খাঁটি ঘি তৈরির ঘরোয়া কৌশল জানেন কি?

খাঁটি ঘি

রান্নার স্বাদ বাড়াতে ঘি’য়ের উপকারিতা অনস্বীকার্য। সেইসঙ্গে এটি স্বাস্থ্যকরও বটে। এতে প্রচুর পরিমাণ ভালো ফ্যাট রয়েছে। অনেকেই ভাবেন ঘি খেলে ওজন বেড়ে যায়। ধারণাটি ভুল, কারণ শরীর সুস্থ রাখতে ভালো ফ্যাটের কার্যকারিতা অনেক। প্রাচীন প্রবাদে রয়েছে ‘ঋণ করে হলেও ঘি খাও’। শুধু এই উপমহাদেশে নয় বর্তমানে ঘিয়ের কদর সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে।

ভিটামিনের উৎস

বিশেষজ্ঞের মতে, প্রাকৃতিকভাবেই ঘিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, লাইনোলেইক অ্যাসিড ও বিউটাইরিক অ্যাসিড থাকে। দৃষ্টিশক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, জননাঙ্গ ইত্যাদির জন্য ভিটামিন ‘এ’ অত্যন্ত উপকারী। ঘিতে সামান্য পরিমাণ ভিটামিন ‘কে’, ‘ই’ এবং ‘বি টুয়েলভ’ থাকে। ঘিয়ের ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘কে’ চর্বিতে দ্রবণীয়। ফলে চর্বিজাতীয় খাবারের সঙ্গে খেলে শরীরে আরো ভালোভাবে শোষিত হয়। শরীরের প্রয়োজনে ব্যবহৃতও হয় বেশি কার্যকরভাবে।

যেভাবে ঘরেই তৈরি করবেন খাঁটি ঘি-

উপকরণ: দুধের সর ৫ কেজি পরিমাণ, ঠাণ্ডা পানি আড়াই লিটার।

ঘি তৈরির জন্য যা লাগবে: মাটির পাত্র ১টি, শিল-পাটা, কাঠের চামচ বা খুন্তি ১টি।

প্রণালী:

১. দুধের সর বাটার জন্য একটি পরিষ্কার শিল-পাটা নিন। এরপর শিল-পাটাতে নিয়ে দুধের সর বাটতে থাকুন। বাটার সময় পানি দেয়া যাবেনা। সরের পরিমাণ যেহেতু বেশি তাই একবারে সবটুকু একসঙ্গে বাটতে যাবেন না। অল্প অল্প করে সর নিয়ে বেটে নিতে হবে।

২. এবার একটি মাটির পাত্র নিয়ে তাতে বাটা সর থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে কাঠের চামচ বা খুন্তি দিয়ে নাড়তে থাকুন। এই প্রক্রিয়াটি যত দ্রুত সম্ভব ততো দ্রুত করতে হবে। এরপর দেখবে সর থেকে ক্রিম তৈরি হয়েছে। এভাবে বাকি সর থেকেও ক্রিম তৈরি করে নিন।

৪. ক্রিম তৈরি হয়ে গেলে এর মধ্যে ঠাণ্ডা পানি দিন। ক্রিমের পরিমাণ অনুযায়ী পানি দিতে হবে। এরপর ক্রিম থেকে সাদা দুধের মত পানি বের হয়ে ক্রিম পরিষ্কার হয়ে ঘন ডো এর মত উপরে ভেসে উঠতে থাকবে। যখন ক্রিমের সবটুকু ডো পরিষ্কার হয়ে পানির উপরে উঠে আসবে তখন পানি থেকে ক্রিম ছেঁকে তুলে নিন। একবারে করা সম্ভব না হলে কয়েকবারে করতে হবে।

৫. এবার সবটুকু ক্রিমের ডো একটি পাতলা মসলিন কাপড়ের মাঝখানে রেখে ভালো করে বেঁধে ঝুলিয়ে দিন। এভাবে ঝুলিয়ে রাখলে ক্রিমের ডো থেকে সম্পূর্ণ পানি বের হয়ে যাবে। এভাবে কমপক্ষে এক থেকে দেড় ঘণ্টা রাখতে হবে।

৬. ক্রিমের ডো থেকে সম্পূর্ণ পানি বের হয়ে গেলে একটি লোহার কড়াই চুলায় দিয়ে গরম করে নিন। খেয়াল রাখবেন যেই পাত্রে ঘি তৈরি হবে তা যেন সম্পূর্ণরুপে পরিষ্কার থাকে।

৭. এবার গরম পাত্রে ক্রিমের ডো ঢেলে দিন। এরপর চুলার আঁচ কমিয়ে মধ্যম আঁচে রাখুন। ক্রিম চুলায় দেয়ার পরে অনবরত নাড়তে থাকুন। বেশ কিছুক্ষণ নাড়ার পর ক্রিম জ্বাল হয়ে তার মধ্যে থেকে তেল বের হতে থাকবে। এই তেলটাই হলো আপনার কাঙ্খিত ঘি। এখনো সম্পূর্ণরুপে ঘি তৈরি হইনি কিন্তু! সবটুকু ক্রিম যখন পুড়ে কালো হয়ে যাবে ও ঘি গাঢ় হয়ে সুন্দর সোনালি রং ধারণ করবে তখন বুঝতে হবে এবার আপনার ঘি তৈরি হয়ে গেছে।

৮. এবার একটি পরিষ্কার ও শুকনা পাত্রে ঘি ছেঁকে নিন। ছাঁকার সময় খেয়াল রাখবেন পোড়া অংশ যেন ঘিয়ের মাঝে চলে না যায়।

৯. পাত্রের ঘি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে বোতলে রেখে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। এভাবে সংরক্ষণ করলে আপনার বানানো ঘি অনেকদিন পর্যন্ত ঠিক থাকবে।

১০. আপনার সর ও ক্রিম জ্বাল দেয়ার উপরে নির্ভর করবে আপনি কতখানি ঘি তৈরি করতে পারবেন। তবে পাঁচ কেজি দুধের সর থেকে এক থেকে দেড় কেজির মতো ঘি তৈরি করা সম্ভব।

সতর্কতা

ঘি প্রস্তুত করার আগে খেয়াল রাখবেন সর শিল-পাটাতেই বাটতে হবে। ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করতে পারেন, তবে তা বাটা সরের মতো মোলায়েম হবেনা। সেইসঙ্গে মাটির পাত্রই ব্যবহার করতে হবে। স্টিল বা অন্যান্য তৈজসপত্র ব্যবহার করলে ক্রিম নষ্ট যেতে পারে। সেইসঙ্গে পানি ছেঁকে নিতে হবে ভালো করে যেন কড়াইতে দেয়ার সময় পানি না থাকে ক্রিমের মধ্যে একটুও।

আরএম-১৫/১৫/১২ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)