কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণে লড়াই শুরু

যুক্তরাষ্ট্রে আগামী দুই বছরের জন্য কারা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ করবে সেই লক্ষ্যে মধ্যবর্তী নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এ নির্বাচন মূলত ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জনপ্রিয়তার পরীক্ষা। বাইডেনের নেতৃত্বে ডেমোক্রেটিক পার্টি কংগ্রেসের দুই কক্ষে নিজেদের আসন ধরে রাখতে পারে কি-না, তা এ নির্বাচনে নির্ধারিত হবে।

বিপরীতে সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য এটি অস্তিত্বের লড়াই। গত (২০২০) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনেও অংশ নিতে চান। কিন্তু তিনি আদৌ পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন কি-না, তা অনেকাংশে এই মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে বলে মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন সাধারণত একটা ছক মেনে চলে। যে দল ক্ষমতায় থাকে, নির্বাচনের মধ্যদিয়ে কংগ্রেসে তাদের আসন কমে যায়। সেই হিসাবে রিপাবলিকান পার্টি কিছুটা আশাবাদী ও স্বস্তিতে আছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।

যদি কোনো মধ্যবর্তী নির্বাচনে সেই চেনা ছকের বাইরে গিয়ে শাসক দলই কংগ্রেসে বেশি আসন জেতে তাহলে তা প্রেসিডেন্টের সমর্থনে বিপুল সমর্থন বলেই ধরে নেয়া হয়। সম্ভবত সেই হিসাব মাথায় রেখেই এবার বিভিন্ন প্রদেশে গিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রচারণা চালিয়েছেন বাইডেন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হার ও ক্যাপিটল হিল হামলার ঘটনায় মামলার মুখে পড়া ট্রাম্পের কাছেও এই ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রচারেও ধারাবাহিকভাবে হাজির ছিলেন তিনি। ট্রাম্পের পাশাপাশি রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেত্রী রোনা ম্যাকড্যানিয়েলের কাছেও এই ভোট প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে দলীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের ১০০টির মধ্যে ৩৫টি এবং নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ৪৩৫টি সাধারণ আসনের সবকটিতেই ভোট হচ্ছে এবার। সেই সঙ্গে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ‘ভোটদানের ক্ষমতাহীন’ ৬টি আসনের মধ্যে ৫টি ও ৩৬টি রাজ্য ও ৩টি টেরিটরির গভর্নর নির্বাচন হবে।

মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রভাব মার্কিনিদের দৈনন্দিন জীবনের ওপরও নেহাতই কম নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, কংগ্রেসের যেকোনো পরিবর্তন সরাসরি মার্কিনিদের দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে, তার বড় উদাহরণ হতে পারে গর্ভপাত।

গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত গর্ভপাতের অধিকার আইন বাতিল করেন। মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ হাতে এলে এ ইস্যুতে নতুন আইনের প্রস্তাব করবে বলে জানিয়ে রেখেছে দুই দলই।

নারীদের গর্ভপাতের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটরা। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা ১৫ সপ্তাহের পর গর্ভপাতে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাব দিয়েছে। পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন ও মিশিগান রাজ্যে গভর্নর ও স্থানীয় নেতৃত্বে যে ফল আসবে, তাতে গর্ভপাতের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আসতে পারে।

কংগ্রেসে যারা জিতবে ও ক্ষমতায় বসবে, তারা গর্ভপাত ছাড়াও অন্যান্য ইস্যুতেও হাত দেবে। যদি রিপাবলিকানরা জেতে তাহলে অভিবাসন, ধর্মীয় অধিকার ও সহিংস অপরাধ গুরুত্ব পাবে। আর ডেমোক্র্যাটরা জিতলে পরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা, ভোটের অধিকার ও বন্দুক নিয়ন্ত্রণের মতো ইস্যুগুলো গুরুত্ব পাবে।

এর বাইরেও মধ্যবর্তী নির্বাচনের আলাদা প্রভাব রয়েছে। যে দল কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, তাদের হাতে থাকবে বিভিন্ন তদন্ত ক্ষমতা। ডেমোক্র্যাটরা গত দুই বছর ধরে হোয়াইট হাউসের বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ সীমিত রেখেছে। সেই জায়গায় গত বছরের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল হামলার ঘটনাকেই বেশি সামনে এনেছে তারা।

ওই হামলার ঘটনায় ডেমোক্র্যাটরা কংগ্রেসের শুনানিতে এ পর্যন্ত কয়েক শ মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল, ট্রাম্প হামলার বিষয়ে আগে থেকে জেনেও কী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুনানি হয়েছে। এ বছরের শেষের দিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফলে খেলা ঘুরে যেতে পারে। রিপাবলিকানরা আশা করছে, তারা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের নিয়ন্ত্রণ পাবে। সেক্ষেত্রে কী করবে তা–ও জানিয়ে রেখেছে রিপাবলিকানরা। তারা বলেছে, ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল হামলার শুনানি বন্ধ করে দেয়া হবে।

সেই জায়গায় চীনের সঙ্গে বাইডেনের ছেলে হান্টারের ব্যবসা নিয়ে শুনানি চালু করা হবে। শুধু তাই নয়, রিপাবলিকানরা বাইডেন প্রশাসনের অভিবাসননীতি, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ও চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উৎস নিয়েও তদন্ত করতে চায়।

ক্ষমতাসীন দলের ওপর একধরনের গণভোট হিসেবে বিবেচনা করা হয় মধ্যবর্তী নির্বাচনকে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বাইডেনের প্রতি সমর্থন কমেছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনকে সামনে রেখে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের মতো ইস্যুতে জোরেশোরে প্রচার চালিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। কংগ্রেসের দুই কক্ষে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম দুই বছরে বাইডেন জলবায়ু পরিবর্তন, বন্দুক নিয়ন্ত্রণ, অবকাঠামোগত বিনিয়োগ, শিশুদের দারিদ্র্যের মতো ক্ষেত্রগুলোতে নতুন আইনের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করেছেন। কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা কম থাকলেও বাইডেনের চেষ্টা থামেনি।

বাইডেন নিয়ন্ত্রিত দুটি কক্ষের একটিও রিপাবলিকানদের দখলে চলে গেলে এসব ইস্যুতে তারা ডেমোক্র্যাটদের বিল পাস আটকে দেবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাইডেনের রাজনৈতিক দুর্বলতা ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার শুরু হলে বাইডেনের জায়গায় অন্য ডেমোক্র্যাট খোঁজা হতে পারে।

এসএইচ-১৩/০৮/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)