ভারতে কয়েকজন মুসলিমকে খুঁটিতে বেঁধে পুলিশের মারধর

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে পুলিশের হাতে কয়েকজন মুসলিম মারধরের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নিন্দা জানিয়েছে। একে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’ উল্লেখ করে সংগঠনটি বলেছে, এর মধ্য দিয়ে আইনের প্রতি সম্পূর্ণ অসম্মান করা হয়েছে। খবর আল–জাজিরার।

গত মঙ্গলবার গুজরাটের খেদা জেলার উধেলা গ্রামে ওই পিটুনির ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বেশ কিছু মুসলিম ব্যক্তিকে একটি খুঁটির সঙ্গে আটকে রাখা হয়েছে। সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা তাঁদের পেটাচ্ছেন। আর আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষেরা উল্লাস করছে। পিটুনির পর তাঁদের উপস্থিত জনতার কাছে মাফ চাইতে বলা হয়। এরপর পুলিশের একটি গাড়িতে করে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়।

পুলিশ বলছে, ওই ব্যক্তিরা হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলার সময় পাথর ছুড়েছেন।

এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বুধবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক টুইটার পোস্টে বলা হয়, মুসলিম ব্যক্তিদের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে লাঠি দিয়ে মারধরের ঘটনাটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। এর মধ্য দিয়ে আইনের শাসনের প্রতি সম্পূর্ণ অসম্মান দেখিয়েছে তারা।

অ্যামনেস্টি আরও বলেছে, ‘আমরা গুজরাট পুলিশকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে সাজা দেওয়া কখনো আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর পদক্ষেপ হতে পারে না, তা যতই কম প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে হোক না কেন। এ ক্ষেত্রে তারা স্পষ্টভাবে বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা, যৌক্তিকতা এবং জবাবদিহির নীতিকে অগ্রাহ্য করেছে।’

২৫ বছর ধরে বিজেপি গুজরাট রাজ্যের শাসনক্ষমতায় আছে। আগামী ডিসেম্বরে রাজ্যটিতে বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

খেদা এলাকার জ্যেষ্ঠ পুলিশ সুপার রাজেশ গাধিয়া আল–জাজিরাকে বলেন, ভিডিওতে যেসব মুসলিমকে দেখা গেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে গরবা নাচের সময় হিন্দু উপাসকদের পাথর ছোড়ার অভিযোগ আছে।

গরবা হলো একটি ঐতিহ্যবাহী নাচ। নবরাত্রির সময় এর আয়োজন করা হয়ে থাকে। গাধিয়া বলেন, স্থানীয় মুসলমান লোকজন ওই অনুষ্ঠান নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। কারণ, একটি মসজিদের কাছে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এ নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাঁদের উত্তেজনা তৈরি হয়।

গাধিয়া আরও বলেন, উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে মুসলিম ব্যক্তিরা সোমবার রাতে গরবা নাচ চলার সময় পাথর ছুড়লে কমপক্ষে সাতজন হিন্দু আহত হন। এর মধ্যে দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

পুলিশের তথ্য অনুসারে, এ ঘটনায় ৪৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৮ জন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সবাই মুসলিম।

পুলিশ কর্মকর্তারা যে জনপরিসরে মুসলিম ব্যক্তিদের পিটিয়েছেন, তা বৈধ কি না, সে ব্যাপারে আল–জাজিরার পক্ষ থেকে গাধিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে তিনি বলেছেন, এ ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে।

এসএইচ-০৩/০৭/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)