মেয়ের খোঁজে ছবি হাতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন মা–বাবা

কোলের শিশুসন্তান আয়েশাকে সঙ্গে নিয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর সকালে ভিক্ষা করতে বের হন পক্ষাঘাতগ্রস্ত ময়না বেগম। বসেন ঢাকার নারিন্দার কে এ হামিদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে। বিকেলে তিনি স্কুলটির শৌচাগারে যান। আয়েশাকে রেখে যান শৌচাগারের বাইরে। শৌচাগার থেকে বেরিয়ে তিনি দেখেন, সেখানে আয়েশা নেই।

সেই থেকে মেয়ের জন্য পাগলপ্রায় ময়না (৪৫)। তাঁর স্বামী রিকশাচালক মোশাররফ হোসেনও (৫০) উদ্ভ্রান্ত। তাঁরা আয়েশার খোঁজে তার ছবি হাতে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন।

পুলিশ বলছে, তারা আয়েশার খোঁজে নারিন্দার বিভিন্ন সড়কের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। ফুটেজে এক নারীকে আয়েশাকে অপহরণ করে যাত্রাবাড়ীর দিকে নিয়ে যেতে দেখা যায়। আয়েশা ও তার অপহরণকারীর খোঁজ চলছে।

৩০ বছর আগে শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় আসেন মোশাররফ। তিনি ঢাকাতে এসে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি ময়নাকে বিয়ে করে ঢাকায় থিতু হন। এখন থাকেন যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায়।

মোশাররফ-ময়না দম্পতির চার মেয়ে। বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তৃতীয় মেয়ের বয়স ১২ বছর। আর সবার ছোট আয়েশার বয়স দেড় বছর।

বছর দুয়েক আগে ময়না ব্রেন স্ট্রোক করেন। এতে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যান। ব্রেন স্ট্রোক করার আগে তিনি বাসাবাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। অসুস্থ হলে তা বন্ধ হয়ে যায়। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার পর থেকে তিনি আর স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন না।

রিকশা চালিয়ে মোশাররফ প্রতিদিন যা আয় করেন, তা দিয়ে সংসার চালানো, স্ত্রীর ওষুধ কেনা কঠিন হয়ে পড়ে। নিরুপায় হয়ে ময়না একপর্যায়ে তাঁর কোলের শিশুসন্তান আয়েশাকে সঙ্গে নিয়ে ভিক্ষা শুরু করেন।

ভিক্ষা করতে বেরিয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টার দিকে নারিন্দার কে এ হামিদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগারে গিয়ে মেয়ে আয়েশাকে হারিয়ে ফেলেন ময়না। পরে তিনি আশপাশে মেয়েকে খোঁজেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ময়নার স্বামী মোশাররফ। তাঁরা দুজনে নারিন্দার অলিগলি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও আয়েশাকে পাননি।

কোথাও মেয়েকে খুঁজে না পাওয়ায় মোশাররফকে একজন পরামর্শ দেন, বিষয়টি থানা-পুলিশকে জানাতে। মেয়ে হারিয়ে যাওয়ার ১৪ দিনের মাথায় মোশাররফ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে গেন্ডারিয়া থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গেন্ডারিয়া থানার উপপরিদর্শক আজাহার হোসেন বলেন, ‘ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আমরা আয়েশার অপহরণকারী এক নারীকে শনাক্ত করেছি। তবে এখন পর্যন্ত আমরা তাঁকে ধরতে পারিনি।’

আয়েশা অপহরণ হওয়ার পর থেকে ময়না প্রায় দিনই মেয়ের ছবি হাতে নিয়ে বাইরে বের হন। তিনি নারিন্দার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান।

মোশাররফও মেয়ের ছবি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরেন। তাঁর কাছে অপহরণকারী নারীরও ছবি আছে, যা ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া। এই ছবি তিনি লোকজনকে দেখিয়ে খোঁজ জানতে চান।

মোশাররফ  বলেন, ‘আমার আয়েশা শুধু দুটি শব্দ বলতে পারে—আব্বা আর মা। আমি গরিব মানুষ। মেয়ে হারানোর পর থেকে আমার স্ত্রী পাগলের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। আমার অবস্থাও তাই। যেভাবেই হোক, আমি আমার মেয়েকে খুঁজে বের করে স্ত্রীর কোলে তুলে দিতে চাই।’

জানতে চাইলে গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, ‘আয়শাকে খুঁজে বের করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যে নারী আয়শাকে অপহরণ করেছেন, তাঁর খোঁজে আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে।’

এসএইচ-০২/০৭/২২ (অনলাইন ডেস্ক)