শারীরিক স্পর্শ বা আলিঙ্গন কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ

শারীরিক স্পর্শ

শিশুকে স্পর্শ বা আদর করার মধ্য দিয়ে যেমন বিশ্বাস আর আস্থা অর্জন করা যায়, তেমনি প্রিয়জনদের স্পর্শে বড়রাও পায় মানসিক সুখ আর শান্তি৷ বিষয়টি এক সমীক্ষায় আরো স্পষ্ট হয়েছে৷

শুরু হয় মাতৃগর্ভেই

শারীরিক স্পর্শে সাড়া দেয়া শুরু হয় মাতৃগর্ভেই৷ প্রতিটি মা-ই তা জানেন৷ গর্ভের ভ্রূণের বয়স যখন দু’মাস আর মাত্র দুই সেন্টিমিটার লম্বা তখন গর্ভবতী কোনো কারণে আনন্দিত হয়ে তার পেটে হাত বুলালেই তা টের পান৷ সেটাই হচ্ছে স্পর্শ বোঝার প্রথম প্রকাশ, জানান টাচ বা স্পর্শ বিষয়ক জার্মান গবেষক ড. মার্টিন গ্রুনভাল্ড৷

অত্যন্ত জরুরি

শিশুকে যত বেশি স্পর্শ বা আদর করা যায়, শিশুর জন্য ততটাই মঙ্গল৷ বিশেষ করে প্রি-ম্যাচিউর বেবির জন্য স্পর্শ বা আলিঙ্গন অত্যন্ত জরুরি৷ ইনকিউবেটরে থাকা শিশুকে প্রতিদিন কিছুক্ষণের জন্য কোলে নেওয়া উচিত৷ এতে মায়ের শরীরের উষ্ণতা শিশুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে৷পরবর্তী জীবনের জন্য তা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷

জার্মানদের স্পর্শ-সংস্কৃতি

রাতে ঘুমোতে যাবার আগে সন্তানকে ‘গুটেনাখ্ট’ বা শুভরাত্রি বলে চুমু দেয়া বা ছুটির দিন সকালে কিছুক্ষণের জন্য মা-বাবার বিছানায় তাদের সাথে খুনসুটি করা জার্মান সংস্কৃতির একটি অঙ্গ৷ বলা বাহুল্য, এদেশে জন্মের পর থেকেই শিশুরা আলাদা ঘরে ঘুমায়৷

স্পর্শ চাই বড়দেরও

ঘাড়ে একটু হাত বুলিয়ে দেওয়া কিংবা চিবুকে একটু আদরের স্পর্শ বা পাশাপাশি বসে টিভি দেখা– জীবনসঙ্গীর জন্য প্রতিদিনের ভালোবাসায় একটু মধু ঢালার মতো৷ জানান সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর মাটিয়াস রিডেল৷

আলিঙ্গন কষ্ট ভোলাতে সহায়তা করে

দুঃসংবাদ বা শোক সংবাদে প্রিয়জনদের আন্তরিক আলিঙ্গন সাময়িকভাবে হলেও কষ্ট কমায়৷

সমীক্ষার ফলাফল

জীবনসঙ্গীদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কের ভূমিকা নিয়ে করা এক সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানা গেছে, স্বামী-স্ত্রী বা পার্টনারের মধ্যে যত বেশি শারীরিক যোগাযোগ বা আলিঙ্গন, অপরের প্রতি তারা তত বেশি সন্তুষ্ট৷

প্রথম রাত

সমীক্ষাটির ফলাফল জানাতে গিয়ে ডা. রিডেল বলেন, প্রথম রাতের শারীরিক ভালোবাসার কথা শতকরা ৯৩ জনের মনেই নাকি খুব ভালোভাবে গেঁথে আছে৷

আলিঙ্গনে আনন্দ ভাগাভাগি

আলিঙ্গনে শোকের কষ্ট কমে, কিন্তু আনন্দের আলিঙ্গনে তা আরো বেড়ে যায়৷ তাছাড়া স্পর্শ বা আলিঙ্গন করে শুভেচ্ছা জানানোর রেওয়াজ বহু দেশেই রয়েছে৷

অপরিচিত স্পর্শ

পরিচিত বা আপনজনদের আলিঙ্গন বা শুধুমাত্র একটুখানি স্পর্শ যেমন ভালো লাগা তৈরি হয়, ঠিক তেমনি অপরিচিত কারো স্পর্শ ভয় আর আতঙ্ক সৃষ্টি করে৷

পরিচিত স্পর্শ

স্পর্শ বিশ্বাসকে করে শক্তিশালী৷ স্পর্শকে উপভোগ করার জন্য প্রয়োজন বিশ্বাস, আস্থা৷ তাই তো কাছের বা পরিচিতদের স্পর্শে আনন্দময় হয়ে ওঠে মন, দোলা দেয় শরীরে সুখ-হরমোন৷ সামান্য স্পর্শই অসুস্থ আপনজনকে সুস্থ হওয়ার পথে এগিয়ে দেয়৷

বাঁচার জন্য প্রয়োজন আন্তরিক স্পর্শ

লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. মার্টিন গ্রুনভাল্ডের ভাষায়, ‘‘স্পর্শ ও আদর ছাড়া কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীই বাঁচতে পারেনা, মানুষ তো নয়ই…৷

আরএম-০৩/১৪/০৫ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)