে আটক রাখা হয়েছে।

মদিনায় ১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণকারী জামাল খাসোগি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে পড়াশোনা করেন। এরপর সৌদি আরবে ফিরে আশির দশকে তিনি সাংবাদিক হিসাবে পেশাজীবন শুরু করেন।

আঞ্চলিক একটি সংবাদপত্রের হয়ে তিনি আফগানিস্তানে সোভিয়েত অভিযান কাভার করেন। নব্বইয়ের দশকে তিনি স্থায়ীভাবে সৌদি আরবে ফিরে আসেন। ১৯৯৯ সালে তিনি ইংলিশ ভাষার আরব সংবাদপত্র আরব নিউজে উপ-সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।

তিনি লন্ডনে এবং ওয়াশিংটনে সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স তুর্কি বিন-ফয়সালের মিডিয়া উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেন। সৌদি আরব সম্পর্কিত বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কণ্ঠ হিসাবে বিবেচিত খাসোগি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও নিয়মিত প্রদায়ক হিসাবে কাজ করতেন। ২০১৭ সালের গ্রীষ্মে সৌদি আরব ত্যাগ করেন সাংবাদিক জামাল খাসোগজি।

ওয়াশিংটন পোস্টে তার প্রথম লেখায় তিনি লেখেন, তিনি এবং আরো কয়েকজন স্বেচ্ছা নির্বাসনে এসেছেন, কারণ তাদের ভয়, তাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে। তিনি বলেছেন, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সংস্কার বিষয়ে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরোধিতা করায় অসংখ্য মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এছাড়া ধারাবাহিক ভাবে প্রিন্স সালমানের বিরুদ্ধে লেখা প্রকাশ করতে থাকেন। এতে তিনি সৌদি যুবরাজ প্রিন্স সালমানের বিরাগভাজন হন। ২০১৮ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের একটি সনদ নেয়ার জন্য তুরস্কের সৌদি দূতাবাসে প্রবেশে করেছিলেন সাংবাদিক জামাল খাসোগি।

সেখানে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর লাশ কেটে টুকরা টুকরা করে গায়েব করে দেওয়া হয়। তাঁর দেহাবশেষ আর পাওয়া যায়নি। সৌদি আরব প্রথমে খাসোগি খুন হওয়ার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করে। পরে তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়। খাসোগিকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শুরু থেকেই সৌদির মোহাম্মদ বিন সালমানকে সন্দেহ করা হয়।

সৌদির যুবরাজ এই হত্যায় তাঁর সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন। তবে সৌদির শাসক হিসেবে তিনি এই হত্যার দায় এড়াতে পারেন না বলে স্বীকার করেন। খাসোগি হত্যার দায়ে সৌদির আদালত দেশটির পাঁচজন নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে খাসোগির পরিবার হত্যাকারীদের মাফ করে দিলে তাঁদের সাজা কমিয়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড করা হয়।

এদিকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যাকাণ্ড নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন প্রশাসন গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে প্রতিবেদনে বলা হয়, খাসোগিকে হত্যার অভিযানে সরাসরি অনুমোদন দিয়েছিলেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরপরই সৌদি আরবের ৭৬ জন নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্র জানায়নি। পরে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই প্রথম প্রকাশ করা প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেওয়া হয়। তার বদলে প্রতিবেদনটির আরেকটি সংস্করণ প্রকাশ করা হয়।

এসএইচ-৩০/০৭/২১ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)