শ্রীলঙ্কায় সংঘর্ষে আটক ৪০০, ফের কারফিউ জারি

শ্রীলঙ্কায় গত সপ্তাহে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে অন্তত চারশ’ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে রোববারই (১৫ মে) আটক করা হয় ১৫৯ জনকে। এদিকে বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে কারফিউ তুলে নেয়া হলেও শ্রীলঙ্কাজুড়ে আবারও কারফিউ জারি করা হয়েছে। খবর কলম্বো গেজেট ও আদাদেরানার।

শ্রীলঙ্কায় চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভ-আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত সপ্তাহে (০৯ মে) রাজধানী কলম্বোসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। মূলত সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সরকারসমর্থকদের উস্কানিমূলক হামলার পর সংঘর্ষ শুরু হয়।

ওই সংঘর্ষের ঘটনার জেরেই এখন পর্যন্ত ৩৯৮ জনকে আটক করা হয়েছে। দেশটির পুলিশের মুখপাত্র এএসপি নিহাল থালদুওয়া জানান, রোববার সন্দেহভাজন হিসেবে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে কারফিউ লঙ্ঘন, সরকারি-বেসরকারি সম্পদ ধ্বংস ও লুট করার অভিযোগ আনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পুলিশের মুখপাত্র আরও জানান, আটক ১৫৯ জনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে তোলার পর ১০১ জনকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, সম্পত্তি ও যানবাহনের ক্ষতি সংক্রান্ত ৭৫৬টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে শ্রীলঙ্কাজুড়ে আবারও কারফিউ জারি করা হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সোমবার রাত ১১টা থেকে কারফিউ কার্যকর হবে। মঙ্গলবার (১৭ মে) ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ বহাল থাকবে।

বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পুর্ণিমা পালনের জন্য রোববার শ্রীলঙ্কাজুড়ে জারি থাকা কারফিউ তুলে নেয়া হয়। বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশটিতে এদিন সবকিছু ভুলে প্রার্থনা ও উৎসবে মেতে ওঠেন নাগরিকরা।

চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে দুর্দশাগ্রস্ত শ্রীলঙ্কার বাসিন্দাদের জীবনে খানিকটা শান্তির পরশ নিয়ে আসে বুদ্ধ পূর্ণিমা। এদিন দেশটির রাস্তাজুড়ে বিভিন্ন রকমের রং বেরংয়ের আলোকসজ্জা নিয়ে আসে বাহারি চমক। অনেক সরকারি বেসরকারি ভবনে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতীক নানা রঙয়ের পতাকা উড়তে দেখা যায়।

অধিবাসীরা সাদা রংয়ের পোশাক পরে মন্দিরে প্রার্থনা করতে যান। করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর এবার উদযাপিত হয় বৌদ্ধ পূর্ণিমা। এ উপলক্ষে সবার প্রার্থনা খুব দ্রুতই যেন তাদের দেশের শনির দশা কেটে যায়।

এদিকে বছরের এই সময়টাতে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার নেগোম্ব শহর যেখানে পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত থাকে সেখানে এখন সুনশান নিরবতা। সমুদ্র সৈকতের ধারে বন্ধ দোকানপাট। হোটেল হোক বা রেঁস্তোরা কোথাও নেই ভ্রমণপিয়াসুদের আলামত। এতে পর্যটনের ওপর ভিত্তি করে যাদের জীবিকা নির্বাহ হয় তারা পড়েছেন চরম বিপাকে।

অর্থনীতি কার্যত অচল হয়ে পড়ায় গত সোমবার শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে বিক্ষোভে জড়ো হয় লাখো জনতা। সরকারসমর্থকরা আন্দোলনকারীদের মারধর শুরু করলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। শুরু হয় সংঘর্ষ।

প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে চলা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এরপর দুইদিনের সহিংসতায় দেশটিতে ৯ জন নিহত হন। আহত হন অন্তত তিনশ’ জন। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করে দেশটির সরকার। এমনকি বিশৃঙ্খলাকারীদের দেখামাত্রই গুলি করারও নির্দেশ দেয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর প্রথমবারের মতো নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশটি। করোনা মহামারি সামাল দিতে না পারায় আরও নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয় দেশটিতে। যার ফলে বেড়ে যায় তেল, গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষ।

এসএইচ-১৭/১৬/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)