জেএমবি’র ‘উলফ প্যাক’ সক্রিয় হচ্ছে!

চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার সাথে গত বছর ঢাকায় পুলিশের ওপর হামলার মিল খুঁজে পাচ্ছেন তদন্ত কর্মকর্তারা৷ এরইমধ্যে চট্টগ্রামের হামলায় ‘দায় স্বীকার’ করেছে আইএস৷ তারা ঢাকায় পুলিশের ওপর হামলারও দায় স্বীকার করেছিল৷

শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম মহানগরের ষোলশহর দুই নম্বর গেট মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণে দুই পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজন আহত হন৷ এরইমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে৷ পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মবর্তা আবুল কাশেম৷ চট্টগ্রামের কাউন্টার টেরররিজম ইউনিট, স্থানীয় পুলিশ ও পিবিআই ছাড়াও ঢাকা থেকে কাউন্টার টেররিরজম ইউনিটের টিম ঘটনা তদন্তে এখন চট্টগ্রাম অবস্থান করছেন বলে জানান তিনি৷

ঘটনার পর শুক্রবার রাতেই চট্টগ্রাম কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার পলাশ নাথ জানান, ‘‘চট্টগ্রামের হামলার সাথে গত বছর ঢাকায় পুলিশের ওপর হামলার মিল আছে৷”

একই কথা রোববার বলেন চট্টগ্রাম কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ও ডেপুটি পুলিশ কমিশনার হাসান মোহাম্মদ শওকত আলি৷ তিনি বলেন, ‘‘ঢাকার হামলার সঙ্গে চট্টগ্রামের হামলার মিলের মূল জায়গা হলো পুলিশের ওপর আক্রমণ৷ এখানেও যে পুলিশই টার্গেট সে বিষয়টি আমাদের কাছে নিশ্চিত৷”

তিনি আরো বলেন, ‘‘বোমাটি ছুঁড়ে মারা হয়নি৷ বোমাটি পাতা ছিলো৷ তবে দূর নিয়ন্ত্রিত কিনা তা আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি৷ আমরা তদন্ত করে দেখছি৷ বোমা তৈরিতে স্থানীয় প্রযুক্তি ও বিষ্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে৷”

বিস্ফোরকের সাথে জিআই পাইপ, মার্বেল এবং শক্ত কোনো ধাতব পদার্থের টুকরা ব্যবহার করে বোমাটি তৈরি করা হয়েছে বলে আলামত দেখে ধারণা করছেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের বিস্ফোরক দল৷ এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হননি৷

গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঢাকার পাঁচটি স্থানে পুলিশ বক্স ও পুলিশের ওপর বোমা হামলা চালানো হয়৷ বোমাগুলো ছিলো দূর নিয়ন্ত্রিত৷

পুলিশ পরে ঢাকার হামলার সাথে জড়িত নব্য জেএমবি’র একটি গ্রুপের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে৷ তখন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘হামলার সাথে নব্য জেএমবি’র উলফ প্যাকের সদস্যরা জড়িত৷” ওই সময় যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয় তারা নর্থসাউথ ইউনিভাার্সিটিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিলেন৷ তারা আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করতেন নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য৷”

পুলিশ জানায়, জঙ্গিরা তাদের অস্তিত্বের জানান দেয়া এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ভয় দেখাতে এই ধরনের হামলা চালায়৷
মনিরুল ইসলাম রোববার জানান, ‘‘ঢাকায় যে পাঁচ জনকে তখন আটক করা হয়েছিল তাদের একজন ছিলো বোমা বানানোর এক্সপার্ট৷ সে বোমা তৈরির একটি ইংরেজি ম্যানুয়াল বাংলা করেছিল৷ আমরা ধারণা করছি জঙ্গিরা সেই ম্যানুয়াল এখনো ব্যবাহার করছে৷”

‘তারা ছিলো পাঁচ জনের একটি সেল৷ নব্য জেএমবি’র সাথে তাদের যোগাযোগ ছিলো৷ তাই তারা লোন উলফ ঠিক নয়, তারা ছিলো উলফ প্যাক৷ লোন উলফের সদস্যরা সাধারণত অনলাইনের মাধ্যমে বা অন্যকোনো উপায়ে ‘সেলফ র‌্যাডিকালাইজড’ হয়৷ নিজেরাই হামলার পরিকল্পনা ও হামলা করে৷ কারুর সাথে যোগাযোগ থাকেনা৷

আর উলফ প্যাক পরস্পরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকেনা৷ তারা একটি ছোট গ্রুপ বা প্যাকে কাজ করে,” বলেন মনিরুল ইসলাম৷

তিনি চট্টগ্রামের পুলিশের ওপর হামলাকে একই ধারার হামলা বলে মনে করছেন৷ তবে তদন্ত শেষ হলেই এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তিনি৷

এসএইচ-০৫/০২/২০ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)