জরুরী সেবার সব বিভাগ ঈদে খোলা

ঈদের সময় নাগরিকেরা জরুরি সেবা নিয়ে সংকটে পড়েন। বিশেষ করে ঢাকাসহ বড় বড় শহরে চিকিৎসা, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিরাপত্তা সেবা তারা ঠিকমত পাবেন কিনা সংশয়ে থাকেন। এই অবস্থা কাটাতে এবার কী ব্যবস্থা রয়েছে?

ঈদের সময় সরকারি তিন দিনের ছুটি ছাড়াও এবার নানা কারণে ছুটিটা একটু লম্বা। আর এই লম্বা ছুটিতে হাসাপাতালে যারা ভর্তি থাকেন এবং চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের বিপাকে পড়ার চিত্র সাধারণ। এটা মাথায় রেখেই এবার ঢাকাসহ সারাদেশে ঈদের সময় সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে।

এনিয়ে স্বাস্থ্য মহা-পরিচালক ভিডিও কনফারেন্সে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের নির্দেশনাও দিয়েছেন। আর তাতে বলা হয়েছে, যেকোনো উপায়ে জরুরি এবং সাধারণ চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখতে হবে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী দেশের সরকারি হাসপাতালগুলো ঈদের সময় চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে । ২৪ ঘন্টা সেবা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। এই সময়ে এ্যাম্বুলেন্স এবং অন্যান্য প্যাথলজিক্যাল সেবাও স্বাভাবিক রাখতে বলা হয়েছে।

চিকিৎসকেরা পাবেন খাবার:

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক( চট্টগ্রাম) ডা. হাসান শাহরিয়ার জানান,”চট্টগামের সব পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে এবার ঈদের ৩ দিন হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ সব বিভাগ খোলা থাকবে। শুধুমাত্র ঈদের দিন আউটডোর বন্ধ থাকবে। এবার ঈদে চিকিৎসকদের ছুটি নেই। ঈদের পরে চিকিৎসকরা সমন্বয় করে ছুটি নেবেন। আর সেভাবেই ঈদের ৩ দিনের বিশেষ রোস্টার করা হয়েছে।”

তিনি আরো জানান,”অতীতের পরিস্থিতি মাথায় রেখেই আমরা এই ব্যবস্থা নিয়েছি। আর এবার চিকিৎকদের যাতে খাওয়ার সমস্যা না হয় সেজন্য প্রত্যেকটি হাসপাতালই ঈদের তিন দিন চিকিৎসক এবং কর্মকর্তা কর্মচারিদের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।”

একই ধরনের ব্যবস্থা এবার ঈদে সারাদেশের হাসপাতালেই করা হয়েছে বলে তিনি জানান। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের নির্দেশ হল, কোনোভাবে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত করা যাবেনা।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও ঈদের দিন শুধুমাত্র আউটডোর ছাড়া আর সব বিভাগ খোলা থাকবে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন,”ঢাকা মেডিক্যালে ইনজ্যুরিসহ ৬ ধরণনর জরুরি বিভাগ আছে। এর সঙ্গে ৬টি আলাদা অপারেশন থিয়েটার আছে। আমাদের সব ধরনের জরুরি সেবা ২৪ ঘন্টা চালু থাকবে। আর ইনডোর রোগী যারা ভর্তি আছেন তাদের প্রায় অর্ধেক ঈদের কারণে চলে গেছেন।

বাকি যারা আছেন তারা যাতে ঠিকমত সেবা পান সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বলতে পারি ঈদের ৩ দিন ২৪ ঘন্টা সেবা দেয়ার জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত।”

হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, বিভিন্ন ধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা সেবাও স্বাভাবিক থাকবে। আর যারা ইমারজেন্সি চিকিৎসক তাদের জন্য হাসপাতালে খাবারের ব্যবস্থা রাখা হবে বলে জানান তিনি।

এবার ঈদে পুলিশ বিভাগের ২৫ ভাগ সদস্য ছুটি পেয়েছেন। ঈদে নিরাপত্তা, ট্রাফিক এবং জরুরি সেবা দেয়ার জন্য তারা প্রস্তুত আছেন বলে জানানো হয়েছে। পুলিশের ৯৯৯ সেবায় কোনো কাটছাঁট করা হয়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ বায় বলেন,” ঈদের সময় ফাঁক রাস্তায় যাতে কেউ বেপরোয়াভাবে গাড়ি না চালানো হয় সেজন্য আমরা ট্রাফিক টহল বাড়াচ্ছি। আমরা কিছু রাস্তায় গতি কমাতে ব্যবস্থা নেব। আর চেকপোস্ট এবং ট্রাফিকপোস্টে ট্রাফিক পুলিশতো থাকবেই। ঢাকায় এখন মোড়ে মোড়ে পুলিশ বক্স, মহল্লায় মহল্লায় পুলিশ ফাঁড়ি। এসবই সচল থাকবে। নগরবাসী কোনো নিরাপত্তা সংকটে পড়লে সরাসরি যেখানে যোগাযোগ করবেন। আর ২৪ ঘন্টার ৯৯৯ সেবাতো অব্যাহত থাকছেই।”

তিনি বলেন,”আমরা নগরসীকে অনুরোধ করছি তাদের বাসা এবং প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব নিরাপত্তায় যে সদস্যরা আছেন তাদের সবাইকে যেন ছুটি না দেন। আর এই সময়ে বাসা বদল না করার জন্যও বলেছি। কারণ বাসা বদলের স্টাইলে অপরাধীরা চুরি ডাকাতির মালামাল নিয়ে যায়। এই সময়ে বাসা বদল করলে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হবে।”

ঈদের সময় ঢাকায় পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের জরুরি সেবা ঠিকমত যাতে নগরবাসী পান তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ওয়াসার পরিচালক এ কে এম সহিদ উদ্দিন জানান, “আমরা ওয়াসার জোনের অফিসগুলো ঈদে খোলা রাখছি। যে অঞ্চলে পানির সমস্যা হবে সেই অঞ্চলের গ্রাহকেরা সেখানে যোগাযোগ করবেন। এছাড়া কাকরাইলে আমাদের সিস্টেম কন্ট্রোল অফিস । সেটাও ২৪ ঘন্টা খোলা খোলা থাকবে। এর বাইরে ১৬১৬২৬ এই নাম্বারে ফোন করে যেকোনো যায়গা থেকে ২৪ ঘন্টা সেবা পাওয়া যাবে। পানি সরবরাহের জন্য যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা কাউকেই ছুটি দেয়া হয়নি।”

তিনি বলেন,”ঈদে পানির সরবরাহের সমস্যা হয়না। অন্য সমস্যা হতে পারে। কারণ অর্ধেক লোক ঢাকায় বাইরে চলে যায়। ফলে আমরা অর্ধেক পাম্প বন্ধ রাখি।”

ঈদে ঢাকাসহ সারাদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের চাহিদাও কমে যায়। শিল্প কারখানায় এই সময় গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা থাকেনা। অফিস আদালত বন্ধ থাকে। শুধু গৃহস্থালি চাহিদা থাকে। তবে এই সময়ে দুর্ঘটনার জন্য জরুরি সেবার প্রয়োজন হয়। ঈদে সব অঞ্চলে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে জরুরি সেবা ২৪ ঘন্টা চালু থাকবে।

ঢাকায় গ্যাসের জরুরি সেবার জন্য তিতাসের হটলাইন নম্বর ১৬৪৯৬। বিদ্যুতের জন্য হটলাইন নম্বর ১৬১১৬।

এছাড়া গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলের কাগজের সাথে যার যার এলাকার জরুরি ফোন নাম্বার দেয়া আছে। সেই নাম্বারে ফোন করলে জরুরি সেবা পাওয়া যাবে। ওয়াসার বিলেও জোন ভিত্তিক জরুরি নাম্বার দেয়া আছে বলে জানানো হয়েছে।

এসএইচ-০৮/০৪/১৯ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)