শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে আহত ১০

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন টেম্পল ট্রিতে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের ঘটনার পর হাসপাতালে ১০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার (৯ জুলাই) বিক্ষোভকারীরা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে মন্দিরের গাছগুলো দখলে নেয়। এরপর সেখানে গানবাজনার আয়োজনও করেন তারা। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট প্যালেস, প্রেসিডেন্সিয়াল সচিবালয়ও দখলে নেয় তারা। এরপর তারা প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের বাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেন।

গেল কয়েক দিনের নজিরবিহীন বিক্ষোভ আর সহিংসতার পর এখন অনেকটাই শান্ত শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো। যদিও পদত্যাগের ঘোষণার পরও প্রেসিডেন্টের বাসভবন ছেড়ে যায়নি বিক্ষুব্ধ জনতা। গোতাবায়ার ভবনে লাখ লাখ রুপির সন্ধান পাওয়ার খবরও শিরোনাম হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেও।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, তীব্র আন্দোলনের জেরে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও শিগগিরই কাটছে না ভয়াবহ অথনৈতিক সংকট। শুধু তাই নয়, এ ঘটনায় দেশটি নেতৃত্বসংকটে পড়তে যাচ্ছে বলেও মনে করেন অনেকে।

আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দুই দশক ধরে চলা রাজাপাকসে পরিবারের রাজনৈতিক প্রতিপত্তির অবসান ঘটলেও এ ঘটনার মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে বলেও আশঙ্কা তাদের।

বিশ্লেষকদের মতে, চলমান এ সংকট নিরসনে সামরিক বাহিনী এবং পুলিশকে অবশ্যই সহনশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। চলমান পরিস্থিতিতে সংকট সৃষ্টি না করে বরং তা সমাধানে অংশীদার হতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন সঠিক দিকনির্দেশনা, দুর্নীতিমুক্ত সরকার, রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ানো, জমাকৃত রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ানোসহ কার্যকরী নানা পদক্ষেপ। আর এই সবকিছুই যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ বিষয়।

ইতোমধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, আগামী ১৫ জুলাই পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকা হবে। আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে ২০ জুলাই। সোমবার (১১ জুলাই) পার্লামেন্টের স্পিকার এমনটাই জানান। জানা গেছে, বুধবারই (১৩ জুলাই) পদত্যাগ করবেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। এরপরই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে।

বিরোধীরা সর্বদলীয় সরকার গঠনের উদ্যোগ নেয়ায় ভবিষ্যতে সরকারের মধ্যেই মতবিরোধ দেখা দেয়ার আশঙ্কাও তাদের। এতে হুমকির মুখে পড়তে পারে দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসলে, সেনা অভ্যুত্থানের আশঙ্কা রয়েছে বলেও মত আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের।

স্বাধীনতার পর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাপক মূল্যস্ফীতির মুখে পড়ে দেশটি।

একসময় দেখা দেয় তীব্র খাদ্য ও জ্বালানিসংকটসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাল ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সাধারণ মানুষ।

এসএইচ-০৬/১২/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)