বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে সম্পৃক্ত ৮ মালয়েশীয় কর্মকর্তা গ্রেফতার

বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের সঙ্গে সম্পৃক্ত মালয়েশিয়ার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক কোম্পানি বেস্টিনেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (সিইও) মোট ৮ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিয়োগদাতা ও এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে ঘুষগ্রহণের অভিযোগে তাদের আটক করেছে মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশন মালয়েশিয়ান অ্যান্টি-করাপশন কমিশন (এমএসিসি)। বুধবার মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যম ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে এ খবর জানিয়েছে।

বেস্টিনেট মূলত একটি তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গেও কাজ করে থাকে। তবে অভিযোগ রয়েছে, এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন অপতৎপরতায় লিপ্ত। বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের মধ্যে আলোচনা শুরু হলে আবারও তৎপর হয়ে ওঠে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ থেকে কলিং ভিসায় কর্মী নিয়োগে যে ২৫ এজেন্সি চুড়ান্ত করা হয়েছে তাতে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন মালয়েশিয়ার একাধিক নিয়োগকর্তা ও এনজিও সংস্থা। গত সপ্তাহে এনজিও সংগঠন এখলাস মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানানের বিরুদ্ধে মামলা করার পর তদন্তে নামে দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক।

এমএসিসির একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে জানায়, ঘুষ-দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বেস্টিনেটের প্রধান নির্বাহীসহ ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই নারীও রয়েছে। প্রতি শ্রমিকের জন্য ৮০০ রিঙ্গিত থেকে ১ হাজার ৫০০ রিঙ্গিত পর্যন্ত (বাংলাদেশি টাকায় ১৭ হাজার থেকে ৩২ হাজার টাকা পর্যন্ত) ঘুষ নিয়েছে তারা।

গণমাধ্যমের রিপোর্টমতে, গত মে মাস থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৮৬১টি আবেদন প্রক্রিয়া করেছে বেস্টিনেট। একটি সূত্র জানিয়েছে, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মূল হোতা হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ার দাতো মোহাম্মদ আমিনকেও গ্রেফতার করেছে এমএসিসি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের জন্য বেস্টিনেট ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে (এফডব্লিউসিএমএস) ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু এই কাজে প্রতি শ্রমিকের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রহণের অভিযোগে মালয়েশিয়া সরকার এই নিয়োগ স্থগিত করে। সে সময় বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগের জন্য মালয়েশিয়া সরকার ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির একটি সিন্ডিকেটকে অনুমতি দেয়।

বেস্টিনেটের কর্মকর্তাদের আটকের এ ঘটনা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের জন্য ২ দেশের সরকার কাজ করলেও এই কাজে মালয়েশিয়া সরকার প্রস্তাবিত ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেশনের অভিযোগ আছে। বাংলাদেশ সরকারসহ বেশিরভাগ রিক্রুটিং এজেন্সি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এই সিন্ডিকেশনের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। কারণ, এতে অভিবাসন খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের নির্যাতিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এসএইচ-১৯/০৪/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)