সবার মনেই প্রশ্ন ভোট দিতে পারবেন কীনা

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে তত শঙ্কা বাড়ছে৷ ভোটার থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ সবার মনেই প্রশ্ন ভোট দিতে পারবেন কীনা৷ নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলছেন, মানুষের মনের ভয় দূর করার মেকানিজম তাদের কাছে নেই৷

আর কয়েকদিন পর ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন৷ চলছে প্রার্থীদের প্রচার৷ পেস্টার আর নানা প্রতীকে ছেয়ে গেছে নগরী৷ তারপরও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা কাটেনি৷ অনেকেরই মনে প্রশ্ন ‘ভোট দিতে পারবেনতো’? জবাবে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে৷ যে ভয়ের কথা বলা হচ্ছে তা মনের ভয়৷

ঢাকার শুক্রাবাদের দোকানদার জামাল হোসেন ওই এলাকারই ভোটার৷ তিনি ভোট দিতে চান৷ দক্ষিণ সিটিতে তার পছন্দের মেয়র প্রার্থী আছেন, আছেন কাউন্সিলর প্রার্থী৷ তাদের জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী৷ তারপরও তার প্রশ্ন, ‘‘ভোট কি দিতে পারব?”

কেন এই শঙ্কা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আগেতো ভোট দিতে পারি নাই৷ ঘুমিয়ে ভোট দিয়েছি৷ ভোট দিতে গিয়ে শুনি আগেই আমার ভোট দেয়া হয়ে গেছে৷ এরকম ঘটনা একবার নয়, দুইবার হয়েছে৷ এবার এখন পর্যন্ত প্রচার প্রচারণা ভালোই হচ্ছে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোটের একই অবস্থা হবে বলে মনে হয়৷”একই রকম শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আরো অনেকে৷

ঢাকার গাবতলীতে প্রচার কার্যক্রমের সময় ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলার ঘটনা ছাড়া এখন পর্যন্ত বড় ধরনের সংঘাতের অভিযোগ পাওয়া যায়নি৷ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর প্রার্থীদের পোস্টার আছে৷ যদিও শুরুর দিকে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে পোস্টার লাগাতে না দেয়া ও ছিড়ে ফেলার অভিযোগ ছিল৷ তবে এই সহাবস্থান কতদিন বজায় থাকবে তা নিয়েও সন্দেহ আছে৷

সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘‘প্রচার প্রচারণা চলছে৷ সবাই মাঠে আছে৷ কিন্তু তার মধ্যেইওতো তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলা হয়েছে৷ নির্বাচন কমিশনকেতো কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখছি না৷ আচরণবিধিও লঙ্ঘন হচ্ছে৷ কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না৷”

তবে নির্বাচন কমিশন বলছে নির্বাচনের মাঠ থেকে তারা এখনো বড় কোনো অভিযোগ পায়নি৷ মাঠে প্রার্থীদেরও অবশ্য প্রচারে আগ্রহের কমতি নেই৷ এই সুযোগে ঢাকায় বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতা-কর্মীরাও এখন প্রকাশ্যে আসতে পারছেন৷ ডেমরা এলাকায় এমন কয়েকজনকে দেখা গেছে যারা দীর্ঘদিন গ্রেপ্তার হয়রানির ভয়ে এলাকায় আসার সুযোগ পাননি৷ উত্তর বাড্ডায় ঘুরেও এমন নেতা-কর্মীদের পাওয়া গেছে৷ শুরুতে তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক থাকলেও আপাতত তা অনেকটাই কেটে গেছে৷ ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷

তবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে তত শংকা বাড়ছে বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান৷ তিনি বলেন, ‘‘যতই দিন যাচ্ছে নির্বাচনে উদ্বেগের উপাদানগুলো বাড়ছে৷ প্রতিনিয়ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সংকুচিত হচ্ছে৷ তাই নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ বাড়ছে৷”

তাঁর মতে, ‘‘নির্বাচন কমিশন ব্যর্থতা ও অবৈধতার অনেক নজির রেখেছে৷ আর কমিশনের মধ্যেই নানা মত আছে৷ তারপরও আমি আশা করব এবার তারা যদি ভালো কিছু পদক্ষেপ নিয়ে ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারে তাহলে কিছুটা হলেও তাদের ইমেজ পুনরুদ্ধার হবে৷”

তবে নির্বাচন কমিশন সেই দায়িত্ব পালন করবে এমনটা আশা করেন না হাফিজউদ্দিন খান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার নিজেরও এই নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনো আস্থা নাই৷ তাদের দক্ষতা, নিরপেক্ষতার ওপর আমার কোনো আস্থা নাই৷ তাই আমিও নির্বাচন নিয়ে ভয়ের মধ্যে আছি৷ তারা অতীতে তাদের দায়িত্ব পালন করে নাই৷ হঠাৎ করে তারা ভালো হয়ে যাাবে এটা আশা করা যায় না৷’

এর জবাবে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘ঢাকা শহরে বা বাংলাদেশে সবাই নির্ভয়ে চলাফেরা করছেন৷ অফিস আদালত কাজকর্ম সমানে করছেন৷ বাজারে যাচ্ছেন, ব্যবসা করছেন৷ কিন্তু ভোট দেয়ার ব্যাপারে বলছেন আমি ইনসিকিউরড ফিল করছি৷ এখন আমরা কী করতে পারি৷ আমরা কী করলে সিকিউওরড ফিল করবেন৷ সেই ক্ষমতা আমাদের আছে কিনা৷ ওই সামর্থ্য আমাদের আছে কিনা৷ এটা নিশ্চিত তাহলে মনের ভয়৷ এখন মনের ভয় দূর করার কোনো মেকানিজম আমাদের কাছে নাই৷”

তিনি বলেন, ‘‘আমরা সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি৷ ফিজিক্যালি যাতে কিছু না হয় তার নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেছি৷ আপনাদেরকে বলব আপনারা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যান৷ আপনি নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন৷ এই নিশ্চয়তা আমরা দিচ্ছি৷”

এসএইচ-০৫/২৭/২০ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)