ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা ঠেকাতে সরকার কঠোর

বাংলাদেশে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা ঠেকাতে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

সোমবার রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর যোগাযোগের প্রধান দু’টি ফেরিঘাট পাটুরিয়া এবং শিমুলিয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

মহাসড়কগুলোতে ব্যক্তিগত যানবাহন নিয়েও মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে এবার ঈদে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় না যাওয়ার আহবান জানানো হয়েছিল।

কিন্তু গত কয়েকদিনে ফেরি ঘাটগুলোতে এবং সড়কে ঘরমুখো মানুষের ভিড়ের দৃশ্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়।

সরকার বলছে এখন থেকে এ ধরনের যাতায়াত কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

ঢাকা থেকে দক্ষিণের ২১টি জেলায় যাওয়ার অন্যতম ফেরিঘাট শিমুলিয়ায় মাইক্রোবাস এবং প্রাইভেট কার সহ ছোট ছোট যানবাহন নিয়ে শত শত মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল সোমবার সকালে।

এই ঘাটে সীমিত পর্যায়ে এতদিন দু’টি ফেরি চলছিল। কিন্তু সোমবার সকালে ঘরমুখো মানুষের চাপ সামলাতে আরও ১২টি ফেরি চালানো হয়।

উপচেপড়া মানুষ নিয়ে ফেরি চলাচলের দৃশ্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। এরপর দুপুরের পরে এই ঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।

বেশ কয়েকজন গার্মেন্টস কর্মী মাইক্রোবাস ভাড়া করে শিমুলিয়া ফেরি ঘাট দিয়ে গ্রামের বাড়িতে যেতে চেয়েছিলেন। তাদের একজন মোছা: শিল্পী বলেছেন, “আমি গাবতলী থেকে আসছি। মাওয়ার ওপারে শিবচরে যাবো। আমি অসুস্থ। আমি গার্মেন্টসে চাকরি করি। এখন ছুটি পাইছি, তাই আমরা দশ পনেরো জন মাইক্রোবাস নিয়ে যাচ্ছি। ঈদের পর ফিরবো।কিন্তু ফেরি বন্ধ করে দিছে। আমরা এখানে আটকা পড়ছি।”

শিমুলিয়া ঘাট থেকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফেরি বন্ধ করে সেখানে আটকে পড়া মানুষকে আবার ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।

পাটুরিয়া ঘাট থেকে বিআইডব্লিউটিসির উপ মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেছেন, এখন শুধু পণ্যবাহী যানবাহনের জন্য গভীর রাতে ফেরি চালানো হবে।

“আজ সকালে ঢাকা থেকে কিছু ছোট গাড়ি এসেছিল। সেগুলো ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। পণ্যবাহী যানবাহন আটকে রাখা হয়েছে। ফেরি চলাচল একেবারে বন্ধ। মানুষ যেন বুঝতে পারে যে ফেরি বন্ধ, যাওয়া যাবে না। সেজন্য এটা করা হয়েছে।”

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, কয়েকদিন ধরে ফেরি ঘাটগুলোতে মানুষের ভিড়ে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সব ফেরি ঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। আর লঞ্চসহ সব ধরণের নৌ চলাচল বন্ধ থাকবে।

ঢাকার সাথে উত্তরাঞ্চলসহ অন্যান্য জেলার যোগাযোগের সড়কপথেও ছোট ছোট যানবাহন নিয়ে অনেক মানুষ গ্রামে যাচ্ছেন। এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে।

পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও বৈঠক করেছে। এই কমিটির একজন সদস্য এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শাহ মুনির হোসেন বলেছেন, “দুর্ভাগ্যজনক যে, যখন আমাদের সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে, তখন লকডাউন শিথিল হয়েছে। আপনারা যদি দেখেন গত তিনদিনে সংক্রমণ যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, সেখানে এটাই একটি বড় কারণ যে, স্বাস্থ্যবিধিগুলো মানা হচ্ছে না।”

তিনি আরও বলেছেন, “ঈদ উপলক্ষে আমাদের মুভমেন্টাটাকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমরা সরকারকে এই সুপারিশ করেছি।”

কর্মকর্তারা বলেছেন, সড়কপথেও মানুষ ঢাকা থেকে অন্য কোথাও যেন যেতে না পারে, সেজন্য রাস্তায় রাস্তায় পুলিশের ক্যাম্প এবং তৎপড়তা বাড়ানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, “আমরা এত বলছি, আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী বলছে এবং মিডিয়া থেকে বলা হচ্ছে, তারপরও জনগণ যদি এটা উপলব্ধি না করে, তাহলে আসলেই এটা মুশকিল হয়ে যায়। যে কোন উপায়ে এটা বন্ধ করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিচ্ছি। প্রয়োজনীয় যা করার সেটাই আমরা করবো।”

“তবে এখনও আমরা সান্ধ্য আইন দেয়ার কথা চিন্তা করিনি। এবং ঈদের সময় যেহেতু আমরা বলেছি, যে যেখানে অবস্থান করছেন, সেখানে থেকেই ঈদ করুন। সেটাই মেনে চললেই আমাদের মঙ্গল হবে। এটাই হলো আমাদের কথা।”

যদিও সরকার কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরছে, কিন্তু শেষপর্যন্ত ঘরমুখো মানুষের যাত্রা ঠেকানো কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অনেকে সন্দেহ রয়েছে।

এসএইচ-১১/১৯/২০ (কাদির কল্লোল, বিবিসি)