হোস্টেলে নির্যাতনের ঘটনা মাকে বলায় স্কুলছাত্রকে অধ্যক্ষের মারধর!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি বেসরকারি স্কুলের ছাত্রাবাসে নির্যাতনের ঘটনা মায়ের কাছে বলে দেওয়ায় ওই শিক্ষার্থীকে বেদম মারধরের অভিযোগ উঠেছে ওই স্কুলের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৯ মে) বিকেলে শিক্ষার্থীর মা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

থানায় করা অভিযোগ ও স্কুলছাত্রের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জেলার কসবা উপজেলার বিশারাবাড়ি গ্রামের দুবাইপ্রবাসীর একমাত্র ছেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের উইজডম স্কুল অ্যান্ড কলেজের আবাসিক ছাত্র।

ছাত্রাবাসের নবম শ্রেণির তিন ছাত্র তার সঙ্গে অশোভন আচরণ ও তাকে মারধর করত। গত ১৬ মে সকালে ওই শিক্ষার্থীর মা বিদ্যালয়ে গিয়ে ছেলের বেতন ও রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ৮ হাজার ৩০০ টাকা জমা দেন। ওই সময় তিনি দেখতে পান, ছেলের নাক-মুখ ফোলা ও জখম। পরে তিনি ছেলেকে সঙ্গে করে কসবায় বাড়িতে নিয়ে যান। রাতে ছেলে মায়ের কাছে হোস্টেলে নির্যাতন ও মারধরের কথা খুলে বলে।

ছেলের কাছ থেকে শুনে রাতেই ওই শিক্ষার্থীর মা ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক ও প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে মোবাইলে বিষয়টি অবহিত করেন।

পরদিন বুধবার সকালে ওই শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে গেলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আবদুল মোনায়েম তাকে ও নির্যাতনের অভিযুক্ত তিন শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে বেত্রাঘাত করেন।

বিকেলে ওই শিক্ষার্থীর মা বিদ্যালয়ে গেলে সে তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। পরে তিনি এ ঘটনায় সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেন।

এ ব্যাপারে ওই শিক্ষার্থীর মা বলেন, ‘হোস্টেলে আমার ছেলেকে অন্য তিন শিক্ষার্থী বেশ কয়েকদিন ধরে নির্যাতন করে আসছিল। বিষয়টি বাড়িতে এসে ছেলে আমাকে জানালে আমি বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ককে জানাই। পরদিন অধ্যক্ষ আমার ছেলেকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। এতে তার বাঁহাতের কনিষ্ঠ আঙুল জখম হয়ে কালো হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি পুলিশকে অবগত করায় হোস্টেল সুপার আমার সঙ্গে অশোভন (খারাপ) আচরণ করেন।’

এ ব্যাপারে ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক নাজমা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষার্থীর মা আমাকে বিষয়টি অবহিত করেছেন। আমি তাকে কেন বকাবকি করব?’

তিনি বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী আমাদের না জানিয়ে বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি তার মাকে জানিয়েছে। তাই অধ্যক্ষ তাকে একটা বেত দিয়ে তার হাতে বাড়ি দিয়েছেন।’

এ ব্যাপারে উইজডম স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মোনায়েম সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিযুক্ত তিন শিক্ষার্থীকে ডেকে শাসন করেছি। আমাদের না জানিয়ে ঘটনার বিষয়ে ওই শিক্ষার্থী তার অভিভাবককে জানিয়েছে। তাই তিন শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাকেও হালকা একটু শাসন করেছি।’

তিনি বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবক বিদ্যালয়ে পুলিশ নিয়ে এসেছিল। আমরা পুলিশের সঙ্গেও কথা বলেছি।’

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীদের মা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি।’

এসএইচ-১৩/২০/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)