বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার তদন্ত দাবি

মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ মনে করেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং যোগাযোগ নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার৷ তার মতে, হত্যাকাণ্ডে তাদের কী সংযোগ ছিল তা বাংলাদেশ ও মার্কিন জনগণের সামনে স্পষ্ট করা দরকার৷

বৃহস্পতিবার রাতে সেন্টার ফর রিচার্স অ্যান্ড ইনফর্মেশন (সিআরআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ১৯৭৫: সেটিং দ্য ক্লক ব্যাক’ শীর্ষক ওয়েবিনার-এ অংশ নিয়ে লিফশুলজ এই কথা বলেন৷

তিনি ১৯৭৫ সালে ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউয়ের দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিনিধি ছিলেন৷ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনুসন্ধান করেছিলেন তিনি৷ জিয়ার শাসনামলে সামরিক আদালতে কর্নেল তাহেরের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে অনুসন্ধান করার সময় তাকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়৷

ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহানের সঞ্চালনায় ওয়েবিনার-এ লিফশুলজ ছাড়াও অংশ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ ও নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার সলিল ত্রিপাঠি৷

লিফশুলজ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এটা শুধু বাংলাদেশের বিষয় নয়, এটা ন্যায় বিচারের প্রশ্ন৷ বঙ্গবন্ধু হত্যার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র উদসীনতা দেখায়৷ যেটা সন্দেহের সৃষ্টি করে৷ পরে অনেক ডকুমেন্ট পাওয়া যায়৷ যারা সামনে থেকে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের আমরা দেখেছি৷ কিন্তু যারা পিছনে ছিলেন তারা কারা৷ জিয়াউর রহমানের সমর্থন ছাড়া তারা মুভ করেননি৷ আর জিয়া মার্কিন সমর্থন ছাড়া কিছু করেননি৷ তাই আমার মত হলো, বঙ্গবন্ধু হত্যার ব্যাপারে আরো তদন্ত দরকার৷ এই সংযোগগুলোর তদন্ত দরকার৷ বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের মানুষের এটা নিয়ে কাজ করা উচিত, তাদের এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে৷’’

আলোচনায় লিফশুলজ বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিকল্পনার বিভিন্ন দিকও তুলে ধরেন৷ সেখানে মেজর জিয়াউর রহমান ও তখনকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের যোগাযোগের বিষয়ে তিনি কথা বলেন৷

বঙ্গবন্ধু হত্যার এক সপ্তাহ আগে মার্কিন দূতাবাসের এক সিনিয়র অফিসারের সাথে দেখা করেছিলেন জিয়াউর রহমান৷ ঢাকায় সিআইএর স্টেশন প্রধান ফিলিপ চেরির সঙ্গেও জিয়া একান্ত বৈঠক করেন৷

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনা ছয়মাস আগে হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয় এক সপ্তাহ আগে৷ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় জিয়া অন্য সৈন্যদের ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে যেতে দেননি৷ সেনবাহিনীর উপ-প্রধান হিসেবে তিনি হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা নেননি ৷ বরং এই ক্যু-র বিরুদ্ধে যাতে কেউ অবস্থান না নেয় তা তিনি নিশ্চিত করেন৷” লিফশুলজ আরো বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হওয়ার এক সপ্তাহ আগে জিয়া ঢাকায় এক ব্যবসায়ীর বাসায় চেরির সঙ্গে বৈঠক করেন৷ জিয়া ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিকল্পনার কেন্দ্রে৷’’

নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার ভারতীয় নাগরিক সলিল ত্রিপাঠি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী ফারুক রহমানের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন৷ তিনি ১৯৮৬ সালের পর বাংলাদেশেও এসেছিলেন৷ তখন তিনি সাংবাদিকতা করতেন৷ সলিল ত্রিপাঠি বলেন, ‘‘ফারুক বঙ্গবন্ধু হত্যার কথা অবলীলায় স্বীকার করেন৷ তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা আমি দেখিনি৷ ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল হত্যারও যুক্তি দেখায় সে৷’’

তখন ফারুক তার বাসায় গার্ড পরিবেষ্টিত থাকতেন, তার কোনো চিন্তা ছিলনা জানিয়ে ত্রিপাঠি বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে নিশ্চয়ই আরো উপরের সংযোগ ছিল৷ নয়তো ইনডেমনিটি করে তাদের বিচার বন্ধ করা হলো কেন? তাদের (হত্যাকারীদের) নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলো কেন?’’ ‘‘ফারুক আমাকে বেশ উৎসাহের সাথে সাক্ষাৎকার দেন,’’ বলেন তিনি৷

ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু মানুষের হৃদয়ের মুকুটহীন সম্রাট৷ ১৫ আগস্ট ভোরে আমি আব্দুল মালেক ভূঁইয়ার ( সেকশন অফিসার, কনফিডেনশিয়াল) একটি টেলিফোন কল পাই৷ সে জানালো, স্যার, ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে৷ বঙ্গবন্ধু আর নেই৷ এরপর রেডিও অন করে শরিফুল হক ডালিমের জঘন্য ঘোষণা শুনলাম৷ সেনাবাহিনী খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করেছে৷ মোশতাককে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছে৷’’

এসএইচ-০৭/২২/২০ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)