প্রথমবারের মতো ঋণখেলাপি শ্রীলঙ্কা

৭০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বাজে আর্থিক সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। ঋণ পরিশোধে ৩০ দিনের অতিরিক্ত সময় দেওয়া হলেও বুধবার সেই সময় পার হয়ে গেছে। অপরিশোধিত থেকেছে ৭৮ মিলিয়ন ডলারের ঋণ। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলছেন, তার দেশ এখন ‘প্রি-এমটিভ ডিফল্ট’ হয়ে পড়েছে। পরে বৃহস্পতিবার (১৯ মে) বিশ্বের শীর্ষ দুই ঋণ রেটিং সংস্থাও জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কা ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে।

কোনো সরকার যখন ঋণদাতাদের ঋণের কিছু অংশ বা পুরোটা পরিশোধে ব্যর্থ হয় তখন সেই সরকারকে খেলাপি বলা হয়। এতে বিনিয়োগকারীদের কাছে দেশটির সুনাম নষ্ট হয়, প্রয়োজনের সময় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ঋণ সংগ্রহ কঠিন হয়ে যায়। এতে দেশটির মুদ্রা এবং অর্থনীতির আরও বেশি ক্ষতি হয়।

শ্রীলঙ্কা খেলাপি হয়ে পড়েছে কিনা জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার (১৯ মে) দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পি নন্দলাল বীরসিংহে বলেন, আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, আমরা বলেছি যতক্ষণ তারা (ঋণ) পুনর্গঠনের আওতায় আসবে না, ততক্ষণ আমরা পরিশোধ করতে সক্ষম হব না। সে কারণে যেটা হচ্ছে সেটারেক প্রি-এমটিভ ডিফল্ট বলা যেতে পারে।

নন্দলাল বীরসিংহে আরও বলেন, টেকনিক্যাল ব্যাখ্যাও দেওয়া যেতে পারে… তাদের দিক থেকে তারা এটাকে খেলাপি বিবেচনা করতে পারে। আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট, যতক্ষণ ঋণ পুনর্গঠন হচ্ছে না, ততক্ষণ আমরা পরিশোধ করতে পারব না।

এ মুহূর্তে শ্রীলঙ্কা বিদেশি দাতাদের কাছ থেকে নেওয়া ৫০ বিলিয়নের বেশি ডলারের ঋণ পুনর্গঠন করতে চাইছে। তাদের দাবি এ ঋণ পরিশোধের শর্ত তাদের জন্য আরও বেশি সহজ করতে হবে।

এদিকে ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হওয়া শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভায় ৯ জন নতুন মন্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার তাদের নিয়োগ দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সামনে শপথ নেন তারা।

সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের চাপে চলতি মাসে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে গত সোমবার (৯ মে) পদত্যাগ করার পর অভিজ্ঞ রাজনীতিক পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় সদস্য রনিল বিক্রমাসিংহকে ওই পদে নিয়োগ পান। স্থানীয় সময় ১২ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে শপথ নেন রনিল বিক্রমাসিংহে। ৭৩ বছর বয়সী অভিজ্ঞ এ রাজনীতিবিদ শ্রীলঙ্কার ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা। সহিংস বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে গত ৯ মে পদত্যাগ করার পর তার স্থলাভিষিক্ত হন তিনি।

বৈদেশিক ঋণে জর্জরিত দেশটি রিজার্ভে মুদ্রা না থাকায় জ্বালানি, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে পারছে না। এ অবস্থায় আরও এক শঙ্কার কথা জানিয়েছেন সেখানকার চিকিৎসকরা। রিজার্ভে বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে অতি প্রয়োজনীয় ওষুধও আমদানি করতে পারছে না দেশটি।

বলা হচ্ছে, কোভিড মহামারিতে পর্যটন খাত থেকে আয় শূ্ন্যে নেমে যাওয়া, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এবং জনগণের মন জয় করতে রাজাপাকসে সরকারের কর কর্তন শ্রীলঙ্কার আজকের পরিস্থিতির জন্য মূলত দায়ী।

এসএইচ-০৯/২০/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)