ইমরান খানের সাবেক মন্ত্রী ১০ ঘণ্টা পুলিশি হেফাজতে

পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ও সাবেক মানবাধিকারমন্ত্রী শিরিন মাজারিকে মারধরের পর গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। শনিবার তার মেয়ে ইমান জয়নব মাজারি এক টুইটবার্তায় এ তথ্য জানান। তবে গ্রেফতারের ১০ ঘণ্টা পর তাকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন ইসলামাবাদ হাইকোর্ট।

দিনভর নাটকীয়তা শেষে অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। শিরিন মাজারির বিরুদ্ধে সরকারকে বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশও দিয়েছেন হাইকোর্ট। খবর গার্ডিয়ান ও ডনের।

রাজনপুর জেলায় জমি দখলের মামলায় তাকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে মামলাটি জেলা প্রশাসক রাজনপুরের অনুরোধে দায়ের করা হয়। এরপর দুর্নীতি দমন সংস্থা পাঞ্জাব শিরিনের বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করে।

বিভিন্ন সূত্রের খবরে জানা গেছে, শনিবার রাতেই মুক্তি দেওয়া হয়েছে শিরিন মাজারিকে। রোববার ভোরে বাড়ি পৌঁছান তিনি। আদালত পিটিআই নেতার মোবাইল ফোন ও অন্যান্য জিনিসপত্র ফেরত দিতেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রাথমিক শুনানিতে মাজারি আদালতকে বলেন, ‘এক ঘণ্টার জন্য মোটরওয়েতে আমাকে আটকে রাখা হয়েছিল। একজন পুরুষ চিকিৎসক আমার পরীক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন। তাদের সঙ্গে কোনো নারী কর্মকর্তা ছিলেন না। পাঞ্জাবের দুর্নীতি দমনের কর্মকর্তারা ফোনে নির্দেশ নিচ্ছিলেন। আমার ব্যাগটিও তল্লাশি করা হয় এবং এখনও আমার ফোন ফেরত দেওয়া হয়নি।’

গ্রেফতারের পর টুইটারে ইমান জয়নব বলেছিলেন, আমাকে জানানো হয়েছে লাহোর দুর্নীতি দমন শাখা তাকে (শিরিন মাজহারি) নিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আমার মাকে পুলিশ কর্মকর্তারা মারতে মারতে নিয়ে গেছেন। মায়ের কিছু হলে তাদের কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না।

তিনি অভিযোগ করেন, তাদের পরিবারের কাউকে আগে থেকে না জানিয়েই তার মাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, সে ঘটনাকে ‘অপহরণ’ হিসেবে বর্ণনা করতে চান ইমান জয়নব।

পাকিস্তানের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, শিরিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার তথ্য পাকিস্তানের দুর্নীতি দমন সংস্থার পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছিল।

সাবেক মানবাধিকারবিষয়ক মন্ত্রী শিরিন মাজারি পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাজধানী ইসলামাবাদে শিরিনের বাসভবনের কাছ থেকে তাকে গাড়ি থেকে টেনে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। বিরোধী নেতৃত্বাধীন সংসদীয় অনাস্থা ভোটে এপ্রিলের শুরুতে ইমরান খানের প্রায় চার বছরের পুরনো সরকারের পতন ঘটে। তার আগ পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

শিরিনকে গ্রেফতারের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এতে দেখা যায়, নারী পুলিশ কর্মীরা তাকে টেনে গাড়িতে তুলছেন। এ সময় শিরিন বলছেন, আমাকে স্পর্শ করবেন না।

মাজারির বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। ডনের খবর থেকে ধারণা পাওয়া যায়, ৫০ বছরের পুরনো একটি সন্দেহজনক সম্পত্তি আয়ত্বে রাখার মামলায় শিরিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাজনপুর জেলায় ওই জমি দখলের কারণে গত ১১ মার্চ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা চলতি বছরের ৮ এপ্রিল মামলার প্রতিবেদন তৈরি করেন। এর আলোকে দুর্নীতি দমন সংস্থা ২০১৪ সালের বিধি মোতাবেক ফৌজদারি মামলা দায়ের করে। সেই মামলাতেই শিরিন মাজারিকে গ্রেফতার করা হয়। সে সময় রাজনপুরের ভূমি কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

মাজারির গ্রেফতারের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের নিরপেক্ষ মানবাধিকার কমিশন টুইটারে বলেছে, তার গ্রেফতার রাজনৈতিক নিপীড়নের স্মারক, যা দুঃখজনকভাবে একটি আবদ্ধ অভ্যাস হয়ে উঠেছে এবং যে দলই অপরাধী হোক না কেন তা নিন্দনীয়। মাজারিকে গ্রেফতার এবং তাকে টানা-হ্যাঁচড়া করারও নিন্দা ও অবিলম্বে ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছে তারা।

পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সিনেটর মোস্তফা নওয়াজ খোখার এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বলেন, তার গ্রেফতারের ঘটনাটি দুঃখজনক। এটি রাজনৈতিক নিপীড়নের সবচেয়ে খারাপ রূপ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টের আইনি উপদেষ্টা রীমা ওমর বলেন, গ্রেফতারের ঘটনাটি দুঃখজনক। এটি বেআইনি আচরণ, স্পষ্ট হয়রানি এবং মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) ও পিপিপি’র নেতা নাফিসা শাহ বলেন, শিরিনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তাকে গ্রেফতার করা ভুল।

জিও’র খবরে বলা হয়েছে, গ্রেফতার পিটিআই’র জ্যেষ্ঠ নেত্রী শিরিন মাজারিকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হামজা শরিফ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, নারী হিসেবে শিরিন মাজারি সম্মান পাওয়ার যোগ্য। কোনো নারীকে গ্রেফতার করা আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে বেমানান। তদন্তের কারণে গ্রেফতার অনিবার্য হয়ে উঠলে আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। দুর্নীতি দমন সংস্থার যে ব্যক্তি মাজারিকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও টুইটারে শাহবাজ সরকারের নিন্দা জানিয়েছেন।

এসএইচ-০৯/২২/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)