শ্রীলঙ্কায় পার্লামেন্ট নির্বাচন মার্চে

কয়েক মাসের বিক্ষোভ আর বিশৃঙ্খলার পর শ্রীলঙ্কার রাজপথ এখন অপেক্ষাকৃত শান্ত। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পলায়ন আর প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে সরকারের পতনে দেশজুড়ে চলছে আনন্দ-উল্লাস। বুধবার পদত্যাগ করবেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। এরপর আগামী বছর মার্চে হবে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন। সিনিয়র রাজনৈতিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে শ্রীলঙ্কান সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মিরর।

রাজনৈতিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলা হয়েছে, বুধবার (১৩ জুলাই) স্পিকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করবেন প্রেসিডেন্ট। এর আগে শনিবার (৯ জুলাই) রাতে স্পিকার ঘোষণা করেন, বুধবার পদত্যাগ করবেন প্রেসিডেন্ট। তবে তিনি আসলেই পদত্যাগ করবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল।

তবে দেশজুড়ে বিক্ষোভের পর প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে আলোচনায় বসেন। সেখানে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া নিশ্চিত করেন পদত্যাগ করবেন তিনি। গোতাবায়া শনিবার (৯ জুলাই) পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেওয়ার্দেনাকে জানিয়ে দেন, আগামী বুধবার (১৩ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে তিনি কোথায় আছেন, এখনো অজ্ঞাত।

এদিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে বের হয়ে আসতে শ্রীলঙ্কায় একটি সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বিরোধী দলগুলো। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের পদত্যাগের ঘোষণার পর রোববার (১০ জুলাই) এক বৈঠকে ওই ঐকমত্যে পৌঁছান নেতারা।

বৈঠকে ক্ষমতাসীন শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনা পার্টির (এসএলপিপি) বিদ্রোহী অংশের নেতারাও অংশ নেন। বৈঠকে তারা নতুন সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করেন। সেই সঙ্গে সংকট থেকে বেরিয়ে আসার বিভিন্ন উপায় নিয়েও কথা বলেন তারা।

ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশটিতে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করায় গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শনিবার (৯ জুলাই) পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ও প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে। এরপর নতুন সরকার গঠনে কাজ শুরু করে বিরোধী দলগুলো।

বৈঠকের পর ক্ষমতাসীন এসএলপিপির সংস্কারপন্থি নেতা বিমল বীরাওয়ানসা বলেন, ‘আমরা সব দল নিয়ে একটা সর্বদলীয় ঐকমত্যের সরকার গঠনের ক্ষেত্রে একমত হয়েছি। এটা এমন একটা সরকার হবে, যেখানে সব দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।’

এদিকে প্রধান বিরোধী দল সঙ্গী জানা বালাওয়েগায়া পার্টি (এসজেবি) জানিয়েছে, সরকার গঠন বিষয়ে তারা নিজেদের মধ্যে জোর আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

এসজেবির সাধারণ সম্পাদক রনজিথ মাদ্দুমা বানদারা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য সব দলের অংশগ্রহণে একটা ঐকমত্যের সরকার গঠন। এরপরই আমরা সংসদ নির্বাচনে যেতে চাই।’

প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী উভয়ের পদত্যাগের পর শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুসারে, পার্লামেন্ট স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেওয়ার্দেনা ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সে ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

কয়েক মাসের বিক্ষোভ আর বিশৃঙ্খলার পর শ্রীলঙ্কার রাজপথ এখন অপেক্ষাকৃত শান্ত। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পলায়ন আর প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে সরকারের পতনে দেশজুড়ে চলছে আনন্দ-উল্লাস। এখন নতুন একটি সরকারের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে জনগণ। তাদের প্রত্যাশা: জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক নতুন সরকারের হাত ধরে দেশে সত্যিকার পরিবর্তন আসবে।

নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় কয়েক মাস ধরেই বিক্ষোভ চলছে। দেশের বর্তমান অবস্থার জন্য রাজাপাকসে সরকারের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করে জনগণ। আর এ জন্য সরকার পতনের দাবিতে গত মার্চ মাসে বিক্ষোভ শুরু হয়।

মে মাসের শুরুর দিকে আন্দোলন আরও জোরালো হয়ে ওঠে। প্রচণ্ড চাপের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। সংকট মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন রনিল বিক্রমাসিংহে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা শান্ত হননি। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে তারা।

শনিবার (৯ জুলাই) রাজধানী কলম্বোয় গণবিক্ষোভের ডাক দেয়া হয় এবং সারা দেশের মানুষকে সেই বিক্ষোভে অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার বিকেল থেকেই কলম্বোজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়।

৯ জুলাই সকালেই রাজধানী কলম্বোয় জড়ো হয় লাখো বিক্ষুব্ধ জনতা। একজোট হয়ে পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে প্রথমে প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ও পরে নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের বাসভবনে ঢুকে পড়ে। অবশ্য বিক্ষোভকারীদের প্রবেশের আগেই উভয় নেতাকেই তাদের বাসভবন থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়।

তবে বিক্ষোভকারীরা এখনো পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছে না। তারা বলছে, প্রেসিডেন্ট গদি না ছাড়া পর্যন্ত সরকারি বাসভবন ছাড়বে না। বিক্ষোভকারীদের একাংশের নেতা রুয়ান্থি ডি চিকারা বলেন, ‘প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগ করতে হবে ও এই সরকারকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে।’

এসএইচ-০৮/১১/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)