চারদিনের মধ্যে দুবার মেজাজ হারান ব্রিটিশ রাজা

সিংহাসনে আরোহণের চারদিনের মধ্যে দুবার মেজাজ হারিয়েছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। আর দুবারই কলমের কালি নিয়ে। উত্তর আয়ারল্যান্ডের হিলসবারো প্রাসাদে ক্যামেরার সামনে দর্শণার্থী বইয়ে সই করছিলেন তিনি। কিন্তু কলমের কালি বেরিয়ে তার হাতে লাগলে তিনি খেপে যান। কোনো রাখঢাক না রেখে প্রকাশ্যেই সেই ক্ষোভ ঝাড়লেন তিনি।

ক্ষুব্ধ রাজা কলমটি তার স্ত্রী কুইন কনসোর্ট ক্যামিলাকে দিতে দিতে বললেন, ‘হায় ঈশ্বর, আমি এটাকে (কলম) অপছন্দ করি।’ অর্থাৎ খুবই বাজে ব্যাপার ঘটে গেল। ক্যামিলাও বললেন, ‘ইশ! সব জায়গায় কালি ছড়িয়ে পড়ছে।’ চার্লস তখন বলেন, ‘এসব নোংরা জিনিস আমি দেখতে পারি না…একেবারেই বাজে একটা সময়।’ এরপর সেদিন কত তারিখ ছিল, এক সহযোগীর কাছে তা জানতে চাইলেন নতুন ব্রিটিশ রাজা।

মঙ্গলবার নথিতে সই করছিলেন রাজা তৃতীয় চার্লস। কিন্তু তিনি ভুল তারিখ ব্যবহার করছিলেন। সহযোগী বললেন, সেদিন ছিল ১৩ সেপ্টেম্বর, ১২ সেপ্টেম্বর ছিল না। যদিও চার্লস ভেবেছিলেন, দিনটি ১২ সেপ্টেম্বর। এর কয়েকদিন আগের ঘটনা। লন্ডনের অ্যাকসেশন কাউন্সিলে কলমদানি রাখা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি। অনেকটা বিতৃষ্ণা নিয়ে সেটিকে সরিয়ে ফেলতে বলেন রাজা। সেই ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই নতুন রাজার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

স্কাই নিউজের প্রতিবেদক জনাথন লিয়া বলেন, ‘সিংহাসনে বসতে না-বসতেই ‘বদমেজাজের’ জন্য বদনাম কুড়িয়েছেন ব্রিটেনের নতুন রাজা। যেটা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মধ্যে কখনও ছিল না। মনে রাখবেন, আমরা কখনোই রানির মুখে এভাবে ক্যামেরা ধরে রাখতে দেখিনি। রাজাকে নিয়ে ছোট্ট একটি কথা বলতে চাই—তাকে দেখেই বোঝা যায়, তিনি মারাত্মক চাপে আছেন।’

রানির মৃত্যুর পর সারা পৃথিবীর মানুষের নজর রাজ পরিবারের দিকে। এতে চার্লসের ওপর নজিরবিহীন চাপ তৈরি হয়েছে। তার মেজাজ হারানো নিয়ে কথা বলার আগে তা বিবেচনায় রাখারও অনুরোধ করেন ভাষ্যকারেরা।

টকটিভির সঞ্চালক জুলিয়া হার্টলি-ব্রিউয়ার বলেন, রাজা চার্লসের ক্ষোভ ও বিরক্তির কিছুটা আমরা দেখেছি। আমি মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতি মাথায় রাখলে বিষয়টি সহজেই আমরা বুঝতে পারব। আগেও কলমদানি নিয়ে তিনি একবার বিরক্তি ঝেড়েছিলেন।

রাজপরিবার নিয়ে সংবাদ কাভার করা সাংবাদিক রুপার্ট বেল বলেন, রাজা চাচ্ছেন সবকিছুই ভালোভাবে চলুক। কিন্তু এমন সময় ভুলগুলো হচ্ছে, যখন গোটা সংবাদমাধ্যমের নজর তার দিকে। কিন্তু রানিকে কখনোই এভাবে মেজাজ হারাতে দেখেননি বলে জানান জুলিয়া হার্টলি-ব্রিউয়ার। তার মতে, রানির মৃত্যুর শোক, তারপর সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক নজরদারির মারাত্মক চাপ থেকেই এমন আচরণ করছেন রাজা তৃতীয় চার্লস।

চলতি সপ্তাহে ইউগভের এক জরিপে দেখা গেছে, বিপুল সমর্থন নিয়ে সিংহাসনে বসেছেন রানির এক সময়ের অজনপ্রিয় ছেলে ও উত্তরসূরি চার্লস। ৬৩ শতাংশ মানুষ বলছেন যে, তিনি তার কাজটি ভালোভাবেই করছেন।

৭৩ বছরে পা দিতে যাওয়া রাজা তৃতীয় চার্লসের সামনে বড় চ্যালেঞ্জটি হলো: উইন্ডসর হাউজের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা। কিন্তু এলিজাবেথের চেয়ে তার জনপ্রিয়তা একেবারেই কম। যেটা তাকে অসুবিধায় ফেলে দিতে পারে। বদমেজাজ ছাড়াও অদূরদর্শিতা রয়েছে তার।

তবে রানির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ইতি ঘটতে যাচ্ছে বলে কেউ মনে করছেন না। কিন্তু যারা রাজতন্ত্রের অবসান চান কিংবা যুক্তরাজ্যকে প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাচ্ছেন বহুদিন ধরে—চার্লসের সিংহাসনে আরোহণ তাদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে।

নিজের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে এরইমধ্যে জোর পদক্ষেপ নিয়েছেন চার্লস। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং ওয়েলসে তিনি সফর করেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করেন, কথা বলেন। ১৯৭০-এর দশকে মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের এ পন্থা জনপ্রিয় করে তোলেন রানি। মানুষের কাছে পৌঁছাতে তাদের কাছে যান। হাত বাড়িয়ে তাদের খোঁজ-খবর নেন।

এরইমধ্যে ব্রিটেনে রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতারের খবর এসেছে। এনিয়ে মানবাধিকারকর্মীরাও সতর্ক করে দিয়েছেন। ওয়াশিংটন পোস্টের খবর বলছে, রাজার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও রাজতন্ত্রবিরোধী প্রতীক সঙ্গে রাখার অভিযোগে লোকজনকে তুলে নিয়ে গেছে ব্রিটিশ পুলিশ।

বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের ধরপাকড়ে যুক্তরাজ্যে বাকস্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। টুইটারে ‘নটমাইকিং’ হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডিং হতে দেখা গেছে। ‘রানির মৃত্যুকে রাজতন্ত্রের অবসান’ হিসেবে যারা দেখছেন, তাদের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন আইনপ্রণেতারা।

ব্রিটিশ এমপি জারাহ সুলতানা বলেন, প্রজাতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করায় কাউকে গ্রেফতার করা উচিত না। যা অস্বাভাবিক—এবং বেদনাদায়ক—এগুলো বলার দরকার আছে।

রাজতন্ত্রবিরোধীদের প্রথম গ্রেফতারের খবর আসে গত ১১ সেপ্টেম্বর। তখন যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় চার্লসকে রাজা ঘোষণা করে প্রথম নথি জোরে জোরে পড়া হচ্ছিল। অক্সফোর্ডে সিমোন হিল নামের ৪৫ বছর বয়সি এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি চিৎকার করে বলছিলেন, ‘কে তাকে (চার্লস) নির্বাচিত করেছে?’ এরপর পুলিশ তাকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু কেন তাকে এভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা বলেনি।

হ্যাশট্যাগ নটমাইকিং চালু করা হলেও এ সংক্রান্ত তৎপরতাও সীমিত করা হয়েছে। রিপাবলিক নামের একটি গ্রুপের মুখপাত্র গ্রাহাম স্মিথ বলেন, প্রয়াত রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর আমরা পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করে দেব। রানি মারা যাওয়ার পর কয়েক হাজার লোক তাদের সঙ্গে নতুন করে যোগ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, গেল কয়েক বছরে রাজতন্ত্রের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। আর এতদিন স্বয়ং রানি ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু চার্লস কোনোভাবেই পরিস্থিতি বদলানোর মতো সামর্থ্য রাখেন না। তার সেই হিম্মত নেই।

এতদিন লোকজন সরাসরি রানির সমালোচনায় অনিচ্ছুক ছিলেন বলেও জানান গ্রাহাম স্মিথ। তার মতে, চার্লস সেই সুযোগ পাবেন না। চার্লস নিতান্তই একজন প্রভাবহীন মানুষ। তার প্রতি মানুষের কোনো টান নেই। আর তাদের রক্ষাকবচ রানিও পরলোকগমন করেছেন। এতে মানুষ আরও বেশি রাজতন্ত্রবিরোধী হয়ে উঠবেন।
গেল মে মাসে ইউগভের জরিপ বলছে, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের মধ্যে ২৪ শতাংশ বলছেন যে, তাদের একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান থাকা দরকার। কিন্তু ৩৩ শতাংশের মতে বর্তমান রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা চলমান থাকুক। আবার বয়স্কদের বড় অংশই চাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের বর্তমান শাসনব্যবস্থাই ঠিক আছে। অর্থাৎ তারা রাজতন্ত্রের পক্ষেই নিজেদের সায় দিয়েছেন।

এডিনবার্গে রানির কফিনে শ্রদ্ধা জানাতে ফুল নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন ১৯ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ক্যাটি ফোর্ড। তিনি বলেন, আমি রাজতন্ত্রের ইতিহাস বুঝতে পারছি। সমাজে তাদের গুরুত্বও বুঝি। কিন্তু যখন বহু মানুষ সংকটের মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন, তখন এতো বিপুল অর্থ খরচকে ভালো কিছু বলতেও কষ্ট হচ্ছে।
রাজতন্ত্রের জনপ্রিয়তা কম

জরিপে দেখা গেছে, সার্বিক হিসাবে ব্রিটেনের তুলনায় স্কটল্যান্ডে রাজতন্ত্রের জনপ্রিয়তা কম। তবে যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীন হলেও রাজতন্ত্র রেখে দেবেন বলে জানিয়েছেন স্কটিশ জাতীয়তাবাদীরা। কিন্তু রানির মতো করে চার্লস যদি স্কটল্যান্ডের বাসিন্দাদের ওপর মানসিকভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তাহলে ভিন্ন খবরও আসতে পারে।
২০১৪ সালে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার গণভোট হওয়ার সময় রানি বলেছিলেন, ‘খুবই সাবধানে চিন্তা করে স্কটরা। তারা খুবই সতর্ক।’ এই ছোট্ট বক্তব্য দিয়েই স্কটল্যান্ডের বাসিন্দাদের মন জয় করেছিলেন তিনি। যে কারণে তারা ইউনিয়নে থাকার পক্ষেই সায় দেন।

এদিকে উত্তর আয়ারল্যান্ডেও মারাত্মক বিভাজন। রাজনৈতিক ভাষ্যকার ব্রিয়ান ফিনেই বলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন ঔপনিবেশিক শাসনের কারণে রাজনৈতিক ও নৃতাত্ত্বিক সংঘাতে জর্জড়িত উত্তর আয়ারল্যান্ড। ব্রিটিশশাসিত আয়ারল্যান্ডের শেষাংশে পরিচয় ও আনুগত্য নিয়ে সংঘাত রয়েছে। তারা নিজেদের একই রাজনৈতিক সত্তার অংশ হিসেবে দেখছেন না।

প্রয়াত ব্রিটিশ রানিকে শ্রদ্ধা জানাতে চলতি সপ্তাহে উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাজনীতিবিদদের জড়ো হতে দেখা গেছে। কিন্তু ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের কর্তৃত্বকে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি উত্তর আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল সিন ফেইন।

রাজনৈতিক দৃশ্যপট ও জনমিতিক পরিবর্তন বিশ্লেষণ করলে বলা যায়, চার্লসের রাজত্বকালেই যুক্তরাজ্য থেকে বেরিয়ে গিয়ে আইরিশ ঐক্যের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে উত্তর আয়ারল্যান্ড।

এছাড়া ব্রিটিশ রাজনীতিও নাজুক সময় পার করছে। ১৯৭০-এর দশকের পর সবচেয়ে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কা লেগেছে দেশটির অর্থনীতিতে। জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। এতে রাজকীয় কার্যক্রমে জনগণের রাজস্বের অর্থ ব্যয় করতে গিয়ে ক্রমবর্ধমান বাধা অনুভব করতে পারেন রাজা তৃতীয় চার্লস।
রাজকীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজা তৃতীয় চার্লসের অবস্থান আরও ছোট করে দিচ্ছে চলমান পরিস্থিতি। এখন একটি আধুনিক স্বল্প-পরিসরের রাজতন্ত্র প্রত্যাশা করছেন সবাই। এতে হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র রাজকীয় দায়িত্ব পালন করবেন, যাতে খরচ কমে যায়।

বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, আমি মনে করি, চার্লস এরইমধ্যে সেই আভাস দিয়েছেন। তার রাজতন্ত্র হবে অনেক ছোট পরিসরের। ভবিষ্যতে তা স্ক্যান্ডেনেভীয় রাজতন্ত্রের মতো হয়ে যাবে। তবে সেটা যে খুবই বৈরীভাবে হবে, তাও না; বরং অনেকটা অনানুষ্ঠানিকভাবে তিনি ছোট পরিসরের দিকে এগিয়ে যাবেন।

তিনি বলেন, রাজা তৃতীয় চার্লস বাকিংহাম প্রাসাদে ঢোকার আগে থেকে লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। এর মাধ্যমে আভাস দিয়েছেন যে তিনি হবেন সহজগম্য।

প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে বিবাহ-বিপর্যয়ের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে স্থান করে নিতে চার্লসকে বহু বছর অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। রাজকীয় বিয়ে ভেঙে দেয়ার জন্য কুইন কনসোর্ট ক্যামিলাও কম ভর্ৎসনার শিকার হননি। তারা যেন এক আধুনিক রূপকথার গল্পকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। কিন্তু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার চেষ্টা করেন তারা।

ডায়ানার অশান্তির জন্য তাদেরই দায়ী করা হচ্ছিল। এমনকি প্রিন্সেস অব ওয়েলসের কফিন যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন মানুষের হামলার শঙ্কায়ও ছিলেন রাজপরিবারের সদস্যরা। ১৯৯৭ সালে প্যারিসে আকস্মিক মারা যান ডায়ানা। এরপর বিশ্বজুড়ে রাজপরিবারের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা যায়। ব্রিটেনে পরিস্থিতির এমনই নাজুক হয়েছিল, তখন রাজপরিবার ভেঙে দিয়ে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি উঠেছিল।

পঁচিশ বছর আগের সেই ঘটনায় ব্রিটিশ রাজপরিবার নজিরবিহীন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছিল বলে মন্তব্য করেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। তিনি বলেন, আমি চিন্তিত ছিলাম। টনি ব্লেয়ার যখন এই কঠিন মন্তব্য করেছিলেন, তখন জনগণের মর্জি নিয়ে উদাস ছিল রাজপরিবার। এক জরিপে প্রতি চারজনের একজন প্রজাতন্ত্রের পক্ষে মত দেন। কিন্তু ঐতিহাসিক সেই রেকর্ড বদলে দেন রানি।

ঔপন্যাসিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার রবার্ট হ্যারিস বলেন, আমরা যেন এক বিপ্লবের মধ্যে বাস করছিলাম। প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুতে লন্ডনে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা আমি আগে-পরে কখনও দেখিনি। মানুষের মধ্যে অদ্ভুত উন্মাদনা দেখা দেয়। যেন দেশে কোনো অভ্যুত্থান হয়েছে।

বর্তমান সময়ে এসে এক সাংঘর্ষিক বাস্তবতার মুখোমুখি ব্রিটিশ রাজপরিবার। ৭৩ বছরের এক নাজুক বয়সে রাজত্ব পেয়েছেন চার্লস। আবার একুশ শতকের এ তৃতীয় দশকে এসে বংশপরস্পরায় তিনি সিংহাসনে বসেছেন। পৃথিবীর একটি বড় গণতান্ত্রিক দেশের রাজত্ব এখন তার কাঁধে। সময়ের হিসাবে যা সম্পূর্ণ বেমানান।

ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস এমন এক বয়সে দায়িত্ব নিয়েছেন, যে বয়সে তার উত্তরসূরিদের অধিকাংশই মারা গেছেন। আর তিনি যদি তার মায়ের মতো বেঁচে থাকেন, তবে আরও দুই দশকের বেশি তিনি রাজত্ব করতে পারবেন। কিন্তু ৭৫ বছর বয়স হলেই তাকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে।

ব্রিটিশ বিচারকেরা সাধারণত এ বয়সে অবসরে যান। দ্য আটলান্টিকের খবর বলছে, তার ছেলে প্রিন্স উইলিয়ামের কাছে রাজত্ব ছাড়তে বলা হচ্ছে তাকে। কারণ বৃদ্ধ রাজার চেয়ে তার তরুণ ছেলে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন বলে জোর দাবি উঠেছে।

বিভিন্ন পেশায় ৭৫ বছর পার হলেও মানুষ অনেক কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এমনকি ৯০ বছর পার হলেও তাতে কোনো সমস্যা তৈরি করে না। বরং তাদের প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের মাধ্যমে অন্যরা লাভবান হতে পারেন। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, একটি জাতিরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেয়া অন্যান্য পেশার মতো হতে পারে না।
যদিও রাজা তৃতীয় চার্লসের দায়িত্ব অনেকটা অনুষ্ঠানসর্বস্ব। অন্য রাষ্ট্রনেতাদের দায়িত্ব ঝুঁকি অনেক বেশি। অনেক বেশি বয়সে সেই দায়িত্ব পালন করতে গেলে চিন্তাগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া মানসিক চাপ, ক্লান্তিকর সময়সূচি, ঘুমবঞ্চনা তাদের বয়সের প্রভাবকে আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে আশির চেয়ে বেশি বয়সী লোকজনও প্রেসিডেন্টপ্রার্থী হতে পারেন। দেশটি সাতজন সিনেটর অশীতিপর। এছাড়া সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কংগ্রেস সদস্য তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না ঠিকমতো। প্রতিটি মুহূর্তে তাদের কারও না-কারও সহায়তা নিতে হয়। কেউ কেউ স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হলেও তারা দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।

ইরান, সৌদি আরব ও কুয়েতও শাসন করছেন অশীতিপর বৃদ্ধরা। চীন ও রাশিয়ার নেতাদের বয়স ৬৯ বছর। আটলান্টিকের খবর বলছে, মানুষের গড় আয়ু বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ থেকে ৭৫ বছর বয়সেই স্বেচ্ছায় সরে যাওয়া দরকার।

আর দায়িত্ব দেয়ার জন্য তরুণদের বেশি বিবেচনায় রাখা উচিত। কিন্তু এসব কিছুর বাইরে গিয়ে ঐতিহ্য ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখায়ই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ব্রিটিশ রাজপরিবার। এখন প্রিন্স চার্লসের দরকার অবসরের একটি বয়স নির্ধারণ করা। সেই বয়সে পদত্যাগ করে ছেলে উইলিয়ামের কাছে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া।

এসএইচ-০৮/১৭/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)